উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

মৌরী



@পরিচিতি@
বাংলা নামঃ মৌরী
ইংরেজী নামঃ Fennel
বৈজ্ঞানিক নামঃ Foeniculum vulgare
পরিবারঃ Umbelliferae
মৌরী একটি অত্যান্ত জনপ্রিয় মসলা। মৌরীর ফল বা বীজ মসলা, পান মসলা, মুখশুদ্ধি ইত্যাদিতে, পাতা নরম কান্ড সস্তৈরিতে, স্যালাড হিসাবে, শেকড় আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মিঠাই নোনতা খাবার তৈরিতে মৌরী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারনত বাণিজ্যিকভাবে মৌরীর চাষ হয়না।
@পুষ্টিমান@
এতে শতকরা . ভাগ জল, . ভাগ প্রোটিন, ১০ ভাগ চর্বি, ১৮. ভাগ তন্তু, ৪২. ভাগ শর্করা, ১৩. ভাগ খনিজ পদার্থ এবং ১০৪০ আই.ইউ (প্রতি ১০০ গ্রামে) ভিটামিন- এ।
@জাত@
কো-, এস-, পি এফ-৩৫।
@জলবায়ু মাটি@
তুষারপাতহীন ঠান্ডা আবহাওয়ায় এবং উর্বর, হালকা-মাটি এই মসলাটি চাষের জন্য উপযোগী সমতলে কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে বীজ বোনা উচিত
@বীজের হার বীজ বপন@
ছিটিয়ে বুনলে প্রতি হেক্টরে -১২ কেজি, সারিতে বুনলে - কেজি এবং নার্সারিতে চারা তৈরি করে লাগালে - কেজি বীজ লাগে। বৃষ্টি নির্ভর এলাকায় সারিতে ৪৫ সেমি. x ১০ সেমি. দুরত্বে বীজ বুনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে। সেচযুক্ত এলাকায় সাধারণত ৬০ সেমি. x ৩০ সেমি. দুরত্বে বীজ বোনা হয় বা চারা লাগানো হয়। বীজ বোনার সময় যেন জমিতে উপযুক্তজোথাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বীজ বোনার উপযুক্ত সময় অক্টোবর -নভেম্বর। নার্সারিতে চারা তৈরি করে রোপণের ক্ষেত্রে ১০ মি. x মি. মাপের নার্সারিতে - কেজি বীজ বুনে চারা তৈরি করা হয় এবং - সপ্তাহের চারা মূল জমিতে লাগানো হয়
বোনার আগে - দিন ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম ভাল হয় তবে বোনার আগে অবশ্যই বীজ শোধণ করে নেওয়া উচিত। ভিজিয়ে রাখার শেষ ঘন্টা % এম..এম.সি জাতীয় ছত্রাক নাশক যেমন বাগলল- ইত্যাদির .% জলীয় দ্রবণে ভিজিয়ে রেখে বীজ শোধন করে নেওয়া যেতে পারে। শুকনো বীজ ছড়ানোর ক্ষেত্রে গ্রাম ক্যাপটান বা ব্যাভিস্টিন জাতীয় ছত্রাক নাশক প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে মুখ বন্ধ পাত্রে ১০-১৫ মিনিট ভাল করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
@জমি তৈরি সার প্রয়োগ@
গভীরভাবে চাষ দিয়ে এমনভাবে জমি তৈরি করতে হবে যাতে মাটির ১৫-২০ সেমি. গভীরতা পর্যন্ত চাষ দেওয়া হয় এবং প্রথম চাষের সময় জমিতে হেক্টর প্রতি ১০ টন জৈব সার বা খামারের সার মেশাতে হবে। শেষ চাষের আগে রাসায়নিক সার হিসাবে ৩০ কেজি নাইট্রোজেন, ৪০ কেজি ফসফেট ২০ কেজি পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। উঁই, পিপড়ে ইত্যাদির আক্রমনের সম্ভাবনা থাকলে বীজ বোনার আগে প্রতি হেক্টরে ২৫ কেজি এন্ডোসালফান গুঁড়ো ছড়াতে হবে। জমির উর্বরা শক্তি কম হলে ৩০ কেজি নাইট্রোজেন, ৬০ কেজি ফসফরাস ৩০ কেজি পটাশ মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। চাপান সার হিসারে ৩০ কেজি করে নাইট্রোজেন প্রতিবারে বীজ বোনার ৩০ দিন ৬০ দিন পরে প্রয়োগ করতে হবে এবং সার প্রয়োগের পর পরই হালকা করে সেচ দিতে হবে।
@পরিচর্যা জলসেচ@
@পরিচর্যাঃ@
