@ ভূমিকা @
বাংলাদেশে প্রায় সব পরিবারে কম বেশি লেবুর ব্যবহার হয়। অনেক রকম লেবু আছে এদর মধ্যে কাগজি, পাতি, বাতাবি বা জাম্বুরা এবং কমলা উল্লেখযোগ্য লেবু জাতীয় ফল। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ১২ হাজার টন। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বাতাবি লেবুর চাষ হয় যার মোট উৎপাদন প্রায় ১৪ হাজার টন। এছাড়া ৩৫০ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৭৫০-৮০০ টন। যা আমাদের চাহিদার মাত্র ১/৩ অংশ পূরন করে। দেশের সব এলাকাতেই কম বেশি এসব ফলের চাষ হয় তবে সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও পার্বত্য জেলাসমূহে ভাল জন্মে।
লেবু জাতীয় ফল ভিটামিন-সি এর একটি উত্তম উৎস। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ভিটামিন সি এর অভাবে নানা রকম জটিলতায় ভোগে। ভিটামিন-সি এর অভাবে স্কার্ভি, দাঁতের মাড়ি ফোলা ও দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়া রোগ হয়। এ ছাড়া লেবু জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম ও আয়রন পাওয়া যায়।
@ জলবায়ু ও মাটি @
বিশ্বের অবউষ্ণ অঞ্চলে লেবুজাতীয় ফলের চাষ সবচেয়ে ভাল হয়। বাংলাদেশের জলবায়ুতে কমলা, জাম্বুরা, লেবু ও কাগজি লেবু জন্মে। কাগজি বা কাগজা শুষ্ক অঞ্চলে যেমন- কুষ্টিয়া, পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলে ভালো জন্মে। বৃহত্তর সিলেট ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম কমলা উৎপাদনের জন্য অধিক উপযোগী।
উঁচু বা মাঝারি উঁচু নিস্কাশন সমৃদ্ধ বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটিতে লেবুজা
@ জাত @
সীডলেস লেমন ১
এটি বাণিজ্যিক জাত। এর ফল বীজশূন্য, আকারে লম্বা।
সীডলেস লেমন ২
গাছ খুবই শক্তিশালী এবং প্রচুর ফল ধরে।
সীডলেস লেমন ৩
এটি কুমিল্লা এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এলাচী লেবু
এটি দেশের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায়। এলাচীর ঘ্রাণ এ জাতটির বৈশিষ্ট্য। ফলের আকার লম্বাটে। ফলে অনেক বীজ আছে, ফল কম রসালো।
কাগজী লেবু বা Sour lime
এর ফল গোলাকার ও ছোট। এ লেবুর আর একটি জাত কাগজী। এর ফল ডিম্বাকার।
জাম্বুরা
লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে জাম্বুরা বা বাতাবী লেবু আকারে সবচেয়ে বড় হয়। উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বারি বাতাবী লেবু-১ নামে একটি জাত ১৯৯৭ সালে অবমুক্ত করেছে।
কমলা বা manderine
বাংলাদেশের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জন্মে। ফল পাকা অবস্থায় কমলা রং ধারণ করে। খোসা পাতলা ও সহজে ছাড়ানো যায়। উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র সমপ্রতি বারি কমলা-১ নামে কমলার একটি জাত অনুমোদন করেছে। অন্যান্য বিখ্যাত জাতগুলো হচ্ছে সান্ত্রা, নাগপুরী, সাৎসুমা ইত্যাদি।
@ গাছের বংশ বৃদ্ধি @
লেবু, কাগজি লেবু ও জাম্বুরা
লেবু, কাগজি লেবু ও জাম্বুরা এর গুটিকলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে থাকে। এ পদ্ধতি এদেশে বহুদিন থেকেই প্রচলিত।
কমলা
