উদ্যান জাতীয় ফসল

Monday, January 25, 2016

ধান



@পরিচিতি@
বাংলা নাম ধান
ইংরেজী নাম Rice
বৈজ্ঞানিক নাম Oryza sativa
পরিবার Gramineae
উফশী ধানের ফলন উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। তাই জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সব কাজ ধারাবাহিক ভাবে বিচক্ষণতার সাথে করতে হবে। নিয়মের হেরফের অথবা অনুমোদিত পদ্ধতি সঠিক ভাবে অনুসরন না করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং আশানুরুপ ফলন থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
@উপযোগী জমি মাটি@
অতি লোনা বেলে জমি ছাড়া আর সব রকম মাটিতেই ধানের চাষ করা যায়। তবে শুধুমাত্র বন্যামুক্ত এলাকাতেই খরিপ মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করা হয়। বোরো মৌসুমে যেখানে সেচের ব্যবস্থা আছে সেখানে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করা যায়।
@জাত নির্বাচন@
জমি, মৌসুম, পরিবেশ শস্যক্রম বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা উচিত। সে অনুযায়ী সারণী- থেকে মৌসুমভেদে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।
আউসঃ বি আর-, বি আর-২০, ২১, ২৬।
আমনঃ বি আর-১১, ব্রি ধান- ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৮, ৩৯, ৪০।
বোরোঃ বি আর-১৪, ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯।
@বীজ বাছাই@
বপনের জন্য রোগমুক্ত, পরিস্কার পরিপুষ্ট বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের লক্ষ্যে ভালভাবে বীজ বাছাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
প্রায় ৪০ লিটার পরিস্কার পানিতে দেড় কেজি ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিন। এবার ৪০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিন। ভারী, পুষ্ট, সুস্থ সবল বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপরিপুষ্ট, হালকা, রোগা বা ভাঙ্গা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো পৃথক করে নিন। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিস্কার পানিতে - বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ইউরিয়া মিশানো পানি সার হিসাবে বীজতলায় ব্যবহার করা যায়। কুলা দিয়ে ঝেড়ে বীজ বাছাই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এতে চিটা দূর হলেও অপরিপুষ্ট বীজ দূরীভূত হয় না
@বীজতলা তৈরি@
বীজতলা তৈরির আগে সারণী দেখে জেনে নিতে হবে কখন কোন জাতের ধানের বীজ বীজতলায় বপন করতে হবে। চারটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা যায়। এগুলো হচ্ছে শুকনো, কাদাময়, ভাসমান ডাপোগ বীজতলা।
শুকনো বীজতলা
উপযুক্ত আদ্রতায় - বার চাষ মই দিয়ে মাটিকে একেবারে ঝুরঝুরে করার পর জমি সমান করতে হবে। এবার এক মিটার চওড়া করে জমির দৈর্ঘ্য বরাবরে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের পাশে পানি নিস্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা তৈরি করতে হবে। বেডের উপরিভাগের মাটি ভালোভাবে সমান করার পর শুকনো বীজ সমান ভাবে ছিটিয়ে দিন। এখন উপরের মাটি এমনভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন বীজগুলো .-. সেন্টিমিটার (.-. ইঞ্চি) মাটির নিচে চলে যায়। কাজকে সহজ করতে ধুলা-মাটির আস্তরণ দেওয়া যায়। বেডের মাটিতে প্রয়োজনীয় আদ্রতা নিশ্চিত করার জন্য নালা ভর্তি করে সেচ দেওয়া উচিত
কাদাময় বীজতলা
দোঁআশ এটেল মাটি বীজতলার জন্য ভাল। প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে - সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দু-তিনটি চাষ মই দিয়ে থেকে ১০ দিন রেখে দিন এবং পানি আটকিয়ে রাখুন। আগাছা, খড় ইত্যাদি পচে গেলে আবার চাষ মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে জমি তৈরি করতে হবে। এবার এক মিটার চওড়া করে জমির দৈর্ঘ বরাবরে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের পাশে পানি নিস্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা তৈরি করতে হবে। বেডের উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে। কাদা বেশি হলে বীজ মাটিতে ডুবে যাবে এবং তাতে ভালভাবে বীজ গজাবে না। অবস্থায় বেড তৈরির / ঘন্টা পর বীজ বোনা দরকার
ভাসমান বীজতলা
বন্যা কবলিত এলাকায় যদি বীজতলা করার মতো উঁচু জায়গা না থাকে বা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রয়োজনীয় সময় না পাওয়া যায় তাহলে বন্যার পানি, পুকুর, ডোবা বা খালের পানির উপর বাঁশের চাটাইয়ের মাচা বা কলাগাছের ভেলা করে তার উপর - সেন্টিমিটার পরিমাণ কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলার মত ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যায়। বন্যার পানিতে যাতে ভেসে না যায় সেজন্য বীজতলা দড়ি বা তার দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা দরকার। পানিতে ভাসমান থাকায় বীজতলায় পানি সেচের দরকার হয় না
ডাপোগ বীজতলা
বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ডাপোগ বীজতলা করা যায়। বাড়ীর উঠান, পাকা বারান্দা বা যে কোন শুকনো জায়গায় চারিদিকে মাটি,কাঠ,ইট বা কলাগাছের বাকল দিয়ে চৌকোণা করে নিতে হবে। এবার কলাপাতা বা পলিথিন বিছিয়ে তার উপর ঘন করে অঙ্কুরিত বীজ বুনতে হবে। বীজতলার নীচে আচ্ছাদন থাকায় চারা মাটি থেকে কোনরূপ খাদ্য বা পানি পায় না বলে - ঘন্টা পরপর ভিজিয়ে দিতে হবে এবং দুসপ্তাহের মধ্যেই চারা তুলে রোপন করতে হবে। অন্যথায় চারা খাদ্যের অভাবে মারা যেতে পারে।
@বীজ জাগ দেওয়া@
বাছাইকৃত বীজ কাপড় বা চটের ব্যাগে ভরে ঢিলা করে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন ২৪ ঘন্টা। এরপর বীজের পোটলা পানি থেকে তুলে ইট বা কাঠের উপর ঘন্টাকানেক রেখে দিন পানি ঝরার জন্য। এবার বাঁশের টুকরি বা ড্রামে / পরত শুকনো খড় বিছিয়ে তার উপর বীজের পোটলা রাখুন এবং আবারও / পরত শুকনো খড় দিয়ে ভালোভাবে চেপে তার উপর ইট বা কাঠ অথবা যেকোন ভারি জিনিস দিয়ে চাপা দিন। এভাবে জাগ দিলে ৪৮ ঘন্টা বা দিনেই ভালো বীজের অঙ্কুর বের হবে এবং কাদাময় বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে।
@বীজতলায় বপন@
সতেজ সবল চারা আমাদের প্রধান কাম্য। তাই বাছাইকৃত বীজ ওজন করে নিতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বোনা দরকার। এরূপ বর্গমিটার বীজতলার চারা দিয়ে ২৫-৩০ বর্গমিটার জমি রোপণ করা যাবে। উল্লেখ্য যে,ডাপোগ বীজতলার জন্য প্রতি বর্গমিটারে .-. কেজি বীজ বুনতে হবে এবং শুকনো বীজতলার জন্য বীজ জাগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভেজা বীজতলায় বীজ বেডের উপর থাকে বলে পাখিদের নজরে পড়ে। তাই বপনের সময় থেকে / দিন পর্যন্ত পাহারা দিতে হবে। সারণী - জাত-ভিত্তিক বীজ বপনের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।
@বীজতলার পরিচর্যা@
বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখা দরকার। বীজ গজানোর - দিন পর বেডের উপর - সেন্টিমিটার পানি রাখলে আগাছা পাখির আক্রমণ নিয়ন্ত্রন করা যায়। বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার বাড়বাড়তি ব্যহত হয়। একারণে রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে চারা রক্ষা পায় এবং চারার বাড়বাড়তি বৃদ্ধি পায়। বীজতলায় আগাছা, পোকামাকড় রোগবালাই দেখা দিলে তা দমন করার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বীজতলায় চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করলেই চলে। ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারা সবুজ না হলে গন্ধকের অভাব হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তখন প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম সার উপরিপ্রয়োগ করা দরকার। ইউরিয়া সার উপরি-প্রয়োগের পর বীজতলার পানি নিস্কাশন করা উচিত নয়।
@চারা উঠানো বহন@
চারা উঠানো
চারা উঠানোর আগে বীজতলায় বেশি করে পানি দিতে হবে যাতে বেডের মাটি ভিজে একেবারে নরম হয়ে যায়। চারা উঠাতে এমন সাবধানতা নিতে হবে যেন চারাগাছের কাণ্ড মুচড়ে বা ভেঙ্গে না যায়। উঠানো চারার মাটি কাঠ বা হাতে আছাড় না দিয়ে আস্তে আস্তে পানিতে নাড়াচাড়া দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, চারাগাছের শিকড় ছিঁড়ে গেলেও রোপনের পর চারার বাড়-বাড়তির কোনরূপ অসুবিধা হয় না কিন্তু কান্ড মুচড়ে গেলে চারাগাছের বেশ ক্ষতি হয়। এজন্য চারা উঠানোর পর চারার পাতা দিয়ে বান্ডিল বাঁধাও উচিত নয়। শুকনো খড় ভিজিয়ে নিয়ে বান্ডিল বাঁধতে হবে
চারা বহন
বীজতলা থেকে রোপণ ক্ষেতে চারা বহন করার সময় পাতা কান্ড মোড়ানো রোধ করতে হবে। এজন্য ঝুড়ি বা টুকরিতে সাজিয়ে চারা বহন করা উচিত। বস্তাবন্দী করে ধানের চারা বহন করা উচিত নয়।
@রোপনের জন্য জমি তৈরি@
জমিতে হেক্টরপ্রতি - টন জৈবসার ছিটিয়ে দিন। এখন -১০ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দুটি চাষ আড়াআড়ি ভাবে দিয়ে - দিন অপেক্ষা করতে হবে। এবার ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর করে আড়াআড়ি ভাবে দুটি চাষ দুটি মই দিয়ে - দিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর দিতে হবে শেষ চাষ। চাষের আগেই ইউরিয়া সারের ১ম কিস্তি এবং সম্পূর্ণ ফসফেট, পটাশ, জিপসাম দস্তা সার ছিটিয়ে চাষ শুরু করতে হবে। সারের পরিমাণ সার ব্যবস্থাপনা অংশ থেকে দে
@চারা রোপন@
চারার বয়স
ভাল ফলন পেতে হলে উপযুক্ত বয়সের চারা রোপন করা জরুরি। সারণী তে জাত মৌসুম ভেদে চারার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ ভাবে আউশে ২০-২৫ দিন, রোপা আমনে ২৫-৩০ দিন এবং বোরাতে ৩৫-৪৫ দিন হওয়া উচিত
@রোপনের নিয়ম@
রোপনের সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকলেই চলে প্রতি গুছিতে - টি চারা রোপন করা ভাল। মাটির - সেমি গভীরতাই চারা রোপন করা উত্তম। সঠিক গভীরতায় চারা রোপন করলে চারার বৃদ্ধি দ্রুত শুরু হয় এবং কুশির সংখ্যা বেশি হয়
@চারা রোপনের দূরত্ব@
সারিবদ্ধ ভাবে চারা রোপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব বজায় রাখতে হবে (সারণী-) বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নির্দিষ্ট পরিমান জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক গুছি থাকলে নির্দিষ্ট ফলন হবে। আবার সারিবদ্ধ চারা রোপন করলে নিরানি যন্ত্র ব্যবহার করা যায় তাতে খরচ কমবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারার দূরত্ব সঠিক হতে হবে। উপরন্তু সঠিক দূরত্বে চারা রোপন হলে প্রত্যেক গাছ সমানভাবে আলো, বাতাস সার গ্রহণের সুবিধা পাবে; আর তা ভাল ফলনে সহায়তা দিবে
