@ পরিচিতি @
ইংরেজী নাম Wheat
বৈজ্ঞানিক নাম Triticum aestivum
পরিবার Gramineae
বাংলাদেশে খাদ্য ফসল হিসেবে গম দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে রয়েছে। ১৯৮৫ সালে প্রায় ৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১২ লক্ষ টন গম উৎপাদিত হয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে ৮.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৯ লক্ষ টন গম উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে গম চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, গমের চাষ সহজ, পানি সেচ চাহিদা কম এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের তেমন সমস্যা নেই।
@ জাতসমূহ @
কাঞ্চন, আকবর, অগ্রানী, সৌরভ, গৌরব, বারি গম ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭।
@ মাটি @
উঁচু ও মাঝারি দোআশ মাটি গম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।
@ বপনের সময় @
উপযুক্ত সময় কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহ (নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত)| যে সব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরি করতে বিলম্ব হয় সেখানে কাঞ্ছন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা ও গৌরব বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
@ বীজের হার ও শোধন @
বীজের হার
হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮৫% এর বেশী হলে ভাল হয়।
বীজ শোধন
ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
@ বপন পদ্ধতি @
ছিটিয়ে বা সারিতে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরির পর লাংগল দিয়ে সরু নালা তৈরি করে ২০ সেমি দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি গভীরে বীজ বুনতে হয়।
@ সার প্রয়োগ পদ্ধতি @
সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সারের পরিমাণ
সারের নাম সারের পরিমাণ /হেক্টর
সেচ সহ সেচ ছাড়া
ইউরিয়া ১৮০-২২০ কেজি ১৪০-১৮০ কেজি
টিএসপি ১৪০-১৮০ কেজি ১৪০-১৮০ কেজি
এমপি ৪০-৫০ কেজি ৩০-৪০ কেজি
জিপসাম ১১০-১২০ কেজি ৭০-৯০ কেজি
গোবর/কম্পোষ্ট ৭-১০ টন ৭-১০ টন
@ পানি সেচ @
মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩ টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় ( বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময় (বপনের ৫৫-৬০ দিন পরে) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় ( বপনের ৭৫-৮০ দিন পরে) দিতে হবে।
@ রোগ ব্যবস্থাপনা @
পাতার মরিচা রোগ
পাকসিনিয়া রিকন্ডিটা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামি বা কালচে রংয়ে পরিণত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এরোগ বেশী হয়ে থাকে।
প্রতিকার
১) রোগ প্রতিরোধী জাত কাঞ্ছন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।
২) সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
৩) টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে।
পাতার দাগ রোগ
বাইপোলারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নিচের পাত তে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগসমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলসে দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার
১) রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২) গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩) প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
৪) টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে।
গোড়া পচা রোগ
স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্ত স্থানের চারদিক ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত বৃষ্টির পানি কিংবা সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
১) রোগ প্রতিরোধী জাত কাঞ্ছন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।
২) মাটিতে সবসময় পরিমিত আদ্রতা থাকা প্রয়োজন।
৩) প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
গমের আলগা ঝুল রোগ
আসটিলেগো ট্রিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। গমের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আত্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মত দেখায়। ছত্রাকের বীজকণা সহজেই বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রূণে জীবিত থাকে। পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অংকুরোদগমের সময় জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠে।
প্রতিকার
১) রোগ প্রতিরোধী জাত কাঞ্ছন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।
২) রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
৩) প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
গম বীজের কালো দাগ রোগ
ডেক্সলেরা প্রজাতি ও অলটারনারিয়া প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রূণে দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে দাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়ে থাকে।
প্রতিকার
১) রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২) প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
@ ফসল সংগ্রহ @
চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত গম ফসল কর্তন করা হয়।
@ তথ্যসূত্র @
১। লীফলেট, গম গবেষণা কেন্দ্র, নশিপুর দিনাজপুর।
২। বারি প্রযুক্তি হাতবই, বি এ আর আই, জয়দেবপুর, গাজীপুর।
৩। সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ম্যানুয়াল, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।
৪। গম উৎপাদন ও বীজ সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা, গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
No comments:
Post a Comment