@ ভূমিকা @
মসলা হিসেবে হলূদ জনপ্রিয়। টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ময়মনসিংহ, নীলফামারী ও পার্বত্য জেলা সমূহে হলুদের ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মোট প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৪২ হাজার টন।
একর প্রতি স্থানভেদে হলুদ চাষে কৃষকের খরচ হবে প্রায় ১২,৪০০ টাকা এবং ফলন হয় প্রায় ১২ টন (কাচা অবস্থায়) যা শুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় ৩ টন বা ৩,০০০ কেজি। ফলে মোট আয় ১,৯৫,০০০ টাকা। অতএব হলুদ চাষে কৃষকের প্রকৃত আয় ১,৮২,৫৭০ টাকা।
হলুদে ভিটামিন-এ এবং প্রয়োজনীয় পরিমানে খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম ও আয়রন পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ এর অভাবে চোখে কম দেখা ও রাত কানা রোগ হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাবে দাঁতের ক্ষয় রোগ, হাড় গঠনে বিঘ্ন ঘটে এবং শরীরে রক্ত শুন্যতা দেখা দেয়।
কোন ধাতু বা মাটির পাত্রে পানি দিয়ে হলুদ ধীরে ধীরে জ্বাল দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর্যন্ত সিদ্ধ করা হয়। এভাবে হলুদ সিদ্ধ করার পর ১২-১৩ দিন রোদে শুকিয়ে হলুদ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয়। হলুদ প্রসাধনী, ওষুধ শিল্পে, খাদ্য শিল্পে এবং সুগন্ধি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
@জলবায়ু ও মাটি @
হলুদ উষ্ণ , অবউষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল। সব ধরণের মাটি তবে দো আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য উপযুক্ত।
@ জাত @
ডিমলা ও সিন্দুরী নামে বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি উন্নত জাত রযেছে।
@ জমি তৈরী @
ভাল ফলনের জন্য গভীর ভাবে জমি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে এবং আগাছা পরিস্কার করে ভালভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
@ রোপণ সময় @
মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে কন্দ বীজ হিসেবে রোপণ করতে হয়।
@ কন্দ রোপণ @
সাধারণত ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ১-২ কুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ হলুদ চাষে ব্যবহৃত হয়। ভালভাবে জমি তৈরীর পর ৫০ সে.মি দূরত্বে সারি করে, সারিতে ২৫সে.মি দূরে দূরে ৫-৭ সে.মি গভীরে সুস্থ কন্দ লাগাতে হয়। কন্দ লাগানোর চার সপ্তাহ পরেই মাটির উপরে পাতা বের হতে থাকে। বীজ হিসেবে হেক্টর প্রতি প্রায় ২৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়।
@ সার প্রয়োগ @
ভাল ফলন পেতে হলে নীচের সারণি অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার মোট পরিমান (হেক্টর প্রতি) জমি তৈরীর সময় দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
রোপনের ৫০-৬০ দিন পর ১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর ২য় কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর
গোবর ৪-৬ টন সব – – –
ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি — ১০০-১২০ কেজি ৫০-৬০ কেজি ৫০-৬০ কেজি
টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি সব – – –
এমপি ১৬০-১৮০ কেজি ৮০ কেজি – ৪০-৪৫ কেজি ৪০-৪৫ কেজি
জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি সব – – –
জিংক সালফের ২-৩ কেজি সব – – –
* মাটির উর্বরতাভেদে সার ও তার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
@ অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা @
মাটিতে রস কমে গেলে সময়মত সেচ দেয়া প্রয়োজন। হলুদের ক্ষেত্রে অতি বৃষ্টির সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে সেজন্য দ্রুত নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সারির মাঝখানে সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিস্কার করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হয়। উক্ত ঝুরঝুরা মাটি সারির উপর ১৫- ২০ সে.মি উচু করে বেঁধে দিতে হয়।
@ রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন @
উল্লেখযোগ্য রোগের মধ্যে লিফ ব্লচ, লিফ স্পট, রাইজোম রট (কন্দ পঁচা) ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এসব রোগ দমন করতে হলে ডায়থেন এম ৪৫ নামক ছত্রাক নাশক প্রয়োগ (২০গ্রাম ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে) করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। একই জমিতে প্রতি বছর হলুদ ও আদা ফসল চাষ করা উচিত নয়। পোকামাকড়ের মধ্যে হলুদের কান্ড-ছেদক পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, থ্রিপস ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে। ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি বা সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২০ মি.লি প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫দিন পর পর সেপ্র করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।
No comments:
Post a Comment