উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

মেহেদী


মেহেদী পরিচিতি
বাংলা নামঃ মেহেদী
ইউনানী নামঃ হেনা
ইংরেজি নামঃ Henna Samphire.
বৈজ্ঞানিক নামঃ Lawsonia inermis Linn.
পরিবারঃ Lauraceae.
অন্যান্য নামঃ Mehndi, Mendee, Al-henna, Jamaica, Mignonette, Egyptian Privet, Smooth
Lawsonia.
খ্রীষ্টপূর্ব ২১০০ ব্যাবিলীয়ান সুমেরীয় সভ্যতার পারম্ভিকভাগেই মেহদীর ব্যবহারের কিংবদন্তী রয়েছে। মোঘলামলে ভারতবর্ষে রাজা-রাণীগণ উন্নতির নিদর্শণ হিসাবে দেহসজ্জায় মেহদীর ব্যবহার করতেন। ক্লিওপেট্রার সময়ে মিসরিয় মহিলাগণ মেহদীতে হাত-পা রাঙাতেন। এমনকি পুরুষেরাও দাড়ি ঘোড়ার লেজ রাঙাতে ব্যবহার করতেন। সেই প্রাচীনকাল হতেই এটা বিয়ে মেয়েদের ফার্টিলিটি উদযাপনের একটি অনুসঙ্গ। বাংলাদেশসহ গোটা ভারতবর্ষে মেহেদী ব্যতীত কোন বিবাহ উৎসব সম্পন্ন হওয়ার কথা চিন্তা করা যায় না।
মেহেদি একটি মধ্যম আকৃতির গুল্ম জাতীয় গাছ যা উচ্চতায় মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বাকল নীলচে বাদামি। লম্বা পুষ্পদন্ডে গুচ্ছাকারে সুগন্ধময় সাদা বা হালকা গোলাপি ফুল হয়। মরু অঞ্চল সেমি-ড্রাই জলবায়ু মেহদি জন্মানোর জন্য অনুকুল
বিস্তৃতি
মহেদীর আদিবাস উত্তর আফ্রিকা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। রঙের জন্য ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশে মহেদীর চাষ হয়। বেড় (hedge) হিসেবে এটি রোপন করা হয়। বংলাদেশে এটি প্রায় সব এলাকাতেই দেখা যায়।
বীজ সংগ্রহ বংশবিস্তার
বীজ আহরণ বংশবিস্তার
বর্ষাকালে প্রাপ্তবয়ষ্ক গাছে সাদা বা গোলাপি রঙের ছোট ছোট অসংখ্যা ফুল দেখা যায়। লম্বা পুষ্পদন্ডের চারদিকে ছোট বোঁটাবিশিষ্ট ফুল হয়। আকন্দ, সর্পগন্ধা ধুতরার মতো একই সময় ফুল ফল দেখা যায়। প্রায় মটরদানার আকারের ধূসর বর্ণের ফলের ভিতর ছোট ছোট ৫৮-৯৫টি বীজ থাকে। বীজ অথবা অঙ্গজভাবে (শাখা কাটিং) মহেদীর বংশবিস্তার সম্ভব। তবে কাটিংয়ের সাহায্যে নতুন চারা উৎপাদন সহজ বলে আমাদের দেশে পদ্ধতিই অবলম্বন করাহয় এবং ক্ষেত্রে শতকরা ৭০-৮০টি চারা সহজেই পাওয়া যায়। সাধারণত মাসের কাটিং রোপণের জন্য উপযুক্ত এবং / বছরের গাছ থেকে পাতা আহরণ শুরু করা যায়
বীজ সংগ্রহের সময়
আগষ্ট-সেপ্টম্বর। বীজের ওজন প্রতি কেজিতে প্রায় মিলিয়ন।
রাসায়নিক উপাদান
পাতা ছালে অনুজীব ধ্বংসী রঙ্গিন ন্যাথোকইনোন দ্রব্য, প্রচুর পরিমাণ ট্যানিন, কিছু গ্লাইকোসাইড, স্টেরল টার্পিন বিদ্যমান।
বিভিন্ন অংশের ব্যবহার
ব্যবহার্য অংশ
মেহেদী গাছের ছাল, পাতা, বীজ ফুল ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়
সাধারণ ব্যবহার
হেনার সবচে সাধারন ব্যবহার হল রঞ্জক পদার্থ হিসাবে চুলে এবং হাত পায়ের ডিজাইনে, উলকি (টাট্টু আর্ট) অংকণে। কন্ডিশনার হিসাবেও এটার সাধারণ ব্যবহার রয়েছে। হেয়ার টনিক, হেয়ার কন্ডিশনার বা নারিসার হেয়ার ক্লিণজার বা সেম্পু হিসাবে ব্যবহার হয়। ফুলের তেল পারফিউম হিসাবে ব্যবহার হয়। সতেজ পাতার পেস্ট বা পাতার পাউডার উভয় আকারেই ব্যবহার করা যায়। পাওডারের সাথে লেবুর রস, চা বা ইউক্যালিপটাস পাতা মিশিয়ে ব্যবহারে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
