উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

মরিচ



@ পরিচিতি @
পরিচিতি
বাংলা নামঃ মরিচ
ইংরেজী নামঃ Chilli or Red pepper
বৈজ্ঞানিক নামঃ Capsicum annum / C. frutescesns
পরিবারঃ Solanaceae
মসলা হিসাবে মরিচ খুবই গুরুত্বপূর্ন শস্য। ব্রাজিল দক্ষিন আমেরিকার রাজ্যগুলির মরিচের আদিনিবাস বলে মনে করা হয়। পর্তুগীজরা ভারতীয় উপমহাদেশে এর চাষ শুরু করে। বাংলাদেশে উৎপাদিত মরিচের বেশির ভাগ মশলা হিসাবে ব্যবহার করা হলেও কিছু মরিচ আচার, চাটনি সবুজ মরিচ সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এর চাষ হয়। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মরিচের চাষ হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এদেশে রবি মৌসুমে ৭৫০০০ হেক্টর জমিতে এবং খরিফ মৌসুমে ৭০০০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয় এবং উৎপাদন যথাক্রমে ৪৫০০০ টন ৪২০০ টন। বাংলাদেশ থেকে কিছু মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ফলে মরিচ কিছু বিদেশী মুদ্রাও আনছে
@ জাত @
জাত
বাংলাদেশে অদ্যবধি কোন অনুমোদিত জাত উদ্ভাবিত হয় নাই। এলাকা ভেদে কোন কোন স্থানে স্থানীয় জাত আছে। এদের মধ্যে বগুড়ার বোনা, বাইন, সাইটা, ইরি, বালিজুরি ইত্যাদি বোনা মরিচের জাত রয়েছে।
রোপা মরিচের মধ্যে সূর্যমুখী, পবা স্পেসাল, সিটিন, হালদা, জারলা, শিকারপুরী, চৌরা, উবধা, বালিজুরি পাটনাই ইত্যাদি মৌসুমী রোপা মরিচের চাষ রয়েছে
সাধারনত দুধরনের মরিচ আছে। যথাঃ
() কম ঝাল বা ঝালবিহীন মরিচ। এটা কেপসিকাম ফ্রুটিসেন্স ( C. Frutes cence ) নামে পরিচিত এবং আচার বীজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
() ঝাল মরিচ। এটি কেপসিকাম এনাম ( C. annum ) নামে পরিচিত এবং প্রধানত মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কেপসাইসিন ( Capsaicin ) নামক রাসায়নিক পদার্থের জন্য মরিচ ঝাল হয় কেপসানথিন ( Capsanthin ) নামক একটি রঞ্জক পদার্থের ( Pigment ) জন্যে মরিচ উজ্জল লাল হয়। মরিচে ভিটামিন- সি থাকে।
@ জলবায়ু (Climate) @
জলবায়ু (Climate)
উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ায় মরিচ ভাল হয়। ফল পাকার সময় শুকনো আবহাওয়া দরকার। মাটির তাপমাত্রা ৬৫-৮৫ ফারেনহাইট (১৮.-২৯. সেলসিয়াস) থাকলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। অধিক সূর্যালোকে ফলন বাড়লেও এর ঝাল রঙ কমে যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি মরিচের পক্ষে ক্ষতিকর। ফুল ফোটা ফসল ধরবার সময় বেশি বৃষ্টি হলে অসময়ে ফুল ফল ঝরে যায়।
@ মাটি (Soil) @
মাটি (Soil)
প্রায় সব রকম মাটিতেই মরিচ জন্মে। তবে দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ মাটিতে এর চাষ ভাল হয়। জলাবদ্ধ অবস্থা মরিচ মোটেই সহ্য করতে পারে না।
@ জমি তৈরি @
জমি তৈরি
