উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

প্যাশন



@পরিচিতি@
বাংলা নাম প্যাশন ফল
ইংরেজী নাম Passion fruit
বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora edulis
পরিবার Passifloraceae
বাণিজ্যিক প্রজাতির প্যাশন ফলের উৎপত্তি হয়েছে দক্ষিণ আমিরিকাররেইন ফরেস্টএর আমাজান অঞ্চলে বিশেষ করে ব্রাজিল এবং তদসংলগ্ন প্যারাগুয়ে উত্তর আর্জেন্টিনাতে, প্যাশন ফল একটি বহুবর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। প্যাশন ফল দুই ধরনের। পার্পল প্যাশন ফল এবং হলুদ প্যাশন ফল প্যাশন ফল হতে প্রাকৃতিক মিউটেশনের মাধ্যমে হলুদ প্যাশন ফল উৎপত্তি হয়েছে যা আকারে গুনাগুনে মাতৃত্ব পার্পল প্যাশন ফল হতে উন্নত। পাঁচটি পাপড়ি সমৃদ্ধ প্যাশন ফলের ফুল অত্যান্ত আকর্ষনীয়, মনোমুগ্ধকর, দৃষ্টিনন্দন সুগন্ধিযুক্ত। দেখতে অনেকটা ঝুমকোলতার ফুলের মতো। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থিত বিস্তৃর্ন পাহাড়ী এলাকা (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি বান্দরবন) যা অসমতল, বন্ধুর ভূপ্রকৃতির বিশিষ্ট। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে অঞ্চল মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য তেমন উপযোগী নয়। তবে বর্তমানে পাহাড়ি এলাকার উপযোগিতা যাচাই করে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় হলুদ প্যাশন ফলের চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি একটি অত্যান্ত লাভজনক ফসল হিসাবে পরিচিতিও লাভ করেছে। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সব জায়গায়ই ফলের চাষ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তবে ফলের চাষাবাদ এখনও মানুষের কানে ঠিকমত পৌঁছায়নি
@ব্যবহার@
ট্রপিক্যাল সাব-ট্রপিক্যাল দেশে ফল অত্যান্ত জনপ্রিয়। প্যাশন ফলের বীজকে আবৃত করে থাকা হলুদ, জিলাটিনাস, সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানিতে দ্রবীভূত করে খুবই উপাদেয় শরবত প্রস্তুত করা যায়। এটিকে অন্যান্য জুসের সাথেও মিশ্রিত করে খাওয়া যায়। পাল্পকে প্রক্রিয়াজাত করণ করে আইসক্রীম, জুস, স্কোয়াশ, জ্যাম জেলী তৈরি করা যায় যা আর্ন্তজাতিকভাবে সমাদৃত এবং ফ্রেশ ফল হিসাবেও খাওয়া যায়। বীজ খোসা হতে পেকটিন উচ্চ মাত্রায় লিনোলিক এসিড সমৃদ্ধ তেল আহরণ করা সম্ভব। ফলের আকার দৈর্ঘ্যে - সে.মি. পাল্প জুসের রং হলুদ এবং টি.এস.এস. ১০-১৪% প্রতি ১০০ গ্রাম হলুদ প্যাশন ফলে পানি ৮৪.%, প্রোটিন . গ্রাম, ফ্যাট . গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৩. গ্রাম, এ্যাশ . গ্রাম, ক্যালসিয়াম . গ্রাম, ফসফরাস ২৪. মি.গ্রা., আয়রন . মি.গ্রা., ভিটামিন- ২৪১০ (আই. ইউ), রিবোফোবিন . মি.গ্রা., নিয়াসিন . মি.গ্রা., ভিটামিন ২০. মি.গ্রা, খাদ্যশক্তি ৩৮৫. কিলোজুল
@জাত@
বারি প্যাশন ফল- এর আকার . সেমি x . সেমি। ফসলের গড় ওজন ৬৮ গ্রাম এবং ৩০ গ্রাম জুস আহরন করা যায়। জুসের রং হলুদ এবং টিএসএস (%) মান ১৪। জাতটি ফিউজেরিয়াম উইল্ট এবং নেমাটোড প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন
@মাটি জলবায়ু@
প্যাশন ফল চাষের জন্য অত্যাধিক তাপ ঠান্ডামুক্ত মৃদু জলবায়ু প্রয়োজন। উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ১৮-৩২ ডিগ্রি সে. .-. pH যুক্ত উর্বর, সুনিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি উত্তম। তবে ফল জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। মাটিতে উঁচু বেড তৈরি করে চাষ করা ভালো। তবে . pH এর নীচে হলে চুন প্রয়োগ করে মাটির উপযুক্ততা/নিরপেক্ষতা তৈরি করে ফলের চাষ করা ভাল।
@বংশ বিস্তার@
প্যাশন ফলের বংশ বিস্তার তিনভাবে করা যায়ঃ
) বীজ দ্বারা
ফলের পাল্প থেকে বীজ আলাদা করে পানি দ্বারা ধৌত করে ছায়ায় শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। বীজ সরাসরি বীজতলায় অথবা পলিব্যাগে বপন করে চারা তৈরি করা যায়। বীজতলায় -১২ সে.মি. দূরে - সে.মি গভীরে বীজ বপন করে খড় দ্বারা মালচ দিতে হয়। - সপ্তাহের মধ্যে বীজ অংঙ্কুরিত হয়। চারা -৪টি পাতা সম্পন্ন হলে বীজ তলা থেকে তা তুলে পলিব্যাগে স্থানান্তর করা যায়। চারার বয়স - মাস হলে চারা ৩০-৪০ সে.মি. লম্বা হলে রোপনের উপযু্ক্ত হয়। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, সংরক্ষিত বীজের সজীবতা থাকে মাত্র - সপ্তাহ
) কাটিং দ্বারা
-৪টি পর্ব বিশিষ্ট শাখা কেটে বংশ বিস্তার করা যায়। কাটিং করার সময় শাখার নীচের পর্ব হতে - সে.মি. নীচে তেরেসা করে কাট দিয়ে নীচের পর্বসহ বীজ তলার মাটিতে ৪৫ ডিগ্রি কোন করে উত্তর-দক্ষিণ দিকে মুখ করে মাটিতে রোপন করতে হবে। কাটিং রোপনের সময় উপরের অংশে -২টি পাতা রেখে বাকী পাতা ফেলে দিতে হবে। ৩৫-৫০ দিন বয়সের মধ্যে কাটিং এর সফলতা লক্ষ্য করা যায়। - মাস বয়সের চারা রোপনের উপযুক্ত হয়। কাটিং করার উপযুক্ত সময় মে-আগষ্ট। কাটিং এর চারায় মাতৃ গুনাগুন বজায় রাখে
) গ্রাফটিং
বর্তমানে প্যাশন ফলে কেফট গ্রাফটিং এর মাধ্যমেও বংশ বিস্তার করা যায়। তবে কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা সহজ। কাটিং গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করলে মাতৃ গুনাগুন বজায় থাকে। তবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও প্যাশন ফলের বংশ বিস্তার করা সম্ভব।
@চারা রোপন ব্যবস্থাপনা@
চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে মে-আগষ্ট। - মি. x .-. মি. দূরত্বে ফলের চারা রোপন করা হয়। রোপনের জন্য ৫০ সেমি. x ৫০ সেমি. x ৫০ সেমি. আকারের গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে ২০-২৫ কেজি পঁচা গোবর, ২০০-৩০০ ইউরিয়া টি.এস.পি এবং ৪০০-৫০০ গ্রাম এম.পি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপনের পর মাটিতে উপযুক্ত আদ্রতা রাখার জন্য সেচ দিতে হবে। তবে ভাল ফলনের জন্য ফুল আসা ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আদ্রতা থাকা দরকার। জন্য সেচ দেয়ার প্রয়োজন এবং খরা মৌসুমেও সেচ প্রদান করা প্রয়োজন। তবে বর্ষাকালে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমতে না পারে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকা ভাল।