বিদ্যমান ফাইটোকেমিক্যাল
হেনার পাতায় রয়েছে এক প্রকার লালচে-বাদামি গ্লাইকোসাইড রঞ্জক লসোন টেনিন উদ্ভুত হেনোটনিক এসিড। পেট্রোলিয়াম ইথার শোষনের মাধ্যমে বীজ হতে উচ্চ-সান্দ্রতার তৈল পাওয়া যায় যাতে রয়েছে বিহেনিক, অ্যারাসিডিক, স্টিয়ারিক, পালমেটিক, ওলিক লিনোলিক এসিড।
ঔষধি গুণ
হেনা মানব সমাজের জন্য এক প্রকৃতির অনবদ্য দান। হেনার ভেষজ গুনাগুন সহস্র বর্ষের প্রাচীন। এর রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল, এন্টি-ইনফ্লেমেটরী, কুলিং হিলিং, এন্টিইরিটেন্ট সিডেটিভ গুণাগুণ। অত্যান্ত উপকারি ভেষজ হেনার পাতা ফুল হতে আহরিত তেল অনেক চর্ম -মলম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চামড়ায় ক্ষত, পোড়া চামড়ার ফ্যাকাসে হলুদ দাগ চিকিৎসায় অত্যান্ত কার্যকরী ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়। স্কেবিস, চর্মের চুলকানি জাতীয় নখের ফাটার চিকিৎসায় হেনা পেস্ট ব্যবহার হয়। দেহ হতে পানি হ্রাস প্রতিরোধ করে; আবার ময়েশ্চার ধারণের ফলে কোন অঙ্গ স্ফিতীর রোধে এক প্রকার ডিসল্ভিং ফ্যাক্টর গঠনে কাজে লাগে। মাথাব্যাথা, জ্বর ভিটামিন-বি এর ঘাটতি জনিত পায়ের পাতার জ্বালা-পোড়ার ক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে স্বস্তি প্রদান করতে পারে। মাথার টাকের চিকিৎসার সহায়ক। হেনার পাতা দিয়ে গরম করা সরিষার তেল চুলের স্বাস্থ্যবান বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এক্ষেত্রে ২৫০ গ্রাম সরিষার তেল একটি পাত্রে সিদ্ধ করার সময় ৬০ গ্রাম হেনা পাতা ক্রমান্বয়ে যোগ করা হয়; তারপর একটি কাপড় দিয়ে ছেঁকে বোতলে সংরক্ষণ করা হয়। আমাশয়ের চিকিৎসায় এর বীজের পাওডারের সাথে ঘি মিশিয়ে সেবন করা যায়। লিভারের বিভিন্ন জটিলতা যেমন- লিভারের বৃদ্ধি জন্ডিসের চিকিৎসায় এর বাকল ব্যবহার করা যায়। এর ফুলের পেস্টের সাথে ভিনেগার মিশিয়ে কপালে প্রয়োগ করলে রৌদ্রজনিত কারণে মাথা ব্যাথার উপশম হয়। গলা ব্যাথা উপশমে হেনা পাতা দিয়ে গরম করা পানি দিয়ে কুলকুচা করা যায় বা আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা যায়। অস্থির জোড়ায় প্রদাহ, ফোলা থেতলে যাওয়া অঙ্গে পাতার পেস্ট স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা যায়।
প্রাপ্তিস্থান
বাংলাদেশের সর্বত্র বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হয়। অন্যান্য দেশের মধ্যে মিশর, ভারত, কুর্দিস্থান, লেভেন্ডা, পারসিয়া, সিরিয়া, আফ্রিকার উঞ্চমন্ডলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়

শিমুল



@@পরিচিতি@@
বাংলা নামঃ শিমুল
ইংরেজি নামঃ Red Silk Cotton Tree.
বৈজ্ঞানিক নামঃ Salmalia malabarica Schott.
syn. Bombax ceiba
পরিবারঃ Bombacaceae.
