উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

ধনিয়া



@ পরিচিতি @
বাংলা নামঃ ধনিয়া
ইংরেজী নামঃ coriander
বৈজ্ঞানিক নামঃ Coriander sativum
পরিবারঃ Umbelliferae
কিছুদিন আগেও শীতের কুয়াশায় ধনিয়া পাতার ঘ্রাণ ছড়ানো থাকতো। শীতের নতুন সবজীর মতো ধনিয়া পাতার চাহিদাও থাকতো পুরো শীত জুড়ে। কিন্তু বর্তমানে ধনিয়ার বারোমাসি জাতের কল্যাণে বর্ষার সময় টুকু ছাড়া সারা বছরই ধনিয়া পাতা সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে রমজান মাসে অল্প সময়ে বেশী লাভের আশায় কিছু চাষী অল্প পরিমান জমিতে ধনিয়া পাতার চাষ করে লাভবান হচ্ছে। রবি মৌসুমে এদেশে প্রায় সব জেলাতেই ধনিয়ার চাষ হয়ে থাকে। ঢাকার সাভার চাপাইনবানগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে ধনিয়া পাতার চাষ করা হচ্ছে। সাভারে কিছু চাষী ধনিয়ার সাথে সাথী ফসল হিসাবে ওলকপি চাষ করে বিঘা প্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় এদেশে প্রতি বছর ৬০০০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষ করা হয় এবং মোট উৎপাদন ৪০০০ টন। তবে বিশেষজ্ঞের মতে ধনিয়া চাষের জমির পরিমান উৎপাদন এর চেয়েও অনেক বেশী। ধনিয়ার আদি নিবাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে হলেও এখন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, মরোক্ক, রাশিয়া, হাঙ্গেরী, আমেরিকা সহ বিশ্বের অনেক দেশেই ধনিয়া চাষ হচ্ছে। ধনিয়া এবং এর পাতা দীর্ঘকাল ধরে আমাদের দেশে মসলা হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তরকারী, আচার, চাটনীর স্বাদ সুঘ্রাণ বাড়াতে, সালাদ টেবিল সাজাতে ধনিয়ার গুড়া এবং পাতার বহুল ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়াও ধনিয়া থেকে দামী তৈল পাওয়া যায় যা সুরা, কোকো চকোলেট তৈরীতে এমনকি আতর শিল্পেও এর ব্যবহার দেখা যায় এর ঔষধিগুণও অপরিসীম।
@ জাত @
দীর্ঘদিন ধরে দেশী জাতের ধনিয়া আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে। এই জাত তুলনামূলকভাবে কষ্ট সহিষ্ণু, গাছ ছোট, কান্ড সুরু, পাতা ছোট, বীজ লনামূলকভাবে ছোট, ফলন কম কিন্তু পাতা বীজ খুব সুঘ্রাণযুক্ত। এসব জাত সমগ্র বাংলায় সাধারণত শীতকালেই চাষ করা হয়। বর্তমানে অনেক আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত বের হয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিতবারি ধনিয়া-একটি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। যেসব আধুনিক জাত পাতার জন্য সারা বছর চাষ করা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্রীন লিফ, কেরিবি, এএলবি-৬০, এলবি-৬৫, সুগন্ধা ইত্যাদি
গ্রীন লিফ
অধিক বৃষ্টি গরম সহনশীল, দ্রুত বর্ধনশীল জাত, গাছ ঝোপালো। বীজ বোনার ৩০-৩৫ দিন পর থেকেই পাতা তোলা যায়। ফলন - টন/একর
কেরিবি
কেরিবি জাতের পাতা চওড়া অধিক সুগন্ধযুক্ত, আকর্ষনীয় সবুজ রং-এর পাতা, সারা বছর চাষ করা যায়। বীজ বোনার ৩৫ দিন পর থেকেই - বার পাতা তোলা যায়, সহজে ফুল ধরে না
এলবি-৬০
এলবি-৬০ জাত দ্রুত বর্ধনশীল, উজ্জ্বল সবুজ রং-এর পাতা, দেরীতে ফুল আসে। হেক্টর প্রতি ফলন .-. টন
এলবি-৬৫
জাতের গাছে প্রচুর পাতা হয়, দেরীতে ফুল আসে। হেক্টর প্রতি ফলন .-. টন
সুগন্ধা
এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল জাত, বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ করা যায়, ক্ষেতে বেশীদিন থাকে, দেরীতে ফুল আসে। হেক্টর প্রতি ফলন .-. টন।
@ আবহাওয়া মাটি @