বীজ থেকে কমলার চারা করা যায়। বীজে নিউসেলার চারা হয়। একাধিক বীজ গর্তে ১ সে.মি গভীরে রোপণ করা হয় এবং চারা গজানোর পর একটি রেখে বাদবাকী উপড়ে ফেলে দিতে হবে। সতর্কতার সাথে সতেজ ও অপেক্ষাকৃত মোটা নিউসেলার চারাটি নির্বাচন করতে হয়। তবে এসব চারায় রোগ বালাই এর সম্ভাবনা থাকে বলে টি-বাডিং এর সাহায্যে উপযু্ক্ত রুটস্টকে কলম করা উত্তম।
উৎপত্তিস্থল
অধিকাংশ লেবুজাতীয় ফলের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের দেশসমূহ বিশেষ করে ভারত ও চীনদেশে এবং এ দু’দেশের মধ্যবর্তী অ
@চাষাবাদ পদ্ধতি@
রোপণের দূরত্ব ও সময়
লেবু ও কাগজী লেবু ৪ x ৪ মিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। কিন্তু কমলা ৩ x ৩ মিটার ও জাম্বুরা ৫ x ৫ মিটার দুরত্বে রোপণ করাই শ্রেয়। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাসে রোপণ করাই উত্তম।
জমি তৈরি, চারা রোপণ ও সার প্রয়োগ
জমি চাষ দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। এর পর দূরত্ব অনুযায়ী জমি মেপে নিয়ে কাঠি পুঁতে রোপণের স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। তারপর কাঠিটিকে কেন্দ্র করে ৫০ সে.মি গভীর করে ৫০ x ৫০ সে.মি সাইজের গর্ত খুঁড়তে হবে। চারা বা কলমের গাছ রোপণের ১০-১৫ দিন আগে গর্ত প্রতি ১৫-২০ কেজি গোবরসার বা আর্বজনা পঁচাসার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ফেলতে হবে। গর্ত ভরাট করার পর এর উপরের ২০-২৫ সে.মি মাটির সাথে ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০০ গ্রাম এমপি সার হালকা কোপ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর গর্তে গাছ রোপণ করতে হবে। এক বছরের চারা বা কলমের গাছ রোপণ করাই সবচেয়ে ভাল। রোপণের পরপরই গাছে সেচ দিতে হবে। বিভিন্ন বয়সের লেবুজাতীয় ফল গাছে বার্ষিক সারের পরিমাণ (প্রতি গাছের জন্য) নিন্মে তুলে ধরা হলঃ
সার ১-২ বছর বয়স ৩-৫ বছর বয়স ৬-১০ বছর বয়স
গোবর বা আবর্জনা পঁচাসার (কেজি) ১৫ ২০ ২৫-৪০
ইউরিয়া (গ্রাম) ১৫০ ৩৫০ ৫০০-৭০০
টিএসপি (গ্রাম) ১৫০ ৩৫০ ৪০০-৫৫০
এমপি (গ্রাম) ২০০ ৩০০ ৪৫০-৬৫০
@ রোগ ও পোকামাকড় দমন @
রোগ দমন
লেবুজাতীয় ফল গাছের আগা মরা বা ডাই ব্যাক অর্থাৎ পাতা এবং শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগ মরে যাওয়া একটি মারাত্নক রোগ। এ রোগ দেখা দিলে মরা ডালপালা ছেঁটে দিয়ে ১০-১২ দিন পরপর বোরদো মিকচার বা কোন কপার ছত্রাক নাশক স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়। এছাড়া গ্যামোসিস নামক রোগ হলে বাকল ফেটে রস পড়তে থাকে। গ্রিনীং একটি মারাত্নক রোগ যা মাইকোপ্লাজমার আক্রমণে হয়ে থাকে। এ রোগ এক প্রকারের সাইলিড পোকা (ভেক্টর) দ্বারা এক গাছ থেকে আর এক গাছে বিস্তার লাভ করে। পোকা দমন করে এর বিস্তার রোধ করা যেতে পারে।
পোকামাকড় দমন
সাইট্রাস লিফমাইনার পোকা নতুন পাতায় আক্রমণ করে। নতুন পাতা বের হওয়ার সাথে সাথে রগর/রক্রিয়ন/পারফেকথিয়ন-৪০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২.০ মি.লি ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফল চোষামথ লেবু জাতীয় গাছের অপর একটি মারাত্নক ক্ষতিকর পোকা। বিষাক্ত টোপ ব্যবহার করে এর সংখ্যা কমানো যেতে পারে। তাছাড়া আলোর ফাঁদ (Light trap) ব্যবহার করেও এর সংখ্যা কমানো যায়।
@ ফলন @
লেবুঃ ১০০-১০০০ টি ফল প্রতি গাছে।
জাম্বুরাঃ ১০০-৩০০ টি ফল প্রতি গাছে।
কমলাঃ ১০০-৫০০ টি ফল প্রতি গাছে
No comments:
Post a Comment