@ভূমিকা@
ফুলের নামঃ চন্দ্রমল্লিকা
ইংরেজী নামঃ Chrysanthemum
বৈজ্ঞানিক নামঃ Chrysanthemum segetum
পরিবারঃ Compositae
শীতকালীন মৌসুমি ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকা রুপে ও সৌন্দর্যে গোলাপের মতই জনপ্রীয়। খ্রিস্টমাসের সময় এ ফুল ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমাম বলা হয়। জাপান ও চীনদেশই সম্ভবত চন্দ্রমল্লিকার আদি জন্মস্থান। এ ফুল নানা বর্নের ও নানান রং এর হয়ে থাকে। নানা রং এর বাহার ও গঠনের জন্য একে শরৎ রানী বলা হয়।
ব্যবহারঃ বাড়ির উঠান, বারান্দা, ছাদ ইত্যাদি সাজাবার জন্য চন্দ্রমল্লিকা সাধারনত ব্যবহৃত হয়।
@ জাত@
জাতঃ হেয়ারী, কেদারী, জাপানিজ ইনাকার্ভড, অ্যানিমোন, পোমপোন, রিফ্লেক্সড।
@রোপন সময় @
মে- জুলাই
বংশ বিস্তারঃ বীজ হতে, তেউড় হতে, কাটিং বা শাখা হতে
টবে চন্দ্রমল্লিকা চাষ
টবে চন্দ্রমল্লিকা চাষঃ জুলাইয়ের শেষের দিকে চন্দ্রমল্লিকার কাটিংস বা তেউড় প্রথমে ৩ ইঞ্চি বা ৭ সেমি. মাপের ছোট টবে বসাতে হবে। ১৫- ২০ দিন পর শিকড় সমেত কাটিংস বা তেউড়কে ৫ ইঞ্চি বা ১২-১৩ সেমি. মাপের টবে লাগাতে হবে। আগষ্টের ২য় সপ্তাহের মধ্যে টব পরিবর্তনের কাজটি করতে হবে। এক মাস পরে চারা ৮-১০ ইঞ্চি বা ২০- ৩০সেমি. মাপের বড় টবে বা বাগানে লাগাতে হবে। আগষ্ট হতে †m‡Þ¤^‡ii ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত শেষ টব পাল্টানো বা বাগানে রোপনের কাজ চলতে পারে।
টবের মাটি তৈরীঃ ৩ ইঞ্চি বা ৭-৮ সেমি. মাপের ছোট টবের ২ ভাগ পাতাপচা সার, ২ ভাগ সাধারণ মাটি, ১ ভাগ গোবর সার ও তার সঙ্গে কিছুটা লাল বালি মিশিয়ে সার মাটি তৈরী করতে হবে। ৫ ইঞ্চি বা ১২-১৩ সেমি. ও ৮-১০ ইঞ্চি বা ২০- ৩০সেমি.মাপের টবের জন্য ৩ ভাগ সাধারণ মাটি, ৩ ভাগ পাতাপচা সার ও চার ভাগ গোবর সার মিশিয়ে সারমাটি তৈরী করতে হবে। ৮-১০ ইঞ্চি বা ২০- ৩০সেমি.মাপের টবের সঙ্গে ৬ চামচ সুপার ফসফেট, তিন চামচ সালফেট অফ পটাশ এবং একমুঠ স্টিমড বোন মিল মিশিয়ে টবটি পুরোপুরি ভর্তি করতে হবে। টব ভরার দশদিন পরে ঐ মাটির সঙ্গে ২/৩ চামচ কলিচুন ও এক মুঠা রেড়ির খৈল মিশিয়ে নিলে ভাল হয়। সার মাটি তৈরী করার সময় উপাদানগুলিকে গুড়া করে ৮ সেমি. ছিদ্রের চালুনি দ্বারা চেলে নিতে হবে। টব ভরার অন্তত একমাস পূর্বে সার মাটি তৈরী করে নিতে হবে এবং এ মিশ্রনের স্তুপকে মাঝে মাঝে ওলট-পালট করে ভালবাবে মিশাতে হবে।
বর্ষাকালে টবগুলি সরিয়ে বারান্দা বা কোন আচ্ছাদিত স্থানে রাখতে হবে।
@জমিতে চন্দ্রমল্লিকা চাষ@
জমিতে চন্দ্রমল্লিকা চাষঃ চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য উর্বর হালকা দোআঁশ মাটি, উচু, শুষ্ক ও সহজে জল নিস্কাশিত হয় এমন জমি প্রয়োজন। দক্ষিণ খোলা জমি চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।