- বার আড়া-আড়ি লম্বালম্বি লাঙল মই দিয়ে ভালভাবে মাটি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির সময় হেক্টরে ১৫০০০ কেজি গোবর বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বেগুনের সঙ্গে মিশ্র শস্য হিসাবেও এর চাষ করা যায়।
@ বীজ বপন @
বীজ বপন
() বীজ বোনার সময়
মরিচ প্রায় সারা বছর ধরেই চাষ হয়। মরিচ অল্পদিনের ফসল। বছরের যে কোন সময়ে এর চাষ করা যায়। সাধারনত শীতকালীন মরিচের বীজ ভাদ্র-আশ্বিন মাসে, বর্ষাকালীন মরিচের বীজ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এবং গ্রীষ্মকালীন মরিচের বীজ অগ্রাহায়ন-পৌষ মাসে বীজতলায় বোনা হয়। হেক্টর প্রতি ৭৫০ গ্রাম বীজ লাগে। মোটামুটি ভাবে ৬০ বর্গ মিটার বীজতলায় উৎপাদিত চারা দ্বারা এক হেক্টর জমিতে চারা রোপন করা যায়
() বীজ শোধন
প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে তিন গ্রাম এগ্রোসান-জি-এন বা সেরেসান মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। ডিটাভেক্স-২০০ দ্বারাও একইভাবে বীজ শোধন করা যায়
() বীজ বোনার পদ্ধতি (Method of sowing) :
বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করা হয়। বীজতলার আকার .-১০ বর্গ মিটা
@ চারা রোপন @
চারা রোপন
- সপ্তাহের চারা লাগানোর উপযোগী হয়। বীজতলা থেকে সতেজ পুষ্ট চারা তুলে বিকেলের দিকে চারা লাগাতে হবে। সারি থেকে মাটি ৬০ সেঃ মিঃ এবং এক চারা থেকে অন্য চারা ৪০ সেঃ মিঃ দূরে লাগাতে হবে। লাগানোর পর চারার গোড়ার মাটি অল্প চেপে দিতে হবে। কোন চারা মরে গেলে সেই জায়গায় নতুন চারা লাগিয়ে দিতে হবে
@ সার প্রয়োগ @
সার প্রয়োগ
হেক্টর প্রতি ২০০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টি.এস.পি ২০০ কেজি পটাশ সার দিতে হবে। জমি তৈরির সময় পুরো ফসফরাস পটাশিয়াম এবং অর্ধেক ইউরিয়া বেসাল সার হিসাবে দিতে হবে। চারা লাগানোর ১৫ দিন ৪০ দিন পরে প্রতিবারে ৫০ কেজি করে ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগ সার হিসাবে দেওয়া দরকার। জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করা হলে সারের উপরোক্ত পরিমানের অর্ধেক দিলেই চলে।
@ মাধ্যমিক পরিচর্যা @
মাধ্যমিক পরিচর্যা
আগাছা দমন, মাটি আলগা ঝুরঝুরে করবার জন্যে মাঝে মাঝে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে দিতে হবে। উপরি প্রয়োগ সার দিয়ে, গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভেলি বেধে দিতে হবে। এর ফলে যে নালা তৈরি হবে তাতে পানি সেচ দেওয়া যায়। সম্ভব হলে গাছের গোড়ায় কাঠি পুঁতে গাছ বেঁধে দেওয়া ভাল
পানি সেচ ( Irrigation
) :
চারা লাগানোর পর দু-একদিন সকালে বিকালে গাছের গোড়ায় অল্প পানি দিতে হবে। তারপর গ্রীষ্মকালে - দিন অন- শীতকালে ১০-১৫ দিন অন- পানি সেচ দিলেই চলবে।
@ কীটশত্রু (Insect pest) @
ফল ছিদ্রকারী পোকা