@বিকল্প চারা@
বন্যা কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারনে ফসল নষ্ট হলে যেসব জায়গায় ধান নষ্ট হয়নি সেখান থেকে কুশি ভেঙ্গে নিয়ে অন্যত্র রোপন করা যায়। এতে ফলনের কোন ঘাটতি দেখা যায় না। প্রতিটি গোছা থেকে - টি কুশি রেখে বাকিগুলো আলাদা করে অন্য জায়গায় প্রতি গোছায় দুটি করে রোপন করলেও ভাল ফলন পাওয়া যায়।
@সার ব্যবস্থাপনা@
সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার ফসল, মাটি এবং পরিবেশের জন্য ভাল। এজন্য প্রথমে জানতে হবে কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ভিত্তিক মাটির উর্বরতা শ্রেণী ( সারণী ) এবং জেনে নিতে হবে জমি কোন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সে অনুযায়ী সারণী - মৌসুম-ভিত্তিক সারের সুষম মাত্রার সুপারিশ দেওয়া আছে।
ফসফেট, পটাশ, জিপসাম দস্তা সারের প্রভাব পরবর্তী ফসল পর্যন্ত থাকে। জন্য রবি ফসলে ফসফেট, পটাশ জিপসাম সার সারণী মোতাবেক ব্যবহার করলে দ্বিতীয় ফসলে উল্লিখিত সারগুলোরে মাত্রা অর্ধেক পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে। দস্তা সার একবার প্রয়োগ করলে তা পরের তিন ফসলে প্রয়োগ করতে হবে না। সারণী - জাত মৌসুম ভিত্তিক ইউরিয়া উপরি-প্রয়োগের সময় কিস্তি উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা জমিতে কম সময় থাকে তাই সার কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম কিস্তি জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে, ২য় কিস্তি ধানের গোছায় -৫টি কুশি অবস্থায় ৩য় কিস্তি কাইচথোড় আসার - পূর্বে দিতে হবে। যে সব জাতের জীবণকাল ১৫০ দিনের বেশি সেক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় ইউরিয়া প্রথম কিস্তি এবং পরে সমান তিন কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া উপরি-প্রয়োগের সময় মাটিতে অবশ্যই প্রচুর রস থাকতে হবে। সবচাইতে ভাল হয় যদি ক্ষেতে - সেন্টিমিটার পানি থাকে। ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে সাথে হাতে বা উইডার দিয়ে আগাছা পরিস্কার করা দরকার।
ইউরিয়া সার প্রয়োগের পরেও ধানগাছ যদি হলদে থাকে এবং বাড়বাড়তি কম হয় তাহলে গন্ধকের অভাব হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এরপর হেক্টরপ্রতি ৬০ কেজি বা বিঘাপ্রতি কেজি জিপসাম সার উপরি-প্রয়োগ করলে ফল পাওয়া যাবে।
যদি ধানগাছ মাঝেমধ্যে খাটো হয়ে বসে যায় এবং পুরাতন পাতায় মরচে পড়া বাদামী থেকে কমলা রঙ ধারণ করে এবং ধানের কুশি কম থাকে তখন ধরে নিতে হবে দস্তার অভাব হয়েছে। ক্ষেত্রে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এরপর হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি বা বিঘাপ্রতি কেজি ৩৫০ গ্রাম দস্তা সার উপরি-প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় হেক্টরপ্রতি .-. কেজি জিংক সালফেট ১২৫-১৫০ গ্যালন পরিস্কার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে দুকিস্তিতে যথাক্রমে রোপণের ১০-১৫ ৩০-৩৫ দিন পর ধানগাছের পাতার উপর ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এভাবে মূল্যবান দস্তা সারের অপচয় রোধ করা সম্ভব।
@জৈবিক আগাছা দমন পদ্ধতি@
ভক্ষণকারী জীব, পোকামাকড়,ছত্রাক পরজীবির মাধ্যমে পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে আগাছা দমন করাই হচ্ছে জৈবিক আগাছা দমন। স্বমন্বিত ধান-হাঁস এমনি একটি জৈবিক আগাছা দমন পদ্ধতি
) ধান-হাঁস চাষ পদ্ধতিতে জমি তৈরির সময় ২০-২৫ মণ গোবর সার মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। ধানের চারা রোপনের -১৪ দিন পর ২০-৩০ দিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা সারি করে লাগানো ধান ক্ষেতে অবমুক্ত করতে হয় এবং ধানে ফুল আসার আগে হাঁস ধান ক্ষেত থেকে উঠিয়ে নিতে হয়।
) হাঁসের বাচ্চা যাতে অন্যত্র না চলে যায় বা এদের সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হলেক্ষেতের চারদিকে জাল দিয়ে বেড়া দিলে ভাল হয়।
) হিসাব করে দেখা গেছে, পদ্ধতিতে প্রতি বিঘা জমিতে ৪০-৫০ টি হাঁসের বাচ্চার প্রয়োজন।
) হাঁস কার্যকরভাবে ধানের আগাছা খেয়ে সম্পূর্ণভাবে তা ধ্বংস করে এবং কীটপতঙ্গ খেয়ে তাদেরকে দমন করে। হাঁসের বিষ্ঠা জমিতে জৈব সারের কাজ করে।
) পদ্ধতিতে আগাছা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে ধান চাষের খরচ অনেক কমে যায়
পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষক একই সাথে ধান, হাঁস ডিম উৎপাদন করতে পা
@সেচ ব্যবস্থাপনা@
