@ পরিচিতি @
বাংলা নামঃ পানি কচু
ইরেজী নামঃ Taro
বৈজ্ঞানিক নামঃ Colocasia esculenta
পরিবারঃ Araceae
কচু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি জাতীয় ফসল। বাংলাদেশ থেকে কচুরমূখী ও কচুর লতি এখন সবজি হিসাবে বিদেশে ও রপ্তানী হচ্ছে। যে সব কচু দাড়ানো পানিতে চাষ করা যায় সেগুলোকে পানি কচু বলে। বাংলাদেশের পানি কচুর উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে লতিরাজ কচু অন্যতম। নাম থেকেই ধারণা করা যায় যে এ কচুতে লতির (স্টোলন) প্রাধান্য বেশি হয়। লাগানোর ৩ মাস পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত প্রচুর লতি আহরণ করা যায়। সাধারণত ১০ দিন পর পর প্রতি বারে প্রতি গাছ থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম লতি সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে এ জাতের কচু জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক চাষ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এর চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
@ জলবায়ু ও মাটি @
কচু উষ্ণমন্ডলীয় ফসল। মাঝারী নিচু থেকে মাঝারী উঁচু জমি, যেখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায় এবং অতিবৃষ্টিতে পানি বের করে দেয়া যায়-এমন জমি লতিরাজ কচু চাষের জন্য উপযোগী। অনেক দিনের জলাবদ্ধতা লতিরাজ কচুর জন্য ক্ষতিকর। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি লতিরাজ কচুর জন্য উত্তম। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল থাকলে এটেল দোআঁশ মাটিতেও এ কচুর চাষ করা চলে।
@ রোপণের সময় @
বছরের যে কোন সময়েই লতিরাজ কচুর চারা মাঠে রোপণ করা যায় তবে জয়পুরহাট অঞ্চলের চাষীরা রোপা আমন ধান কাটার পর কার্তিক-অগ্রহায়ণ (November-December) মাসে, রবি মৌসুমে এবং চৈত্র-বৈশাখ (April-May) মাসে খরিফ-২ মৌসুমে এর চারা রোপণ করে থাকে
@ জমি তৈরি ও চারা রোপণ @
শুকনো অথবা আধা শুকনো জমিতে কচুর চারা লাগানো হয়। লাগানোর আগে মাঠ চাষ করে আগাছা মুক্ত করে সারি করে বীজ চারা লাগাতে হয়। বীজ চারা কে গুড়ি চারা ও বলা হয়। লতার অগ্রভাগে ( Sucker ) এবং কচুর গোড়ায় ছোট ছোট গুড়ি বীজ চারা উৎপন্ন হয়। গুড়ি চারা তোলার পর রোপণে বিলম্ব হলে স্যাঁত স্যাঁতে মাটিতে সেগুলো ঘন করে পুতে রাখা যায় যা মাঠ তৈরি হলে পর যথাযথ রোপণ দূরত্বে লাগানো যায়। ঘন করে চারা রোপণ কালে কচি ২-১ টি পাতা রেখে বাকি সব পাতা ও পুরানো শিকড় কেটে ফেলে দিতে হয়। লাঙ্গল বা কাঠি দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে ৪-৫ সেমি গভীর খাদ করে চারা লাগিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
@ রোপণ দূরত্ব @
বর্তমানে জয়পুরহাট অঞ্চলের চাষীরা ৭০-৭৫ সেমি দূরত্বে সারি তৈরি করে প্রতি সারিতে ৭০-৭৫ সেমি দূরত্বে লতি কচুর চারা লাগায়। তবে বারি কর্তৃক ৬০ x ৪৫ সেমি দূরত্বে চারা লাগানোর কথা বলা হয়েছে। একটু বেশি দূরত্বে চারা লাগালে লতির আকার মোটা হয় তাই লতির জন্য ৭৫ x ৭০ সেমি হওয়াটাই যুক্তি সংগত বলে মনে হয়।
@ সার প্রয়োগ @
লতি উৎপাদনের জন্য কচুর সার ব্যবস্থাপনার উপর তেমন কোন গবেষণা নেই। চাষির অভিজ্ঞতার আলোকে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগের সুপারিশ করা হলো। জমির উর্বরতার ভিত্তিতে সারের পরিমাণ কম বেশী হতে পারে।