জমিতে লাঙ্গল দেওয়া বা কোপানোর সময় জমিতে পরিমাণমতো পাতাপচা সার, পচা গোবর সার, হাড়গুড়া বা সুপার ফসফেট সার প্রয়োগ করে জমির সাথে মিশাতে হবে। জমিকে উত্তমরুপে কর্ষণ করে মাটি ঝুরঝুরে ও নরম করিয়া ১ফুট বা ৩০ সেমি. দুরে দুরে চারা বসাতে হবে। চারা রোপনের পর জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে ও নিয়মিতভাবে সেচ প্রদাণ করতে হবে।
@চন্দ্রমল্লিকার পরিচর্যা@
চন্দ্রমল্লিকার পরিচর্যাঃ
পানি সেচঃ চন্দ্রমল্লিকার জন্য বেশী পানি ও রোদ কোনটাই প্রয়োজন নাই। সেজন্য, পরিমানমতো পানি সেচ করা এবং প্রখর সুর্যালোক ও প্রবল বর্ষনের কবল হতে গাছকে রক্ষা করার জন্য আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
সার প্রয়োগঃ টবে বা জমিতে যেখানেই চাষ করা হোক না কেন, গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ফোটার সময় (যথা- মার্চ হতে জুলাই মাস এবং পুনরায় †m‡Þ¤^i মাস হতে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত) পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য যোগাতে হয়। তরল সার, পাতা-পচা সার, পচা গোবর সার, খইল, হাড়গুড়া, সুপার ফসফেট, অ্যামোনিয়াম সালফেট, ইউরিয়া, মিউরেট অফ পটাশ, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি জৈব ও অজৈব সার এ ফুল গাছের জন্য উপযোগী। অনেকসময় অত্যাধিক সার ব্যবহারের ফলে পাতা বড় হয়ে যায়, গাছের ডগা জটা বাধিয়া চওড়া ও চ্যাপ্টা হয়ে যায় এবং ফুল ছোট হয়ে যায়। এরুপ ক্ষেত্রে গাছের ডগা ছেটে দিলে ভালো হয়। তরল সার প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে দিতে হবে। মাসে ১/২ কিছু শুস্ক মাছের গুড়া চাপানো সার হিসাবে প্রয়োগ করলে ভালো ফুল পাওয়া যায়। সুপার ফসফেট গাছ লাগানোর সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছে কুড়ি আসার সময় একবার বা দুইবার অ্যামোনিয়াম সালফেট বা ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে তাড়াতাড়ি ফুল ফোটে। গাছে নাইট্রোজেনের পরিমান বেশী হয়ে গেলে গাছ j¤^v হয়ে যায়, ফুলের আকার ছোট ও রং ফেকাসে হয়ে যায়। অতিরিক্ত পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফুলের রং ভালো হয়। আবার অতিরিক্ত ফসফরাস সার প্রয়োগ করলে ফুলের রং খারাপ হয়ে যায়।
আগাছা পরিস্কারঃ বাগানের এবং টবের চন্দ্রমল্লিকা গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত খুড়ে আলগা করতে হবে এবং ঘাস আগাছা ইত্যাদি তুলে ফেলতে হবে।
খুটি দিয়ে ঠেকঃ দ্রুত গাছ বৃদ্ধি ও ঝোড়ো বাতাস থেকে গাছকে রক্ষার জন্য গাছের পাশে শক্ত কাঠি পুঁতে গাছের সঙ্গে আলতোভাবে বেধে দিতে হয়।
ডাল ছাটাইঃ চন্দ্র মল্লিকা একটি বা একাধিক ফুল নিয়ে ফুটতে পারে। যিনি একাধিক ফুল ফোটাতে চান তিনি শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকেই ছাঁটাই শুরু করবেন। এটা গাছের এমন সময় করতে হবে যখন গাছের উপর দিকের পাতার কোণ থেকে ডাল বেরোনোর আভাস দেখা যাবে। এতে ফুল তাড়াতাড়ি ও ভাল হয়। একটি বড় ফুল পেতে হলে আগার মুুকুল রেখে অন্য মুকুল ও ডালপালা ভেঙ্গে দিতে হয়।