এই পোকা মরিচের চরম শত্রু। এই পোকা কচি বাড়ন্ত ফল ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে ফলের ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে মরিচ বাড়তে পারে না। তার আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। ঝাঁঝ থাকে না, ফলে বাজার দরও কমে যায়।
এছাড়াও গাছে চিরুনি ( Thrips
) পোকার আক্রমন দেখা যায়। গাছের যেকোন অবস্থাতে এই পোকার আক্রমন হয়। তবে ফুল ফোটার সময়ই বেশি ক্ষতি করে থাকে। এই পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। এছাড়া এই পোকা কুটে রোগ ছড়ায়
এদের দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে আধ মিলিলিটার ফসফোমিডন (যেমন ডাইমাক্রন ১০০ -সি ইত্যাদি) বা এক মিলিলিটার মিথাইল ডেমিটন (যেমন মেটাসিটকস-২৫ -সি) গুলে গাছে ছিটাতে হবে
@ রোগ (Disease) @
গোড়া পচা রোগ
- দিনের চারাগাছ এই রোগে আক্রান্ত হয়। রোগাক্রান্ত গাছের মাটি সংলগ্ন অংশ কালো হয়ে পচে যায় এবং গাছ ঢলে পড়ে এবং মরে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা হিসাবে বীজ শোধন করে বুনতে হবে। বাড়ন্ত গাছে এই রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে দুগ্রাম কারবেনডাজিম (যেমন-ব্যাভিস্টিন) বা হেকসাক্যাপ (যেমন-ক্যাপটান) গুলে আক্রান্ত জমির গাছের গোড়ার মাটিতে দিতে হবে।
এনথ্যাকনোজ (anthracnose)
মরিচ গাছের মরিচ একটু বড় হলেই লাল হয়ে ঝরে পড়ে। একে এনথ্যাকনোজ (anthracnose disease) রোগ বলে। আধপাকা মরিচও রোগে আক্রান্ত হয়। রোগাক্রান্ত মরিচ শুকিয়ে কুঁচে যায় এবং অসময়ে ঝরে পড়ে
প্রতিকার ব্যবস্থা হিসাবে বীজ শোধন করে বুনতে হবে এবং প্রতি লিটার পানিতে দুগ্রাম হিসাবে ব্রাসিকল গুলে রোগাক্রান্ত ফসলে ছিটাতে হবে
এছাড়া মরিচ গাছে ডগা শুকা (Dick back) ধসা রোগের (Blight or wilt) উপদ্রব দেখা যায়। ডগা শুকা রোগে গাছের ডগা থেকে শুকোতে শুরু করে এবং ধসা রোগে পাতা কান্ডে প্রথমে গাঢ় বাদামী দাগ পড়ে, গাছ ডগা থেকে শুকোতে শুরু থাকে
প্রতিকার ব্যবস্থা হিসাবে প্রতি লিটার পানিতে আড়াই গ্রাম ম্যানকোজেব (যেমন-ডাইথেন জেড-৭৮ ইত্যাদি) গুলে রোগাক্রান্ত গাছে ছিটাতে হবে
@ ফসল তোলা @
ফসল তোলা (Harvesting)
চারা লাগানোর ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। মরিচ কাঁচা পাকা অবস্থায় তোলা হয়। কাঁচা অবস্থায় তুলতে হলে বড় পুষ্ট দেখে মরিচ তুলতে হবে। বাজারে বিক্রি বাড়িতে ব্যবহারের জন্যে পাকা মরিচ তোলা হয়। পাকা মরিচ তুলে রোদে শুকিয়ে ভবিষ্যতের জন্যে সংরক্ষন করে রাখা হয়। পাকা মরিচ বোঁটাসহ তোলে ঘরে তিন চার দিন রাখতে হবে। এভাবে রাখলে আধাপাকা মরিচগুলো ঠিক মতো রঙ ধরবে। তারপর -১০ দিন রোদে ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
@ ফলন (Yield) @
ফলন (Yield)
হেক্টরে .-১০. টন কাঁচা মরিচ এবং .-. টন শুকনো মরিচ হয়। পাকা মরিচের ওজনের শতকরা ২৫-৩০ ভাগ শুকনো মরিচ পাওয়া যায়

No comments:

Post a Comment