সারের নাম সারের পরিমাণ সার প্রয়োগের সময়
গোবর ১৫-২০ টন জমি তৈরির সময় শেষ চাষে
ইউরিয়া ১০০ কেজি চারা রোপণের ৩০ দিন পর
১০০ কেজি চারা রোপণের ৬০ দিন পর
১০০ কেজি চারা রোপণের ৯০ দিন পর
২৫ কেজি প্রতি ১৫ দিন পর পর ২৪০ দিন পর্যন্ত
টি এস পি ১৫০ কেজি জমি তৈরির সময় শেষ চাষে
এম পি ২০০ কেজি জমি তৈরির সময় শেষ চাষে
জিপসাম ১৩০ কেজি জমি তৈরির সময় শেষ চাষে
জিংক সালফেট ১৫ কেজি জমি তৈরির সময় শেষ চাষে
বরিক এসিড ১০ কেজি জমি তৈরির সময় শেষ চাষে
* অম্লতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনে চুন ব্যবহার করতে হতে পারে।
@ অন্তর্বতীকালীন পরিচর্যা @
ক) লতিরাজ কচুর জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রতি বার লতি সংগ্রহের সময় গাছের গোড়ার মরা পাতা কেটে পরিস্কার করে দিতে হবে।
খ) জমিতে রস না থাকলে সেচ প্রদান করতে হবে। প্রতিবার ইউরিয়া সার প্রয়োগ কালে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
গ) জমিতে অতিরিক্ত পানি থাকলে লতির পরিমাণ কমে যায়, তাই ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। জমিতে ৮-১০ সেমির বেশি পানি যেন কোন অবস্থাতেই দাড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমি স্যাঁত স্যাঁতে থাকলে লতির ফলন আশানুরূপ হয়।
ঘ) কচুর ফুল দেখা দিলে তা কেটে দিতে হবে অন্যথায় লতির ফলন কমে যাবে।
@ পোকামাকড় ও রোগবালাই @
লেদা পোকা
এক প্রকার লেদা পোকা কখনো কখনো পাতা খেয়ে নষ্ট করে।
প্রতিকার
২ গ্রাম সেভিন/১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে সেপ্র করে এ পোকা দমন করা যায়।
মাইট
কচুর পাতার নিচে থাকে ও পাতার রস খেয়ে গাছ দূর্বল করে ফেলে।
প্রতিকার
নিউরন ৫০০ ইসি ২ মিলি অথবা টর্ক ৫০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম ১ লি পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করে মাইটের আক্রমণ রোধ করা যায়।
কান্ড ছিদ্রকারী পোকা
এ পোকা কচুর কান্ডে ছিদ্র করে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
প্রতিকার
রিপকর্ড ১০ ইসি ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করলে উপকার পাওয়া যায়।
পাতার মড়ক রোগ ( Leaf blight)
পাতায় বাদামি রং এর গোলাকার দাগ পড়ে ও শেষে ঝলসে গিয়ে পাতা মরে যায়। উচ্চ তাপমাত্রায় ও অধিক বৃষ্টিপাতে এ রোগের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিকার
এ রোগ দেখা দিলে ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লি পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে।
পোকামাকড় বা রোগ বালাই দমনে কোন ঔষধ ব্যবহার না করাই উত্তম। যদি একান্তই কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয় তা হলে ব্যবহারের দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত লতি বা গাছের অন্য কোন অংশ খাবার অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়।
@ ফসল সংগ্রহ ও ফলন @
ফসল সংগ্রহ
চারা লাগানোর ৮০-৯০ দিন পর থেকে লতি তোলা যায়। ১০ দিনের মধ্যেই লতি সংগ্রহ করার মত বড় হয় বলে প্রতি মাসে অন্তত ৩ বার এবং এভাবে একটি গাছ থেকে ২০-২৫ বার লতি সংগ্রহ করা যায়।
ফলন
হেক্টর প্রতি ফলন ৪০-৫০ টন।
No comments:
Post a Comment