চারা রোপনের পর জমিতে পানি কম রাখতে হবে যাতে চারা তলিয়ে না যায়। ধানের জমিতে সব সময় গভীর পানি ধরে রাখার প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে একটি পূর্ণ মাত্রায় সেচ দেওয়ার পর পরবর্তী সেচ দেওয়ার আগে জমি তিন দিন শুকনো রাখলে ধানের ফলন তেমন কমবে না উপরন্তু পানির পরিমণি ২৫-৩০ ভাগ কম লাগবে। গভীর নলকূপ এলাকায় এই পদ্ধতিতে প্রায় ৪০ ভাগ জমির পরিমাণ একই পরিমাণ পানি দিয়ে চাষাবাদ বাড়ানো সম্ভব। পদ্ধতিতে আগাছার পরিমাণ বেশি হলে আগাছানাশক প্রয়োগ করা লাভজনক। ধান গাছে কাইচ থোড় আসার আগ পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে পানি সেচ দেওয়া যায়। তবে কাইচথোড় আসা শুরু করলে - সেন্টিমিটার পানি থাকলে ভাল হয়। এছাড়াও আমন ধান কাটার পর জমি পতিত না রেখে একটা বা দুটো চাষ দিয়ে ফেলে রাখলে বোরো মৌসুমে জমি তৈরিতে শতকরা ২০ ভাগ পানি কম লাগবে। কারণ পতিত জমিতে ফাটল ধরলে জমি তৈরির সময় ফাটল দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানির অপচয় হয়।
সার প্রয়োগের আগে জমি থেকে পানি কমিয়ে উপরি প্রয়োগ করতে হয় এবং - দিন পর আবার পানি দিলে সারের কার্য়কারিতা বৃদ্ধি পায়। জমিতে পানি ধরে রাখলে দানাদার কীটনাশকের গুণাগুণ বাড়ে। ধান পাকার সময় দানা শক্ত হওয়া শুরু হলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হয়। আউশ আমন মৌসুমে বৃষ্টির পানির সাহায্যে ভালভাবেই উফশী ধানের চাষ করা যায় বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে চাষ করতে হলে ক্ষেতে পানি ধরে রাখার জন্য আইল ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে বেঁধে দিতে হবে
@সেচের পানির অপচয় রোধ @
অপচয় রোধকল্পে পিভিসি অথবা প্লাস্টিক পাইপ ব্যবহার করা যায়। পদ্ধতিতে সেচ দিলে পানির অপচয় বন্ধের সাথে সাথে সেচ খরচও কমানো যায় কারণ অবস্থায় গভীর নলক্থ্থপ থেকে কাঁচা নালার সেচের তুলনায় শতকরা ৪২ ভাগ বেশী জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া অঙ্কুরিত বোনা ধানের চাষ করে পানির কার্যক্ষমতা শতকরা ২৯ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব
@সম্পূরক সেচ @
বৃষ্টি নির্ভর ধান চাষে খরা মোকাবেলা করার জন্য সম্পূরক সেচ দিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুবারে ১৫২ মিলিমিটার সম্পূরক সেচ দিয়ে শতকরা ৪০-৫০ ভাগ ফলন বাড়ানো যায়। বৃষ্টি-নির্ভর খরা কবলিত ধানের চেয়ে সম্পূরক সেচযুক্ত ধানের ফলন হেক্টরে প্রায় টন বেশী হয়। অগভীর কিংবা গভীর নলক্থপ ছাড়াও পুকুর পদ্ধতিতে খরা মোকাবেলা করা যায়। জন্য ধানি জমির আয়তনের শতকরা ভাগ জায়গায় মিটার গভীর করে পুকার কেটে নিতে হবে। ছোট পুকুরে যে পরিমাণ পানি ধরে রাখা যাবে তা দিয়ে খরার সময় রোপা আমন ধানকে রক্ষা করা যায়। উপরন্তু ছোট পুকুরে মাছ চাষও করা যায়।
@বোনা আউশ ধানের চাষ@
বোনা আউশ ধানের চাষাবাদ বৃষ্টি-নির্ভর। চৈত্রের শুরু থেকে বৈশাখের মাঝামাঝির মধ্যে বৃষ্টিপাতের সাথে তাল মিলিয়ে জমি তৈরি বীজ বপনের কাজ করতে হবে। বপন সময় তারতম্যের জন্য আউশ ধানের ফলনে তেমন পার্থক্য হয় না। কিন্তু দেরি করে ধান বপন করা হলে একই জমিতে রোপা আমন লাগাতে দেরি হয়ে যায়।ফলে আমন ধানের ফলন অনেক কমে যায়। ধানের ভাল ফলন পেতে হলে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে
@জমি তৈরী @
বীজ বপনের প্রায় - সপ্তাহ আগে থেকেই জমি তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। কারণ বোনা আউশে আগাছার উৎপাত রোপা ধানের তুলনায় অনেক বেশি। জন্য মৌসুম শুরুর আগেই শুকনো জমিতে - টি চাষ করে মই না দিয়ে জমি খোলা অবস্থায় রেখে দিতে হবে। এতে মাটি ভালভাবে শুকিয়ে যাবে ফলে অনেক আগাছা এবং পোকামাকড় রোগজীবাণু মরে যায়। তাছাড়া অবস্থায় বৃষ্টি হলে জমিতে আগাছার বীজ সহজেই গজাতে পারে। জমির আগাছা গজানো সম্পন্ন হলে আবারও চাষ মই দিয়ে (জো থাকা অবস্থায় ) মাটিতে ঝুর-ঝুরে করে তৈরি করতে হবে।
@বীজ বপন@
বোনা আউশের বীজ তিনভাবে বপন করা যায়-
) ছিটিয়েঃ এতে শতকরা ৮০ ভাগ অঙকুরোদগমসম্পন্ন ভাল বীজ হেক্টরপ্রতি ৭০-৮০ কেজি হারে বুনে দিতে হবে। এখান হাল্কাভাবে একটা চাষ দিয়ে মই দ্বারা মাটি সমান করতে হবে।
) সারি করেঃ এতে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে - সেমি গভীর করে সারি তৈরি করতে হবে এবং হেক্টরপ্রতি ৪৫-৫০ কেজি হারে বীজ বপন করতে হবে। এবার মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।
) ডিবলিং পদ্ধতিঃ এতে বাঁশ বা কাঠের দন্ড দিয়ে ২০ সেন্টিমিটার পর পর মাটিতে গর্ত করে গর্তপ্রতি /৩টি করে বীজ বপন করে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে। পদ্ধতিতে বীজের হার হলো হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন বীজ মাটির উপরে না থাকে। আবার বেশি গভীরে ধান বপন করা হলে অনেক ধান ঠিকমত গজাতে পারে না। জমিতে রস না থাকলে বীজ বপন না করাই ভাল। এতে কিছু সংখ্যক বীজ গজানোর পর মাটিতে রসের অভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চারা গজানোর এক সপ্তাহ পর আচড়া দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। এতে চারার ঘনত্ব ঠিক থাকে, গাছের বাড়বাড়তিও ভাল হয়এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়
@সার প্রয়োগ@