মৌরি গাছের প্রাথমিক দশায় বৃদ্ধির হার খুবই কম। তাই, সময় আগাছার বৃদ্ধি যাতে বেশি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। বীজ বোনার ২০-৩০ দিনের মাথায় নিড়ানি দিয়ে আগাছা মুক্ত করতে হবে, অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ১৫-২০ দিন পর পর আরও দুই তিনবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা মুক্ত করতে হবে।
@জলসেচঃ@
সেচ দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জমিতে জল না দাড়িয়ে যায় মাটি বেশীদিন ভেজা না থাকে। খু্ বেশী জল সেচ এবং খুব বেশী শুকিয়ে যাওয়া উভয়ই মৌরির বৃদ্ধি ফলনকে ব্যহত করে। তাই ১৫-২০ দিন অন্তর হালকা সেচ দিতে পারলে ভাল হয়।
@রোগ পোকা দমন@
জাবপোকা,চোষীপোকা, বিটল,গলমীজ ইত্যাদি কীটশত্রু এবং ধ্বসা, সাদাগুঁড়ো, ঝিমিয়ে পড়া ইত্যাদি রোগ দ্বারা মৌরি গাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
১। জাবপোকাঃ
তিন ধরনের জাব পোকা মৌরি গাছে আক্রমন ঘটাতে পারে।
Hyadaphis coriandari :- পূর্ণাঙ্গ অপূর্ণাঙ্গ পোকা পাতা, ফুল কচি ফল থেকে রস শোষণ করে, মধুবিন্দু ক্ষরণ করে ফলে,শুটিং মোল্ড রোগ দেখা যায়। বোনার সময় পাল্টে আর.সি-৭৮, আর.সি- জাতীয় প্রতিরোধী জাত চাষ করে জাতীয় জাব পোকার আক্রমন ঠেকানো যেতে পারে
Cavariella aegopodil:- প্রাথমিক দশায় আক্রান্ত হলে আক্রান্ত গাছের পাতা ডগা শুকিয়ে যায়। পরের দিকে আক্রমন হলে ফুল ধরে না বা ফল ঝরে যায়। প্রতিরোধী জাতঃ আর.সি-৩১ বি
Aphis faeniculoscora:- কচি ডগা পাতা থেকে রস শোষণ করে খায়। .% মিথাইল প্যারাথিয়ন বা অক্সিডেমিটন মিথাইল বা .% এন্ডোসালফান জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করে জাবপোকা নিয়ন্ত্রন করা যায়
২। চোষীপোকাঃ
Thrips tabaci Syn. Scirtothrips dorsalis এর পূর্ণাঙ্গ অপূর্ণাঙ্গ পোকা কান্ড পত্রবেষ্ঠনীর মাঝখানে দল বেঁধে বাস করে রস শোষণ করে খায়। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়, ফুল শুকিয়ে যায় নিন্মমানের কুঞ্চিত, বিকৃত ফল হয়
প্রতিকারঃ
চোষীপোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য .% কার্বারিল বা .% ডাইমিথয়েট বা .% ডায়াজিনোন বা .% ফেনিট্রোথিয়ন বা .% এন্ডোসালফান স্প্রে করা যেতে পারে
৩। গলমজিঃ
Systole albipennis
এর পূর্ণাঙ্গ পোকা পাতা খায় স্ত্রী পোকা ফলের বহিস-কের ভিতরে প্রবেশ করে এবং অন--কে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বের হওয়া ল্যাদা পোকা ভিতরের শাঁস অংশ খেয়ে নেয়। গরম পড়লে আক্রমন বেশী হতে দেখা যায়।
@প্রতিকারঃ@
.০৫% ফেনভ্যালেরেট বা .১৫% ডায়াজিনোন বা .% ডাইমিথয়েট স্প্রে করে পোকা নিয়ন্ত্রন করা যায়
৪। বীটলঃ
Stegobium paniceum জাতীয় পোকার পূর্ণাঙ্গ অপূর্ণাঙ্গ দশা ফল বীজ খেয়ে নষ্ট করে। সংরক্ষণের সময় এই পোকার দ্বারা বীজ বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়
প্রতিকারঃ
গুদামের বীজ ৬৪ মিগ্রা/ঘন মিটার ইথিলিন ডাইব্রোমাইড দ্বারা দিন ধরে ধূমায়িত করে পোকা নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে। বীজের সাথে লস্কার গুঁড়ো বা হলুদ গুঁড়ো প্রতি কেজি বীজে - গ্রাম হিসাবে ভালকরে মিশিয়ে রোদে শুকানো বীজ - মাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে
৫। ধ্বসা রোগঃ
