উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

ডালিয়া



@ভূমিকা@
ফুলের নামঃ ডালিয়া
ইংরেজী নামঃ Dahlia
বৈজ্ঞানিক নামঃ Dahlia variabilis
পরিবারঃ Compositae
ব্যবহারঃ টবের ডালিয়া বড়ির উঠান, ঘরের বারান্দা ইদ্যাদি সাজাবার কাজে এবং বাগানের ডালিয়া বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
@জাত@
জাতঃ বিভিন্ন জাতের মধ্যে ক্যাকটাস, অ্যানিমেল, কলারেট, পীত্তনী অন্যতম। প্রায় ৩০ সে. মি. উচ্চতা বিশিষ্ট বামন জাতও রয়েছে। D. imperialis নামক লাল সাদা প্রজাতি শক্ত গড়নের এবং ১৫-২০ সে. মি. উঁচু।
রোপন সময়ঃ ‡mÞ¤^i-b‡f¤^i মাস
@জলবায়ু@
জলবায়ুঃডালিয়া গাছ খুব বেশী বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত ঠান্ডা অথবা অত্যাধিক গরম সহ্য করতে পারেনা। ইহার চাষের জন্য ঈষৎ-আর্দ্র আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী। একটু পাহাড়ি ৬০০-১২০০ মিটার উচু এবং গড় বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৫০-৭০ সেমি. এমন জায়গায় ডালিয়ার চাষ খুব ভাল হয়।
মাটিঃ ডালিয়া চাষের জন্য হালকা, উর্বর সরস দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। খুব আঠালো ভারী কর্দমাক্ত জমি চাষের পক্ষে অনুপযুক্ত। এরকম জমিতে পরিমানমতো বালি, গোবর বা পাতা- পচা সার, কয়লার গুড়া প্রভৃতি মিশিত করলে চাষোপযোগী হয়। মাঝারী ধরনের কালো মাটিতে ডালিয়া ভালো হয়।
@জমি তৈরী@
জমি তৈরীঃ বাগানের উত্তর-পশ্চিমাংশ যেখানে শীতের রৌদ্র বেশী পাওয়া যায়, সেরকম উঁচু জায়গা ডালিয়া চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। পিএইচ -. ডালিয়া চাষের পক্ষে ভাল, মাটি যেন যথেষ্ট সরস জৈবসারযুক্ত হয়।
- বার কুপিয়ে অথবা লাঙল মই দিয়ে মাটি বেশ গভীরভাবে কর্ষণ করে ঝুরজুরে নরম করে আগাছা পরিষ্কার করে ডালিয়া চাষের জন্য জমি তৈরী করতে হবে। এইসময় প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জায়গায় ২০০ কেজি কম্পোষ্ট বা গোবর সার, কেজি হাড়েরগুড়া অথবা সিঙ্গল সুপার ফসফেট প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে গুলি মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর, জমিকে সমতল করে মিটার x . মিটার মাপের ছোট ছোট প্লটে এমনভাবে ভাগ করতে হবে যেন পানি সেচ নিস্কাশনের সুবিধা পাওয়া যায়
টবের জন্য সাধারণত ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট মাটি বা সিমেন্টের টবে ডালিয়ার চাষ করা হয়। ইহার জন্য টবের তলদেশের ছিদ্রটি কলসিভাঙ্গা বা ইটের টুকরা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার উপর শুষ্ক ঝরাপাতা বিছিয়ে দিতে হবে। তার উপর - সেমি গভীর বালি দিয়ে পাতাগুলি ঢেকে দিতে হবে। টবের বাকি অংশ নিম্নলিখিত মিশ্রণের যে কোনটি দিয়ে ভর্তি করতে হবে। ঝুরা দোআঁশ মাটি ভাগ, পাতা-পচা সার ভাগ, খামারের সার ভাগ, ১০০ গ্রাম হাড়গুড়া ৫০ গ্রাম খইল- এর মিশ্রণ অথবা লাল মাটি ভাগ, বালি ভাগ, পাতা-পচা সার ভাগ, খামারের সার ভাগ, দোআঁশ মাটি ভাগ, কাঠকয়লার গুড়া চার ভাগের এক ভাগ এবং ১০০ গ্রাম হাড়গুড়া।