জমি তৈরির শেষ চাষের সময় শতাংশ প্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি ৩০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টিবহুল বোনা আউশ এলাকায় ইউরিয়া দুকিস্তিতে প্রয়োগ করা ভাল। প্রথম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং দ্বিতীয় কিস্তি ধান বপনের ৩০-৪০ দিন পর। জমিতে গন্ধক দস্তার অভাব থাকলে শতাংশ প্রতি ১৩৫ গ্রাম জিপসাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে।
@আগাছাদমন @
বোনা আউশ ধানে আগাছার খুব উপদ্রব হয়। সময়মতো আগাছা দমন না করলে শতকরা ৮০-১০০ ভাগ ফলন কমে যায়। আগাছানাশক ব্যবহারের মাধ্যমে বোনা আউশ ধানে আগাছা দমন করা অনেকটা সহজ। এক্ষেত্রে রনস্টার বা করস্টার হেক্টর প্রতি লিটার হারে জমিতে ধান বফনের - দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হয় একং ৩০-৩৫ দিন পর একবার হাত নিড়ানি দিলে আগাছা দমন হয়ে যায়। এতে খরচ দুবার হাত নিড়ানির চেয়ে কম পড়ে।
@পোকা ব্যবস্থাপনা@
ব্রি পর্যন্ত ধানের ১৭৫ টি প্রজাতির ক্ষতিকর পোকা সনাক্ত করেছে।এদের মধ্যে ২০-৩৩ টি প্রজাতিকে ধানের প্রধান ক্ষতিকর পোকা হিসেবে গণ্য করা হয়। পোকার ক্ষতির মাত্রা পোকার প্রজাতি, পোকার সংখ্যা, এলাকার পরিবেশ, জমি বা তার আশেপাশের অবস্থা, ধানের জাত, ধানগাছের বয়স, উপকারী পরভোজী পরজীবি পোকামাকড়ের সংখ্যা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। ধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা দেখা গেলে এর সাথে বন্ধু পোকা যেমন মাকড়সা, লেডি-বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল সহ অনেক পরভোজী পরজীবি পোকামাকড় কেমন আছে তা দেখতে হবে এবং শুধু প্রয়োজনে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দমন করলে বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মৌসুমে যথাক্রমে শতকরা ১৩, ২৪ এবং ১৮ ভাগ ফলন বেশি হতে পারে। প্রধান ক্ষতিকর পোকা তাদের দমন ব্যবস্থাপনা নিচে আলোচনা করা হলো
মাজরা পোকা (Stem borer)
মাজরা পোকার কীড়া গাছের কুশি শিষের ক্ষতি করে। ফলে কুশি অবস্থায় আক্রমণ হলে মরা ডিগ ফুল আসার পর সাদাশিষ দৃষ্টি গোচর হয়। প্রায় সব অঞ্চলে সব ঋতুতেই এটি প্রধান ক্ষতিকারক পোকা হিসেবে পরিচিত। ব্যবস্থাপনার জন্য-
মাজরা পোকা
) আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ সংগ্রহ করে দমন করুন।
) মাজরা পোকার ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করুন।
) ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্য নিন।
) রোপা আমন ধান কাটার পর ক্ষেতে চাষ দিয়ে নাড়াগুলো মাটিতে মিশিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলুন অথবা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করুন।
) পরজীবি পোকা শতকরা ৫০-৬০ ভাগ মাজরা পোকার ডিম নষ্ট করে থাকে, সুতরাং যথাসম্ভব কীটনাশক পরিহার করুন।
) জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা ভাগ সাদা শিষ দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
নলিমাছি বা গলমাছি (Gallmidge)
মাছির কীড়া ধানগাছের মাঝখানে বাড়ন্ত কুশিতে আক্রমণ করে। ফলে কুশি পেঁয়াজ পাতার মতো হয়ে যায়। অবস্থায় কুশিতে আর শিষ হয় না। রাজশাহী, দিনাজপুর রংপুর এলাকায় পোকার আক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন।
) আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণবয়স্ক পোকা দমন করুন।
) জমিতে শতকরা ভাগ পেঁয়াজ পাতার মতো লক্ষণ দেখা গেলে কীটনাশক ব্যবহার করুন (সারণী ) ক্ষেত্রে দানাদার কীটনাশক তরল কীটনাশকের চেয়ে বেশি কার্যকর
পামরি পোকা (Rice hispa)
পূর্ণবয়স্ক পামরি পোকা কীড়া উভয়ই ধানগাছের ক্ষতি করে। পূর্ণৃবয়স্ক পোকা পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খায়। কীড়া পাতার ভেতরে সুড়ংগ করে সবুজ অংশ খায়। এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা সাদা দেখায়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) সম্মিলিতভাবে হাতজাল বা মশারির কাপড় দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলুন। সকাল বেলা পোকা ধরার উত্তম সময়।
) ধান ক্ষেতের বাইরে পামরি পোকা থাকলে সেখান থেকেও পোকা ধরে মারতে হবে।
) গাছের পাতায় ডিম বা - টি কীড়া থাকলে এবং গাছ সর্বোচ্চ কুশি অবস্থার পূর্ব পর্যায়ে থাকলে পাতার গোড়ার - সেন্টিমিটার উপর থেকে কেটে নষ্ট করে পামরি পোকা দমন করা যায়।
) জমিতে শতকরা ৩৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অথবা প্রতি গোছায় টি পূর্ণবয়স্ক পোকা অথবা প্রতি কুশিতে টি কীড়া থাকলে কীটনাশক ব্যবহার করুন
পাতা মোড়ানো পোকা (Leaf roller)
পাতা মোড়ানো পোকার কীড়া গাছের পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার ভিতরের সবুজ অংশ খায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতা পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ সংগ্রহ করে দমন করুন।
) ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্য নিন।
) পরজীবি পোকা পাতামোড়ানো পোকার শতকরা ৩০-৪০ ভাগকীড়া ধ্বংশ করতে পারে, তাই পরজীবি পোকার সংরক্ষণ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কীটনাশক ব্যবহার যথাসম্ভব পরিহার করুন।