এটি একটি শীতকালীন ফসল হলেও পাতা উৎপাদনের জন্য এপ্রিল-জুন মাসের তীব্র গরম বাদ দিয়ে প্রায় সারা বছরই চাষ করা চলে। বীজ উৎপাদনের জন্য তুষারপাত কুয়াশাহীন শুষ্ক শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন। ফুল ফল ধরার সময় মেঘলা আবহাওয়া থাকলে রোগ পোকার আক্রমণ বেশী হয়। প্রচন্ড বৃষ্টিপাতেও গাছের বৃদ্ধি ফলন ব্যহত হয়। প্রায় সব রকমের মাটিতেই ধনিয়া চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ থেকে এটেল দোআঁশ মাটি ধনিয়া চাষের উপযোগী। ধনিয়ার জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
@ বীজ বোনার সময় পদ্ধতি @
বীজ বোনার সময়
দেশী জাতের ধনিয়া পাতা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চাষ করা হয় কিন্তু আধুনিক জাতের ধনিয়া পাতা প্রায় বছরই চাষ করা যায়। তবে শীতকালে ভাল ফলন দেয়। পাতার জন্য সেপ্টেম্বর থেকে বর্ষাকাল আসার আগ পর্যন্ত চাষ করা যায়।
বীজের পরিমাণ
২০-২৫ কেজি/হেক্টর, ৮০-১০০ গ্রাম/শতাংশ
বীজ বোনার পদ্ধতি
বীজ বোনার আগে জমি তৈরি করে নিতে হবে। ভালোভাবে জমি চাষ দিয়ে এক থেকে সোয়া মিটার চওড়া করে বেড় তৈরি করে নিতে হবে। দুই বেড়ের মাঝে ৪০-৫০ সেমি.নালা রাখতে হবে। জমি তৈরির সময় মাটির সাথে হেক্টর প্রতি - টন জৈব বা গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে। বুনার আগ বীজ পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর বীজক আস্তে আস্তে ঘষতে হবে। এর ফল বীজরে দুটি মেরিকার্প (বীজরে দুটি অংশ) আলাদা হয়ে যাবে। বীজ বোনার আগে ছত্রাক নাশক (ব্যাভিস্টিন বা থায়রন) দ্বারা শোধন করে নিলে চারার গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ করা যাবে। তৈরী করা জমিতে বীজ ছিটিয়ে বুনে হালকা চাষ মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে অথবা ৩০ সেমিঃ দূরে দূরে . সেমিঃ গভীর করে লাইন টানতে হবে এবং উক্ত লাইনে বীজ বুনে ঝুরঝুরা মাট দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিতে হবে। চারা গজানোর ১০-১৫ দিন পর প্রতি সেমিঃ পর পর একটি চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
@ সারের পরিমান @
ধনিয়া চাষের জন্য নিন্মরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে
সারের নাম সারের পরিমান / হেক্টর
গোবর সার -১০ টন
ইউরিয়া ২০০-২৫০ কেজি
টি.এস.পি ১০০-১২৫ কেজি
এম.পি ১০০-১৫০ কেজি
জিপসাম ৬০-৭৫ কেজি
জিংক সালফেট ১২-১৫ কেজি
@ সার প্রয়োগ @
জমি তৈরির সময় সমসত্ম গোবর সার টি.এস.পি, অর্ধেক ইউরিয়া এম.পি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর বাকী ইউরিয়া অবশিষ্ট এম.পি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এই সার প্রয়োগের পূর্বেই আগাছা নিড়িয়ে পানি সেচ দিয়ে নিলে ভাল হয়
@ পরিচর্যা @
যদি পাতা সংগ্রহের জন্য ধনিয়ার চাষ করা হয় তবে / দিন পর পর হালকাভাব পানি সেচ দিতে হবে। নিড়ানি বা কাস্তে দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। প্রতিবার সেচের পরজোআসা মাত্র মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে বীজ ফেলার পর বেডের উপর হালকা করে খড় বিছিয়ে দিলে ভাল হয়, এতে সেচ বা বৃষ্টির পানির ছিটিয়ে পাতায় মাটি লাগতে পারে না। পাতার জন্য ধনিয়া চাষের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এরপর একই জমতি ২০% কম সার প্রয়োগ কর আবার ফসলের চাষ করা যায়।
@ ফসল কাটা @
বীজ বপনের ১১০-১২০ দিন পর বীজ তোলা যাবে। যখন বীজ সম্পূর্নভাব পাকবে এবং গাছ মোটামুট সবুজ থাকবে তখনই ফসল কাটার সময় হয়। বীজ যাতে ঝরে পড়ে না যায় তার জন্য সকালে কুয়াশার পানি থাকতই হাত দিয়ে টেনে বা কাঁচি দিয়ে ফসল কাটা উচিত। গাছ কাটার পর ছোট ছোট আঁটি বেধে / দিন ছায়ায় রেখে দিতে হবে। এরপর মাড়াই করার জন্য ছড়িয়ে দিয়ে - দিন রোদে শুকানোর পর ফসল মাড়াই করতে হবে। পাতার জন্য ৩০-৩৫ দিন পর পাতা তোলা ভাল। চারা তুলে আঁটি করে বাজারে পাঠাতে হবে।
@ ফলন @
পাতা/ শাক হিসেবেঃ .-. টন / হেক্টর
বীজ হিসেবেঃ .-. টন / হেক্টর

No comments:

Post a Comment