@চারা তৈরি@
চারা তৈরিঃ তিন প্রকারের চারা দ্বারা ডালিয়ার বংশবিস্তার করা যায়।১) বীজ দ্বারা )স্ফীত মূল বা কন্দ দ্বারা )ডালের কলম দ্বারা বীজ হতে তৈরী গাছ হতে ভাল ফুল পাওয়া যায়না বলে, আজকাল কন্দ কলমের চারা বসিয়ে ডালিয়ার চাষ করা হয়। গাছের গোড়ায় কন্দ থেকে যে চারা বের হয় সেগুলোকে অথবা গাছের গোড়ায় যে চারা ডাল বের হয় সে ডালগুলোকে ছোট অবস্থায় কেটে সাদা বালিতে বসিয়ে চারা করে নিতে হয়। ডাল লাগাবার পর দুবেলা ঝাঝারি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হয়। এর ফলে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই চারার শিকড় বের হয়।
পুষ্ট নীরোগ অঙ্কুরিত ডালিয়া মূলের খন্ডাংশ টবের মাঝখানে কিছু বালি দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। অঙ্কুরটির উপর - সেমি গভীর পাতা-পচা সার দিয়ে অঙ্কুরটি ঢেকে দিতে হবে। তারপর, এটাতে সেচ দিতে হবে। টবের মাটি ভিজা রাখার জন্য দরকার হলে প্রত্যহ হালকা সেচ দিতে হবে। টবগুলিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন সূর্যালোক বেশি পায়, কিন্তু বায়ু প্রবাহ কম পায়।
চারা রোপণঃ শিকড় বের হবার প্রথম অবস্থায় চারাগুলোকে সে. মি. (’’) টবে রাখতে হবে। টবে ভাগ গোবর সারের সঙ্গে ভাগ দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ থাকবে। অবস্থায় চারাগুলোকে শুধু সকালের রোদ খাওয়ালেই চলবে। এক সপ্তাহ পর চারাগুলোকে মূল টবে (২৫ সে.মি বা প্রায় ”) বসাতে হয়। বিভিন্ন নার্সারিতে তৈরি অবস্থায় চারা পাওয়া যায়।
জমিতে চারা রোপনের জন্য প্রতিটি প্লটে বেঁটে জাতের চারা সামনের সারিতে, মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট জাতের চারা মাঝের সারিতে এবং j¤^v জাতের চারা পিছন সারিতে রোপণ করতে হয়। মনে রাখতে হবে, শাখা হতে উৎপন্ন চারাগাছের উচ্চতা কম হয় এবং অপেক্ষাকৃত ছোট ফুল দেয়। চারা রোপনের সময় ফুলের রঙের কথাও মনে রাখতে হবে। রং মিলিয়ে (যেমন- ঘোর লাল, বেগুনি, হালকা লাল, কমলা, হলুদ, সাদা ইত্যাদি) চারা রোপণ করলে, বাগানটি বেশ সুন্দর দেখায়। এক-একটি প্লটে এক এক রকম রঙের চারা রোপণ করতে হয়। জাতের তারতম্য অনুসারে জমিতে ৪৫-৬০ সেমি অন্তর বা সারিতে ৩০-৪৫ সেমি অন্তর অন্তর চারাগুলি সারিবদ্ধভাবে অথবা বিভিন্ন ডিজাইনের প্লটে ত্রিভূজাকার পদ্ধতিতে চারা রোপণ করা যায়। A‡±vei-b‡f¤^i মাসই ডালিয়ার চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। সাধারণত বিকালের চারা রোপন করে / দিন হালকাভাবে সেচ দিতে হবে।
@সার প্রয়োগ পরিচর্যা@
