@ পরিচিতি @
বাংলা নামঃ কালোজিরে
ইংরেজী নামঃ Cuminblack
বৈজ্ঞানিক নামঃ Nigella sativa
পরিবারঃ Umbelliferae
কালোজিরে মসলা হিসাবে ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুতিতে এবং মিঠাই শিল্পে ও নোনতা খাবার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বাংলাদেশে এটি বানিজ্যিকভাবে চাষ হয় না।
@ জাত @
এন.এস-৪৪
১৪০-১৫০ দিনের জাতটি চাষ করে প্রতি হেক্টরে ৪.৫-৬.৫ কুইন্টাল ফলন পাওয়া যায়।
এন.এস-৩২
১৪৫-১৫০ দিনের জাতটি চাষ করে হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যেতে পারে ৪.৫-৬.৫ কুইন্টাল।
কালাজিরা
এই জাতটি ১৩৫-১৪৫ দিন সময় নেয় এবং প্রতি হেক্টরে ৪-৫ কুইন্টাল ফলন দেয়।
@ আবহাওয়া ও মাটি @
কালোজিরে শীতকালীন ফসল। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং সুনিস্কাশিত দোআঁশ মাটি কালোজিরে চাষের জন্য উপযোগী।
@ বীজের হার ও বীজ বপন @
সারিতে বুনলে প্রতি হেক্টরে ৫-৬ কেজি এবং ছিটিয়ে বুনলে ৮-১০ কেজি বীজ লাগবে। সারিতে বুনলে ২০-২৫ সেমি. x ৫-৬ সেমি. দূরত্বে বীজ বোনা উচিত। সমতলে অক্টোরব-নভেম্বর মাসেই বীজ বোনা উচিত। বোনার আগে বীজ অবশ্যই থাইরাম জাতীয় ছত্রাক নাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম ওষুধ লাগবে। বীজ বোনার সময় ঝুরো মাটি মিশিয়ে নিলে সারা মাঠে সমানভাবে বীজ ছড়ানো যাবে।
@ জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ @
৩-৪ বার লাঙ্গল দিয়ে, আগাছামুক্ত করে, জমির মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে এবং প্রথম চাষের আগে প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ টন জৈব বা খামারের সার ও শেষ চাষের আগে ৩০-৩০-৩০ কেজি নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বোনার আগে যেন জমিতে ভালোমত ‘জো’ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অথবা বীজ বোনার ৩-৪ দিনের মধ্যে হালকা করে ছিটিয়ে সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১ মাস হলে প্রতি হেক্টরে ৩০ কেজি করে নাইট্রোজেন চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে। সেচ বিহীন এলাকায় মূল সার হিসাবে ৫০-৪০-২০ কেজি নাইট্রোজেন-ফসফরাস ও পটাশিয়াম প্রতি হেক্টরে শেষ চাষের আগে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
@ পানিসেচ ও পরিচর্যা @
আবহাওয়া ও মাটির উপর নির্ভর করে ৩-৪ বার হালকা সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় এবং ফল পুষ্ট হবার সময় মাটি যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
চারা ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা হলে আগাছাসহ অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলার জন্য নিড়ানি দিতে হবে। পরে প্রয়োজন হলে আরও ১-২ বার নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে ও চারার গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
@ পোকা ও রোগ দমণ @
কালোজিরে প্রধানত শুঁটি ছিদ্রকারী পোকা এবং ধ্বসা, মরচে, সাদা-গুঁড়ো ইত্যাদি রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
১) শুঁটি ছিদ্রকারী পোকাঃ
Helicoverpa armigera নামক পোকা ডিম ফুটে বের হবার সাথে সাথেই ল্যাদাপোকা গাছের কচি অংশ খেতে থাকে। এরপর কুঁড়ি, পুষ্পমঞ্জরী ও ফুল খেয়ে নেয়। ২১-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় এই ল্যাদার আক্রমন বেশী হতে দেখা যায়।
প্রতিকারঃ
ল্যাদা পোকা ধরে কেরোসিন তেলে ডুবিয়ে মারার পাশাপাশি ৪% এন্ডোসালফান ও ম্যালাথিয়ন গুঁড়ো প্রতি হেক্টরে ২৫ কেজি হারে ছড়িয়ে বা ০.০৫% ইমিডাক্লোপ্রিড স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রন করা যায়।
২) ধ্বসা রোগঃ
Alternaria sp. জাতীয় ছত্রাক দ্বারা আক্রমনে এ রোগ হয়। আক্রান্ত গাছের ডালপালা ঘন বাদামী থেকে কালচে রঙের হয়। পাতা ঝরে পড়ে এবং গাছ শুকিয়ে যায়।
প্রতিকারঃ
আক্রান্ত গাছে ১০-১৫ দিন অন্তর ০.২৫% জিনেব বা ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
৩) মরচেঃ
Puccinia bulcocastani নামক ছত্রাকের আক্রমনে পাতা ও পত্রবৃন্তে ছোট ছোট, হলুদাভ, মরচে ধরা দাগ দেখা যায়। রোগের চুড়ান্ত পর্যায়ে পাতা ও বৃন্ত কুঁকড়ে যায় ও ঝুলে পড়ে।
প্রতিকারঃ
রোগটি নিয়ন্ত্রনের জন্য ০.২৫% ম্যানকোজেব বা ০.১% কার্বেন্ডাজিম ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে।
৪) সাদাগুঁড়ো রোগঃ
Erysiphe Polygoni নামক ছত্রাকের সংক্রামনে এই রোগ হয়। প্রথমে পাতা ও কান্ডে সাদা গুঁড়ো দাগ দেখা যায়, ক্রমে রোগ লক্ষন ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছ সাদা হয়ে যায়। আক্রান্ত ক্ষেতে ফলনের পরিমাণ ও গুনমান কম হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ
আক্রমন নিয়ন্ত্রনের জন্য ক্যারাথেন জাতীয় ওষুধ ০.২% হারে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্প্রে করতে হবে এবং ঐ স্প্রে পুনরায় ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার করতে হবে
@ ফসল তোলা ও ফলন @
ফসল তোলাঃ
ফল পেকে গেলে গাছ কেটে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে খামারে গাদা করে কয়েকদিন রোদ খাওয়ানো হয় এবং ভাল করে শুকিয়ে গেলে শুঁটি হাতের মধ্যে বা চটের মধ্যে রেখে দলাই মলাই করে অথবা লাঠি দিয়ে গাছ পিটিয়ে শুঁটি থেকে বীজ পৃথক করা হয়। ঝাড়াই মাড়াই করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা বীজ ভালো করে রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করা হয়।
No comments:
Post a Comment