ডগা মোটা হলেঃ নাইট্রোজেন সারের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে গাছের ডগা মোটা হয়ে যায় এবং ফুল ফোটে না। এক্ষেত্রে টবের মাটি শুকিয়ে নিয়ে মাঝে মাঝে চুনের পানি ব্যবহার করতে হয়।
বড় ফুল পাবার উপায়ঃ গাছের কুড়ি এলে ২/১ বার রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে বড় ফুল পাওয়া যায়। অনেকে প্রথম দিকে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে কেবল জৈব সার ব্যবহার করেন। পরে কুড়ি আসার পর ২/১ বার ৩ ভাগ সুপার ফসফেট, ২ ভাগ মিঊরেট অব পটাশ, ১ ভাগ ইউরিয়া ও ১ ভাগ ম্যাগ সালফ গাছ প্রতি প্রতিবারে ১ চামুচের মত প্রয়োগ করে আশানুরূপ বড় আকারের ফুল পান। তবে পাপড়ির রং দেখা দিলেই অর্থাৎ কুড়ি ফুটবার সময় হলেই সার দেওয়া বন্ধ করে শুধু জল দিতে হবে।
ফুলের ভাল রং পাবার উপায়ঃ মাছের পিত্ত, ব্লাডমিল, রান্না ঘরের ঝুল এবং ফেরাস সালফেট জলে গুলে বা পরিচয়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করলে ফুলের রং সঠিক, ভাল ও দীর্ঘস্থায়ী
@রোগ দমন@
রোগ দমনঃ পাতায় মরিচা পড়া রোগই চন্দ্রমল্লিকার প্রধাণ শত্রু। ইহা ছত্রাক জাতীয় রোগ এ রোগের আক্রমণে পাতার উপর ফোস্কা ও ছোট ছোট দাগ পড়তে দেখা যায়।দাগগুলি প্রথমে হলদে থাকে, পরে ঘন বাদামী রং ধারন করে। এভাবে সমগ্র গাছে রোগ ছড়িয়ে পড়ে গাছটি মারা যায়।
ইহার পাউডারী মিলডিউ নামে আর একপ্রকার ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণে পাতার উপড় ধুসর বর্ণের পাউডারের মতো একপ্রকার আবরণ পড়তে দেখা যায়। কুটে রোগ নামে একপ্রকার ভাইরাস জাতীয় রোগও চন্দ্রমল্লিকায় আক্রমণ করে। এর আক্রমণে গাছের পাতাগুলি হলদে হয়ে যায়।
ছত্রাক জাতীয় রোগ দমণ ও প্রতিরোধ করতে হলে ব্লাইটক্স, বর্দোমিক্সাচার, ডাইথেন জেড, ইউনিজেব প্রভৃতি ছত্রাকনাশক ঔষধ নিয়মিত সেপ্র করতে হবে।
ভাইরাস রোগ দেখা দিলে, আক্রান্ত গাছটি তুলে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নতুবা সমস্ত গাছেই ছড়িয়ে পড়ে।
@পোকা দমন@
পোকা দমনঃ
শীতের শুরুতে চন্দ্রমল্লিকার শিকড়ে সাদা বিটেল ম্যাগেট নামক একপ্রকার কীটের আক্রমণ হতে দেখা যায়। এরা শিকড়ে বাসা বেঁধে শিকড় খেয়ে নষ্ট করে দেয় । এর ফলে পাতা হলদে হয়ে যায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।এরুপ ক্ষেত্রে গাছটি তুলে ফেলতে হবে। উপযুক্ত কীটনাশক ওষুধ যেমন থাইমেট, সেভিডল প্রভৃতি ঔষধ গোড়ায় প্রয়োগ করে মাটি চাপা দিতে হবে।
অনেক সময় চন্দ্রমল্লিকার কান্ডে ও পাতার তলদেশে একপ্রকার কালো রং এর অ্যাফিড, থ্রিপস্, মিলিবাগ প্রভৃতি ছোট ছোট পোকার উপদ্রব দেখা যায়। এদের আক্রমণে গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যায় ও গুটিয়ে যায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় এদের নষ্ট না করলে, এরা গাছের বিরাট ক্ষতি করে।তামাকের কান্ট, রাইম সালফার, এনড্রিন, ডেমিক্রন, ম্যালাথিয়ন প্রভৃতি কীটনাশক ঔষধ ছিটিয়ে এদের দমন ক
No comments:
Post a Comment