সার প্রয়োগ পরিচর্যাঃ ভাল ফুল পাওয়ার জন্য ডালিয়াতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। যদি জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করা না থাকে, তবে চারা বসানোর সময় প্রতি মাদায় ২০০ গ্রাম খামারের সার বা পাতা-পচা সার, ১০০ গ্রাম স্টেরামিল ৫০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট প্রয়োগ করে চারা বসাতে হবে। চারা রোপনের ৪০-৫০ দিন পর প্রতি গাছে ২০-২৫ গ্রাম অ্যামোনিয়াম সালফেট সম পরিমাণ মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে। উপরোক্ত রাসায়নিক সার গাছের গোড়া হতে একটু দূরে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধি ফুল দেওয়ার সময় গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হয়।
গাছে কুঁড়ি আসার সময় উপরোক্ত রাসায়নিক সারের মিশ্রণ চাপান সার হিসেবে দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করতে হবে। টাটকা গোবর সার হতে তৈরি তরল সারও চাপান সার হিসেবে এই সময় প্রয়োগ করা যায়। - বার সেচ দেয়ার পর একবার করে জমি কুপিয়ে মাটি নরম ঝুরঝুরে করে দিতে হবে এবং আগাছা ইত্যাদি তুলে ফেলতে হবে।
পানি সেচঃ চারা ঠিক মত বসে যাবার পর পানি দেবার আগের দিন টবের সরু কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে দিতে হবে। চারা লাগানোর ১০-১২ দিন পরে পানি দেবার আগে কয়েক মুঠো মাটি টবে ছড়িয়ে গাছের গোড়া ভাল করে ঢেকে দিতে হবে। এরপর প্রচুর পরিমানে পানি দিতে হয়। এভাবে গাছ যত বাড়বে, মাটিও এভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। কুঁড়ি আসার পর্যন্ত এটা চালাতে হবে। এভাবে পরিচর্যা করলে গাছ অহেতুক j¤^v হয় না। গাছ বাড়তে থাকলে টবে কাঠি পুঁতে আলতোভাবে গাছের সঙ্গে বেধে দিতে হয়।কুঁড়ি আসার পর গাছে দুবেলাই প্রচুর পরিমাণে জল দিতে হয়।
গাছ ছাটাইঃ সবল তেজি গাছ তৈরি করতে হলে, গাছ ৪০-৪৫ সেমির মত বড় হলে ডগাটি ছেটে দিতে হবে। তাহলে কান্ডের পাশ থেকে যে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে - টি শাখা রেখে অবশিষ্টগুলি ছিড়ে ফেলতে হবে। তারপর, গাছের গোড়ায় মাটি ধরে দিতে হবে। উন্নত বড় জাতের গাছের একটি ঊর্ধ্বমুখী সোজা শাখা - টি পার্শ্ব শাখা রাখতে হবে। গাছের পার্শ্ব কুঁড়িগুলি যদি ছাটা না হয়, তবে গাছে অনেক ফুল হবে বটে, কিন্তু ফুলের আকার ছোট হয়ে যাবে। গাছ ছাটাই এর সময় একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, একবার গাছের কুঁড়ি বা ডগা ছাটলে গাছ যে আঘাত পায়, তাতে গাছের ফুল ধারণে প্রায় -১০ দিন বিলম্ব হয়ে যায়। বড় ফুল পেতে হলে গাছের কান্ডের আগার কুড়িটি রেখে অবশিষ্ট পার্শ্বকুঁড়িগুলি ছেটে দেওয়া উচিত সংখ্যায় অনেক বেশী ফুলের প্রয়োজন হলে গাছের আগা ভেঙ্গে দিতে হবে। এতে গাছ বেশ ঝোপালো হবে এবং অনেক ছোট ছোট ফুল হবে।
@ফুল বড় করার উপায়@