@আন্তঃপরিচর্যা@
প্যাশন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য মাচা তৈরি করা হয়ে থাকে। চারার গোড়ায় খুঁটি পুঁতে গাছ উঠিয়ে দেওয়া হয়। গাছ মাটির উপর উঠলে গাছের অগ্রভাগ কেটে দেওয়া হয় যাতে শাখা বের হয় এবং সমস্ত মাচা ছড়িয়ে পড়ে। মাটি থেকে মাচা পর্যন্ত গাছের কান্ডে কোন শাখা বের হলে তা কেটে দেয়া হয়। পুরাতন মরা ডাল কেটে দেয়া ভাল। এতে রোগ বালাই কম হবে। বাড়ির আশে পাশে মাচা তৈরি করে বা বড় ফলের গাছে বা সবজির বেড়ায় উঠিয়ে দেয়া যায়। গাছের গোড়ায় সব সময় আগাছা দমন করতে হবে। তবে প্যাশন ফলের বাগানে ইদুরের উপদ্রব বেশী দেখা দিলে তা দমন করতে হবে।
@ফলের পরিপক্কতা@
প্যাশন ফলে বছরে দুইবার ফল পাওয়া যায়। প্রথমবার মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং জুন-আগষ্ট মাসে ফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার জুলাই-আগষ্ট মাসে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ফল পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর ১৪-২০ মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়।
প্যাশন ফুল পর-পরাগী, ফুল দুপুরে উন্মুক্ত হয় এবং সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের মাছি, মৌমাছি, বোলতা ইত্যাদি দ্বারা পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। তবে হাত দিয়ে পরাগায়ন করা যায়। এতে সফলতার হার অনেক বেশি। ফুল থেকে কুঁড়ি হতে ১৭-৪৬ দিন সময় নেয় তবে তবে ফুল থেকে ফল পরিপক্ক হতে সময় লাগে ৬০-৯০ দিন।
@রোগ পোকা-মাকড়@
রোগ
প্যাশন ফলের গাছ উইডনেস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। রোগে আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় আকারে ছোট হয়। এছাড়া সেপটোরিয়া স্পট, ব্রাউন স্পট, ফাইটোপথোরা ব্লাইট, অলটারনারিয়া স্পট গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়। ম্যানকোজেব গ্রুপের যেকোন ছত্রাক নাশক দিয়ে রোগ দমিয়ে রাখা যায়
পোকা মাকড়
কচি ফলে মাছিপোকা ছিদ্র করে ডিম পাড়ে, এতে ফল কুঁচকে যায় এবং ফল ডিফরম হয়ে যায় এবং অপরিপক্ক অবস্থায় ঝরে পড়ে।
এছাড়াও মিলিবাগ মাইট দ্বারাও গাছ আক্রান্ত হতে পারে। মার্বেল আকৃতি হলে ম্যালাথিয়ন/ডেসিস/সুমিথিয়ন (প্রতি লিটার পানিতে মি.লি) ১০-১৫ দিন পর পর - বার স্প্রে করে পোকা সহজেই দমন করা যায়।
@ফলন@
১৮-২০ মাস বয়সের একটি গাছে ১০০-২০০টি ফল পাওয়া যায় অর্থাৎ গাছ প্রতি -১০ কেজি।
@তথ্যসূত্র@
মাসিক আমার খামার আমার জীবন (নভেম্বর,২০০৯)
লেখকঃ প্রফেসর . মোঃ আবদুর রহিম এবং মোঃ সামছুল আলম মিঠু
উদ্যানতত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

No comments:

Post a Comment