Ranularia foenicula Alternaria tenius জাতীয় ছত্রাক দ্বারা আক্রমনে রোগ হয়। বীজ বোনার ৬০-৭০ দিন পরে পরিণত পাতার নিচের দিকে ছো্ ছোট তিনকোনা, উঁচু নিচু দাগ দেখা যায়। পরে এলাকায় সাদাটে ধরনের উঁচু নিচু দাগ দেখা যায়। সংক্রমন ক্রমে কান্ড, পুষ্পদন্ড ফলে ছড়িয়ে পড়ে। পরে, পাতা কুঁকড়ে যায় ধ্বসা ধরা হয়ে শুকিয়ে যায়। প্রথম দিকে আক্রমন হলে ফল ধরে না, কুঁড়ি শুকিয়ে যায় ঝরে পড়ে। দ্বিতীয় ছত্রাকটির আক্রমনে আক্রান্ত পুষ্প মঞ্জরী হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায় কুঁড়ি ঝরে পড়ে।
@প্রতিকারঃ@
আক্রান্ত ক্ষেতে .-.% ডাইফোলাইট বা .-.% ম্যানকোজেব বা .০৪% ফাইটোলান ১০-১৫ দিন অন্তর স্প্রে করা যেতে পারে। মেঘলা আবহাওয়ায় রোগ বেশী ছড়ায় তাই, ওই আবহাওয়াতে উপরোক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে অথবা সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য বীজ বোনার ৪৫, ৬০ ৭৫ দিন পরে উপরোক্ত ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে
৬। সাদা গুঁড়ো রোগঃ
Laveillula taurica বা Erysiphe polygone জাতীয় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত এই রোগে প্রথমে পাতায় পরে পুষ্পমঞ্জরী কান্ডে সাদা পাওডারের মত দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ কমজোরী হয়ে পড়ে পুষ্পমঞ্জরী শুকিয়ে যায়
@প্রতিকারঃ@
% সালফার গুঁড়ো প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি ছড়িয়ে বা .% ক্যারাথেন প্রতি হেক্টরে ৮০০-১০০০ লিটার জলে গুলে ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করে ভাল ফল পাওয়া যায়
৭। পাতায় দাগঃ
Cercospora punctum syn. Parralora foeniculi জাতীয় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতায় বাদামী থেকে কালচে দাগ দেখা যায়। একই ধরনের দাগ দেখা যেতে পারে কান্ড, পুষ্পদন্ড কচি ফলের গায়েও। আক্রান্ত গাছ চক্চকে দেখায়।
@প্রতিকারঃ @
আক্রান্ত ক্ষেতে .-.% ডাইফোলাইট বা .-.% ম্যানকোজেব বা .০৪% ফাইটোলান ১০-১৫ দিন অন্তর স্প্রে করা যেতে পারে। মেঘলা আবহাওয়ায় রোগ বেশী ছড়ায় তাই, ওই আবহাওয়াতে উপরোক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে অথবা সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য বীজ বোনার ৪৫, ৬০ ৭৫ দিন পরে উপরোক্ত ওষুধ সেপ্র করা যেতে পারে
৮। চারা ঢলে পড়াঃ
Pythium aphanidermatum দ্বারা আক্রান্ত চারার মাটি সংলগ্ন অঞ্চলে জল বসা পচন ধরে। আক্রান্ত চারা ঢলে পড়ে মরে যায়।
প্রতিকারঃ
বীজতলা বা জমির মাটি ফাইটোলন বা কপার অক্সিক্লোরাইড (.%) দ্রবনে ভিজিয়ে দিতে হবে। দ্রবন চারাতে স্প্রে করেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
@ফসল তোলা ফলন@
ফসল তোলাঃ
মৌরি গাছের ফল - মাসে তোলার উপযোগী হয়ে যায়। ফল হলুদাভ বর্ণ ধারণ করলেই গাছ কেটে খামারে তুলে আনা উচিত। মাঠেই পুরোপুরি পেকে গেলে ফল ঝরে নষ্ট হবে বীজের গুনমান খারাপ হবে। মৌরির সব পুষ্পছত্র একমাসে পাকে না। তাই, ১০-১৫ দিন অন্তর - বার পেকে যাওয়া ফল তুলে নিতে পারলে ফলন বেশী হবে ফসলের গুনমান ভাল হবে
ফলনঃ
খামারে তুলে আনার পর গাছগুলোকে - দিন ভাল করে রোদে শুকাতে হবে এবং তারপর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ আলাদা করতে হবে। ঝাড়াই বাছাইয়ের পর আরও - দিন রোদে শুকানোর পর বীজ গুদামজাত করতে হবে। সেচযুক্ত এলাকায় প্রতি হেক্টরে ৫০০-৯০০ কেজি এবং বৃষ্টি নির্ভর এলাকায় ২৫০-৪০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়

No comments:

Post a Comment