) গাছে থোড় আসার সময় বা ঠিক তার আগে যদি শতকরা ২৫ ভাগ পাতা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
চুঙ্গি পোকা (Rice caseworm)
চুঙ্গি পোকার কীড়া পাতার সবুজ অংশ এমনভাবে খায় যে শুধু পাতার উপরের পর্দাটা বাকী থাকে। কীড়া বড় হলে পাতার উপরের অংশ কেটে ছোট ছোট চুঙ্গি তৈরি করে ভেতরে থাকে। আক্রান্ত ক্ষেতে গাছের পাতা সাদা দেখায় এবং পাতার উপরের অংশ কাটা থাকে। দিনের বেলায় চুঙ্গিগুলো পানিতে ভাসতে থাকে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ সংগ্রহ করে দমন করুন।
) পানি থেকে হাতজাল দিয়ে চুঙ্গিসহ কীড়া সংগ্রহ করে ধ্বংশ করুন।
) আক্রান্ত জমির পানি সরিয়ে দিন এবং মাটি শুকিয়ে নিন।
) জমিতে শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
লেদা পোকা (Swarming caterpillar)
পোকার কীড়া পাতার পাশ থেকে কেটে এমনভাবে খায় কেবল ধানগাছের কান্ড অবশিষ্ট থাকে। সাধারণত শুকনো জমিতে পোকার আক্রমণের আশংকা বেশি থাকে। কারণ এদের জীবণচক্রের পুত্তলী অবস্থার জন্য শুকনো জমির দরকার হয়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) রোপা আমন ধান কাটার পর ক্ষেতে চাষ দিয়ে নাড়াগুলো মাটিতে মিশিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলুন অথবা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করুন।
) আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ সংগ্রহ করে দমন করুন।
) ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্য নিন।
) সম্ভব হলে / দিনের জন্য ক্ষেতে সেন্টিমিটার পানি জমিয়ে রাখুন। এতে পুত্তলীগুলো মরে যাবে।
) জমিতে শতকরা ২৫ ভাগ পাতা- ক্ষতিগ্রস্থ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
ঘাসফড়িং (Grasshoppers)
ঘাসফড়িং বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় ধানগাছের ক্ষতি করে। এরা ধানের পাতার পাশ থেকে শিরা পর্যন্ত খায়। জমিতে অধিক সংখ্যায় আক্রমণ করলে এদেরকে পঙ্গপাল বলা হয়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্য নিন।
) জমিতে শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
লম্বাশুঁড় উরচুঙ্গা (Long-horned cricket)
পূর্ণবয়স্ক পোকা বাচ্চা উভয় অবস্থায় ধানের পাতা এমনভাবে খায় যে পাতার কিনারা শিরা শুধু বাকি থাকে। ক্ষতিগ্রস্থ পাতা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্য নিন।
) আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক পোকা দমন করুন।
) জমিতে শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
সবুজ পাতা ফড়িং (Green leafhopper)
পূর্ণবয়স্ক পোকা বাচ্চা উভয় অবস্থায় সবুজ পাতা ফড়িং ধানের পাতার রস শুষে খায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় গাছ খাটো হয়ে যায়। পোকা টুংরো ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক পোকা দমন করুন।
) হাতজালের প্রতি টানে যদি গড়ে একটি সবুজ পতাফড়িং পাওয়া যায় এবং আশেপাশে টুংরো রোগাক্রান্ত ধানগাছ থাকে, তাহলে বীজতলায় বা জমিতে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
বাদামি গাছফড়িং (Brown planthopper)
পূর্ণবয়স্ক পোকা বাচ্চা উভয় অবস্থায় বদামি গাছফড়িং ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। ফলে গাছ নিস্তেজ হয়ে যায় এবং ফড়িংপোড়া বা বাজপোড়া (হপার বার্ন) অবস্থার সৃষ্টি করে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) নিয়মিতভাবে গাছের গোড়া পর্যবেক্ষণ করুন।
) জমিতে পোকার সংখ্যা বাড়ার আশংকা দেখা দিলে জমে থাকা পানি সরিয়ে জমি কয়েকদিন শুকিয়ে নিন।
) উপদ্রুত এলাকায় ধানের চারা ঘন করে না লাগিয়ে ২০ x ২৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাগান।
) অধিকাংশ গাছে ৪টি গর্ভবতী বা ১০টি বাচ্চা পোকা দেখা দিলে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী ) কীটনাশক অবশ্যই গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে
সাদা-পিঠ গাছফড়িং (White-backed planthopper)
পূর্ণবয়স্ক পোকা বাচ্চা উভয় অবস্থায় সাদা-পিঠ গাছফড়িং ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। সংখ্যা বেশী হলে গাছের উপরের অংশেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। পোকার আক্রমণেও ক্ষেতে ফড়িংপোড়া বা বাজপোড়া (হপার বার্ন) অবস্থার সৃষ্টি করে। ব্যবস্থাপনার জন্য বাদামি গাছফড়িংয়ের মতো একই ব্যবস্থা নিন
গান্ধি পোকা (Rice bug)
পূর্ণবয়স্ক পোকা বাচ্চা উভয় অবস্থায় ধানের দানা আক্রমণ করে। ধানের দানায় দুধ সৃষ্টির সময় আক্রমণ হলে ধান চিটা হয়। বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক গান্ধি পোকার গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) আলোক ফাঁদের সাহায্য নিন।
) প্রতি গোছায় -৩টি গান্ধি পোকা দেখা গেলে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী ) কীটনাশক বিকেল বেলায় প্রয়োগ করতে হবে।
@রোগ ব্যবস্থাপনা@
ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ধান কোন কোন রোগবালাই প্রতিরোধ করতে পারে তা সারণী - দেখানো হয়েছে। উফশী ধানগাছে প্রধান প্রধান যে সমস্ত রোগ হতে পারে তাদের বিবরণ নিচে দেয়া হলো