শিমুল একটি পাতাঝরা বড় বৃক্ষ, ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। শাখা-প্রশাখা কম, সরল এবং বৃত্তাকারে চারিদিকে বিস্তৃত। বড় গাছের অধিমূল (Buttress) হয়। গাছের গায়ে বহু কাঁটা হয়। এগুলোর অগ্রভাগ সরু তীক্ষ্ণ এবং গোড়াটা বেশ মোটা। শিমুলের পাতার গঠন এমন যেন একটি লম্বা বোঁটায় ছড়ানো হাতের পাঞ্জা। পলাশের মতো শিমুলেরও শীতের শেষে পাতা ঝরে যায়। ফাল্গুন মাসে ফুলের কুঁড়ি আসে এবং চৈত্র মাসে বড় উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল ফোটে। তখন মনে হয় যেন গাছে আগুন লেগেছে। ফুলের বৃতি মোটা মখমলের ন্যায় নরম। ফুল এক ধরণের স্বাদু তরল পদার্থ সঞ্চিত থাকে, তাই পাখির পিপাসা মেটাবার জন্য শিমুল গাছে ভিড় করে। তারপর মোচোকৃতি ফল হয় যা পাকে এপ্রিল মাসে। ফলগুলি গাছ থেকে ভেঙে না নিলে আপনাআপনি ফেটে গিয়ে তুলা বীজ বেরিয়ে যায়
বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্র শিমুল গাছ দেখা যায়। বেলে দো-আঁশ বা নতুন মাটিতে গাছ ভালো জন্মে।
@@বীজ সংগ্রহ চারা উত্তোলন@@
@বীজ সংগ্রহ চার উত্তোলন@
পাকা ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে তুলা থেকে বীজ আলাদা করে নার্সারী বেডে বীজ বপন করতে হয়। বীজ ফিকে কৃষ্ণবর্ণ, একটি ফলে অনেক বীজ থাকে। বীজের অঙ্কুরোদগম হার শতকরা ৭৫ ভাগ এবং তা ১৫-২০ দিনে গজায়। তবে বীজ শুকানো পাত্রে থেকে ১২ মাস সংরক্ষণ করা যায়
@বীজ সংগ্রহের সময়@
এপ্রিল (বৈশাখ) মাস বীজ সংগ্রহের জন্য ভাল সময়
@বীজের ওজন@
প্রতি কেজিতে ২১৫০০-৩৮৫০০টি বীজ হয়ে থাকে।
@ঔষধি গুণ@
শিমুল সাধারণত কাজ করে রক্তনালীতে মুত্রনালীতে কাজ করে।
১। যৌবনে শুক্রাল্পতায় /১০ গ্রাম কচি শিমুল মূল একটু চিনি দিয়ে দুই বেলা খেলে অসুবিধা সেরে যাবে।
২। প্রৌঢ়ে যৌন সংসর্গে অপ্রতিভ হলে কচি শিমুল মূল চাকা করে কেটে শুকিয়ে গুঁড়া করে দুই গ্রাম আন্দাজ গুঁড়া এক কাপ গরম দুধে মিশিয়ে খেতে হবে। তা হলে অসুবিধা দূর হবে। ( Ghani, 2003)
৩। হঠাৎ শ্লেষ্মা রক্তযুক্ত আমাশয় দেখা দিলে এক থেকে দেড় গ্রাম শিমুল মোচরসের (শিমুল গাছের গুঁড়ি থেকে এক রকম নির্যাস (আঠা) বের হয়, সেটিই মোচরস। এটি শুকিয়ে বাজারে বিক্রি হয়।) গুঁড়া ছাগলের দুধ বা পানিসহ দুবেলা খেলে / দিনের মধ্যেই রক্ত পড়া তো বন্ধ হবেই, আমাশয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
৪। পানি খেলেও পিপাসা যাচ্ছে না, এমন হলে / গ্রাম পাতার ডাঁটা একটু থোঁতো করে এক গ্রাম পানিতে একটু ভিজিয়ে রেখে চটকে সেটাকে ছেঁকে / বার খেলে পিপাসার টান কমে যাবে।
৫।লোম ফোড়ায় শিমুল ছাল বেটে জায়গায় প্রলেপ দিলে / দিনের মধ্যে জ্বালাও যাবে আর ফোড়াও সেরে যাবে।
এছাড়াও ক্রনিক কাশি, মহিলাদের প্রদর রোগে, অর্শ, গনোরিয়া, শিশুদের দাস্ত পরিষ্কার না হলে ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে আধুনিক আয়ুর্বেদ স্বাস্ত্রে শিমুল ব্যবহৃত হয়