ফুল বড় করার উপায়ঃ গাছের ফুল বড় করতে হলে কুঁড়ি আসার পর ভাগ মিউরেট অব পটাশ, ভাগ সিঙ্গল সুপার ফসফেট / ভাগ ইউরিয়া মিশিয়ে চা চামচের চামচ পরিমাণে মিশ্রণ প্রত্যেক টবে দিতে হবে। এরপর প্রচুর পরিমাণে জল দিতে হবে। এর দিন পর খৈল গোবর পচানো (১০-১২ দিন পচানো) জল প্রয়োগ করতে হবে এবং আরও দিন শুধু জল দিয়ে যেতে হবে। সব সার ব্যবহারে কোনো অবস্থাতেই যেন টবের মাটি শুকিয়ে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডালিয়ার ডালের মাথায় -৩টি কুঁড়ি আসে। এদের একটি অপরগুলো থেকে বড় হয়। ফুল বড় পেতে হলে বড় কুঁড়িটি রেখে বাকি কুঁড়িগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে। এটি করতে হবে কুঁড়ি বা ডালের কচি অবস্থায়। কুঁড়িতে পাপড়ি দেখা দিলে কোন সার ব্যবহার করা ঠিক নয়।
@রোগ পোকাদমণ@
রোগ পোকাদমণঃ ভাইরাসঘটিত রোগ- ডালিয়া গাছ মোজইক রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে-সবুজ হয় এবং গাছ বেঁটে হয়ে যায়। ক্রমে ক্রমে আক্রান্ত পাতা ডাঁটা কুঞ্চিত হয়ে বিকৃত হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছে ফুল হয়না।
প্রতিকার- ভাইরাসঘটিত রোগের কোন ঔষধ নাই। সুতরাং রোগাক্রান্ত গাছগুলি সঙ্গে সঙ্গে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। জাবপোকা, থ্রিপস, জসিড ইত্যাদি পোকা দ্বারা রোগের বিস্তার হয়। তাই সুস্থ গাছে নিয়মিত ডিমেক্রন ১০০ .সি.- .০৫ শতাংশ দ্রবণ প্রতি ১৫ দিন অন্তর সেপ্র করলে এইসব পোকা দমন করা যায়। টবে বা জমিতে চারা বসানোর সময় প্রতি গাছের গোড়ায় / গ্রাম হিসাবে থাইমেট-১০জি প্রয়োগ করলে, এইসব কীটশত্রুর উপদ্রব হয় না।
ছত্রাকঘটিত রোগঃ ডালিয়া গাছ ভুসারোগ (smut disease) এবং মূল শুষ্ক পচন (dry rot), সিক্ত পচন (wet rot) ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভূসা রোগে আক্রান্ত গাছের পাতার উভয়দিকে হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। রোগাক্রান্ত মূল পচে নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ ভূসা রোগ দমনের জন্য . শতাংশ সেপ্র দ্রবণ অথবা ডায়াথেন এম-৪৫ এর .২৫ শতাংশ সেপ্র দ্রবণ (প্রতি ১০০ বর্গমিটারে লিটার দ্রবণ) সেপ্র করতে হয়। মূল বা কন্দ পচন রোগ দমনের জন্য গাছের গোড়া ব্রাসিকল-৭৫ অথবা ক্যাপটান-৭৫ এর . শতাংশ দ্রবণ দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে। শুষ্ক বালিতে ব্রাসিকল মিশ্রিত করে ডালিয়া মূল সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগঃ ডালিয়া মূল মুকুট স্ফীতি রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মূল হতে ফুলকপির পাতার মত অনেকগুলি নিষ্ফলা শাখা বের হয়।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত মূল তুলে ফেলতে হবে এবং জমিতে চুন মিশিয়ে মাটি শোধন করতে হবে।
কীটশত্রুঃ ডালিয়া সবুজ মাছি, কাটুই পোকা, শুয়াপোকা, জাবপোকা, থ্রিপস, উঁই, লাল মাকড়সা ইত্যদি কীটশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়। জাবপোকা, থ্রিপস, লাল মাকড়সা দমণের জন্য ডিমেক্রন-১০০, রোগোর ১০০ . সি. ইত্যাদি ঔষধ বিশেষ কার্যকরী। উই, কাটুই পোকা, শুয়াপোকা ইত্যাদি দমনের জন্য ম্যাটাসিড ৫০ . সি. প্যারাটফ-৫০ ইত্যাদি বিশেষ কার্যকরী

No comments:

Post a Comment