টুংরো
টুংরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সবুজ পাতাফড়িং নামক পোকা রোগের বাহক। চারা অবস্থা থেকে গাছে ফুল আসা পর্যন্ত যে কোন অবস্থায় রোগ দেখা দিতে পারে। যত কম বয়সে রোগের আক্রমণ হয় ক্ষতির পরিমাণও তত বেশি হয়। প্রথমে কচি পাতায় লম্বালম্বি শিরা বরাবর পর্যায়ক্রমে হালকা সবুজ হালকা হলদে রেখা দেখা যায়। পরে ক্রমান্বয়ে থেকে ১০ দিনের মধ্যে সমস্ত পাতাটা উপর দিক থেকে গাঢ় হলদে রঙের হয় এবং আক্রান্ত পাতা একটু মুচড়ে যায়। গাছের বাড়-বাড়তি কুশি গজানো কমে যায়। ফলে আক্রান্ত গাছ সুস্থ গাছের তুলনায় খাটো দেখায়। প্রথম দিকে বিক্ষিপ্তভাবে দুএকটি গোছায় রোগটি দেখা যায় এবং পরে আশেপাশের গোছায় ছড়িয়ে পড়ে।
ধানগাছ হলদে হলেই টুংরো হয়েছে বলে মনে করা সঙ্গত নয়। কারণ ক্ষেতে নাইট্রোজেন অথবা সালফারএর অভাবজনিত অপুষ্টি, পচা পানি জমে থাকা, পানির অভাব, শীতের প্রকোপ, লোহার আধিক্য লবণাক্ততার কারণেও ধানগাছ হলদে হয়ে যায়। তবে সব ক্ষেত্রে জমির শতকরা ১০০ ভাগ গাছেই সমভাবে লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিন্তু টুংরো হলে বিক্ষিপ্তভাবে এর লক্ষণ দেখা যায়। রোগের ব্যবস্থাপনা নিম্নরূপ-
) রোগের উৎস, যেমন আড়ালী ঘাস, বাওয়া ধান এবং রোগাক্রান্ত গাছ দেখামাত্রই তুলে ধ্বংস করুন।
) আলোক-ফাঁদ ব্যবহার করে বাহক পোকা সবুজ পাতাফড়িং মেরে ফেলুন।
) হাতজালের প্রতি টানে গড়ে একটি সবুজ পতাফড়িং বা ক্ষেতে টুংরো রোগাক্রান্ত ধানগাছ দেখা গেলে বীজতলায় বা জমিতে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করুন (সারণী )
পাতা পোড়া
এটি একটি ব্যক্টেরিয়াজনিত রোগ। চারা অবস্থায় পাতাপোড়া রোগ হলে সম্পূর্ণ গোছা পচে যায় ঢলে পড়ে। রোগের অবস্থাকে কৃসেক বলে। রোগে আক্রান্ত কান্ড ছিঁড়ে চাপ দিলে পুঁজের মতো আঁঠালো দুর্গন্ধযুক্ত রস বের হয়। তাছাড়া কখনও কখনও রোগাক্রান্ত গাছের উপর দিকের কচিপাতা ফ্যাকাশে হলদে রঙ ধারণ করে আস্তে আস্তে মরে যায়।
বয়স্ক গাছে থোড় অবস্থা থেকে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমে পাতার অগ্রভাগ বা কিনারা থেকে লক্ষণ শুরু হয়। আক্রান্ত অংশ থেকে পাতার দুই বা এক ধার থেকে পাতাটা শুকনো খড়ের রঙ ধারণ করে এবং ক্রমশ সম্পূর্ণ পাতাটাই মরে শুকিয়ে যায়। পোকার আক্রমণ বা বাতাসে পাতায় পাতায় ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট ক্ষত দিয়ে রোগটির জীবাণু পাতার ভিতরে ডুকে পড়ে। অনকুল অবস্থায় - দিনের মধ্যেই রোগ সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করুন এবং ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করুন।
) ঝড়-বৃষ্টি এবং রোগ দেখা দেয়ার পর ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগ বন্ধ রাখুন।
) কৃসেক হলে আক্রান্ত জমির পানি শুকিয়ে -১০ দিন পর আবার সেচ দিন।
) রোগাক্রান্ত জমির ফসল কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে ফেলুন
উফরা
এটি ধানের কৃমিজনিত রোগ। এক প্রকার ক্ষুদ্র কৃমি ধানগাছের কচি পাতা খোলের সংযোগস্থলে আক্রমণ করে। কৃমি গাছ থেকে রস শোষণ করায় প্রথমে পাতার গোড়ায় সাদা ছিটে-ফোঁটা দাগ দেখা যায়। সাদা দাগ ক্রমে বাদামি রঙের হয়ে যায় এবং পরে পুরো আগাটাই শুকিয়ে মরে যায়। আক্রমণের প্রকোপ বেশি হলে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। থোড় অবস্থায় আক্রমণ করলে থোড়ের মধ্যে শিষ মোচড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। ফলে কোন শিষ বের হতে পারে না। উফরা রোগের কৃমি পরিত্যক্ত নাড়া, খড়কুটো, ঘাস এমনকি মাটিতে কুন্ডলী পাকানো অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) রোগাক্রান্ত জমির ফসল কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে ফেলুন।
) সম্ভব হলে বৃষ্টির পর জমি চাষ দিয়ে ১৫-২০ দিন ফেলে রাখুন।
) আক্রান্ত জমিতে বীজতলা করবেন না।
) রোগ দেখা দিলে হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি ফুরাডান ৫জি অথবা কিউরেটার ৫জি প্রয়োগ করুন।
) ধানের পর অন্যান্য ফসল চাষ করুন
ব্লাষ্ট
ব্লাষ্ট একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি ধানগাছের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত যে কোন সময়ে হতে পারে। রোগে ধানগাছের পাতা, গিঁট শিষের গোড়া আক্রান্ত হয়। তাই রোগ তিনটি নামে পরিচিত, যথা- পাতা ব্লাষ্ট, গিঁট ব্লাষ্ট শিষ ব্লাষ্ট। পাতা ব্লাষ্টে প্রথমে পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতি দাগ হয়। আস্তে আস্তে দাগ বড় হয়ে দুপ্রান্ত লম্বা হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। দাগের চার ধারে গাঢ় বাদামি মাঝের অংশ সাদা-ছাই বর্ণ ধারণ করে। অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে গিয়ে পুরো পাতা মরে যায়। রোগের কারণে জমির সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে রোগ বোরো মৌসুমে বেশি হয়। গিঁট ব্লাষ্ট এবং শিষ ব্লাষ্ট হলে গিঁট শিষ ভেঙ্গে পড়ে এবং ধান চিটা হয়ে যায়।
রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম সকালে পাতায় শিশির জমে থাকা পরিবেশে রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বেলে জাতীয় মাটি এবং বেশি ইউরিয়া সার প্রয়োগ রোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) জমিতে পানি ধরে রাখুন।
) রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
) সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করুন। আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগ বন্ধ রাখুন।
) প্রতি হেক্টরে ৮০০ মিলিলিটার হিনোসান অথবা . কেজি বেনলেট বা হোমাই অথবা টপসিন এম প্রয়োগ করুন
খোলপোড়া
খোলপোড়া একটি ছত্রাকজনিত রোগ। ধান গাছের কুশি গজানোর সময় হতে রোগটি দেখা যায়। পানিতে ভাসমান ছক্রাক গুটিকা দিয়ে প্রাথমিক আক্রমণ সংঘটিত হয়। প্রথমে খোলে গোলাকার লম্বাটেধূসর রঙের জলছাপের মতো দাগ পড়ে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হয়ে উপরের দিকে সমস্ত খোলে পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্র্রান্ত খোল দেখতে অনেকটা গোখরো সাপের চামড়ার দাগের মতো। গরম আদ্র আবহওয়ায় রোগটি বেশি হয়। তা ছাড়া বেশি মাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহার ঘন করে চারা রোপন রোগের বিস্তারে সহায়তা করে। আমাদের দেশে আউশ আমন মৌসুমে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) আক্রান্ত জমির পানি শুকিয়ে -১০ দিন পর আবার সেচ দিন।
) সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করুন।
) যে সব এলাকায় প্রতি বছর রোগ হয় সেখানে খাটো গাছের জাতের পরিবর্তে মোটামুটি লম্বা জাতের ধান চাষ করুন।
) রোগাক্রান্ত জমির ফসল কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে ফেলুন।
) জমিতে শেষ মই দেয়ার পর ময়লা আবর্জনা যেখানে যেখানে পানিতে ভাসতে দেখা যায় সেগুলো চট বা কাপড় দিয়ে টেনে আইলের উপর তুলে দিলে প্রায় ৫০% আক্রমণ কমানো সম্ভব।
) রোগের লক্ষণ দেখামাত্র ফলিকুর বা কয়ান্টাফ প্রয়োগ করুন
বাকানি
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। ছত্রাক জিবেরিলিন হরমোন নিঃসরণ করে। হরমোনের কারণে আক্রান্ত ধানগাছ দ্রুত বেড়ে যায়। ফলে আক্রান্ত চারা বা কুশি লিকলিকে হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আক্রান্ত গাছ মরে যায়। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা।
) সুস্থ গাছ থেকে কুশি আলাদা করে স্থানে রোপন করা
) রোগ বীজবাহিত। তাই বীজ শোধন করতে পারলে ভালো হয়। জন্য ব্যাভিষ্টিন/নোইন/হেডাজিম/টপসিল প্লাস/ সানফানেট নামক ছত্রকনাশকের যে কোন একটির তিন গ্রাম এক লিটার পানিতে মিশিয়ে এক কেজি বীজ সারা রাত ভিজিয়ে রাখলে শোধন হয়।
@ইঁদুর দমন@
বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরের মধ্যে কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, নরম পশমযুক্ত মাঠের ইঁদুর ছোট লেজযুক্ত ইঁদুর ধানের ক্ষতি করে। এদের মধ্যে প্রথম দুটি প্রজাতির প্রাদুর্ভাব বেশি। ইঁদুর ধানগাছের কুশি কেটে দেয়। সাধারণত অতি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হয়। এরা বর্ষাকালে সাঁতার কেটে জলী আমন ধানের গাছ কেটে বাসা বানায়। ধান পাকলে ধানের ছড়া কেটে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ করে জমা রাখে। ব্যবস্থাপনার জন্য-
) জমির আইল চিকন রাখতে হবে।
) ধান রোপণের সময় রোপণের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে ধানের জমি আশপাশের এলাকার ইঁদুর দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
) যে সমস্ত ফাঁদে ইঁদুর জীবন্ত ধরা পড়ে, এমন ফাঁদ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করুন।
) ইঁদুর দমনের জন্য তাৎক্ষণিক ক্রিয়াশীল বিষটোপ, যেমন জিংক ফসফাইড অথবা বিলম্বে ক্রিয়াশীল বিষটোপ, যেমন ব্রডিফেকাম বা ব্রমাডিওলন অথবা ফ্লোকোমাফেন দিয়ে ইঁদুর দমন করা হয়।
ইঁদুরের গর্তে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বড়ি দিয়ে গর্তের মুখ ভাল করে বন্ধ করে দিলে ইঁদুর মরা যায়। জন্য নতুন গর্তে গ্যাস বড়ি দিয়ে আশপাশের সকল গর্তের/নালার মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
@ফসল কাটা, মাড়াই সংরক্ষণ@
অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শিষ ভেঙ্গে যায়, শিষকাটা লেদাপোকা এবং পাখির আক্রমণ হতে পারে। তাই শিষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত স্বচ্ছ এবং শিষের নিচের অংশে শতকরা ২০ ভাগ ধানের চাল আংশিক শক্ত। স্বচ্ছ হলে ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে বুঝতে হবে। সময়ে ফষল কেটে মাঠেই বা উঠানে এনে মাড়াই করতে হবে। মাড়াই করার পর অন্তত - দিন রোদে শুকিয়ে ভালভাবে ঝেড়ে গোলাজাত
@ধানের বীজ সংরক্ষণ@
রোগ পোকামাকড় মুক্ত গাছ থেকে বীজ বাছাই করে কেটে এনে মাড়াই করার পর অন্তত - দিন রোদে শুকিয়ে বীজের আদ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। পুষ্ট ধান বাছাই করে ঠান্ডা অবস্থায় বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি মণ ধানের সাথে ১২০ গ্রাম নিম বা নিশিন্দা অথবা বিষকাটালীর পাতার গুঁড়া মিশিয়ে সংরক্ষণ করলে পোকার আক্র

No comments:

Post a Comment