উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

মেথি



@পরিচিতি@
বাংলা নামঃ মেথি
ইংরেজীঃ Fenugreek
বৈজ্ঞানিক নামঃ Trigonella foenum-graecum
পরিবারঃ Leguminosae
মেথি শাক মশলা হিসাবে এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতিতে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। কচি পাতা ডগা শাক হিসাবে খুবই জনপ্রিয় এবং মসলা হিসাবে মেথির ব্যবহার সর্বজন
@পুষ্টিমান@
মেথি শাকে ৮১.% পানি, .% প্রোটিন, .% শর্করা, .% চর্বি, .% খনিজ পদার্থ সহ প্রতি ১০০ গ্রামে ৬৪৫০ আই.ইউ ভিটামিন-‘’, ৫৪ মি.গ্রাম ভিটামিন-‘সিএবং ৩৬০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। মেথিবীজে .% পানি, .% প্রোটিন, ১০.% চর্বি, .% শর্করা, .% ক্যালসিয়াম ছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রামে ১৪০০ আই.ইউ. ভিটামিন-‘’, .৪১ মি.গ্রাম ভিটামিন বি-, ১২. মি.গ্রাম ভিটামিন-সি . মি.গ্রাম নিয়াসিন থাকে। ভিটামিন, উৎসেচক, প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড ট্রাইগোনোলিন থাকার জন্য খাদ্য গুনের পাশাপাশি ঔষধি গুনেও মেথি যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ
@ঔষধিগুন@
কোষ্ঠ কাঠিন্য, বদহজম, যকৃৎ প্লীহার পীড়া, কার্য্যক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদির চিকিৎসায় মেথি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
@জাত@
প্রধানত দুই ধরনের মেথি চাষ হয়ঃ দেশী বা গন্ধহীন এবং গন্ধযুক্ত। বর্তমানে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের মেথি চাষ হচ্ছে। যেমনঃ
কো-
টি.জি. ২৩৩৬ জাত থেকে উদ্ভুত এই জাতটি দ্রুত বাড়ে, শাক বীজ হিসাবে চাষ করা যায়। মিশ্র ফসল হিসাবে চাষের উপযোগী, উচ্চ বীজ প্রোটিন (২০-২৩%) সমৃদ্ধ। ৮০-৯০ দিনে ফলে এবং প্রতি হেক্টরে . টন শাক ৬৮৫ কেজি বীজ ফলন দিতে পারে।
রাজেন্দ্রকানি
গণ নির্বাচন মাধ্যমে উদ্ভুত জাতটি উচ্চ ফলনশীল। মাঝারী উচ্চতার, শাখাপ্রশাখা যুক্ত, একক বা মিশ্র চাষের উপযোগী, বীজ প্রোটিনের পরিমান .%, ১২০ দিনে ফলে, প্রতি হেক্টরে ১২০০-১৪০০ কেজি ফলন দিতে পারে।
আর.এম.টি-
নাগপুর টাইপ থেকে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচন। (Pure Line Selection ) পদ্ধতিতে উদ্ভুত জাতটি উচ্চ ফলনশীল, মাঝারী ধরনের শাখাপ্রশাখা যুক্ত, শেকড় পচা রোগ সাদা গুঁড়ো রোগের আংশিক সহনশীল, বীজ প্রোটিনের মাত্রা ২২%, ১৪৫ দিনে ফসল তোলা যায়, প্রতি হেক্টরে ১৫০০ কেজি বীজ পাওয়া যেতে পারে।
ল্যাম. সিল-
উচ্চ ফলনশীল, মাঝারী উচ্চতার ঝাকড়া গাছ, অতি উচ্চ বীজ প্রোটিন (৫৩%) সমৃদ্ধ, ৬৮ দিনে ফলে, প্রতি হেক্টরে ৭৪০-৮০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
অন্যান্য উন্নত জাতগুলো হল-পুসা আরলি বাঞ্চিং, কাসুরি সিলেকশন, হিসান সোনাল, মেথি নং-৪২, প্রভাত ইত্যাদি।
@জলবায়ু মাটি@
শীতকালীন ফসল মেথি আশ্বিন-অগ্রহায়ন মাসে বোনা যায়। বিভিন্ন ধরনের জলবায়ুতে মেথি চাষ করা যায়। এমনকি, তুষারপাত অতি শীতল তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারে এই ফসল। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে মেথি গাছ বাঁচতে পারে না। .-. ক্ষারাম্লামান যুক্ত দোআঁশ বা কাদা দোআঁশ মাটি মেথি চাষের পক্ষে আদর্শ। তবে পানি নিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত যেকোন ধরনের মাটিতেই মেথি চাষ করা যায়।
@বীজের হার বীজ বপন@
সারিতে বুনলে প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি এবং ছিটিয়ে বুনলে ৩০-৩৫ কেজি বীজ লাগে। সারিতে ১০-১৫ সেমি. x ১০-১২ সেমি. দূরত্বে বীজ বোনা যেতে পারে। বোনার আগে বীজ অবশ্যই শোধন করে নেয়া উচিত।
- বার চাষ দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে আগাছামুক্ত করতে হবে এবং সমান করে নিয়ে -১২ ফুট অন্তর সেচ নিকাশী নালা রেখে জমি তৈরি করতে হবে। বীজ বোনার পরে বিদা দিয়ে বীজ মাটির তলায় চাপা দিতে হবে। সারিতে বুনলে বীজ কম লাগবে, পরিচর্যার সুবিধা হবে, রোগ-পোকা কম লাগবে ফলন বেশী হবে। বীজ বোনার পরে - দিনে চারা বের হবে।
@সার প্রয়োগ@
জমি তৈরির সময় প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন খামারের সার এবং বীজ বোনার আগে শেষ চাষের সময় ১২. কেজি নাইট্রোজেন, ২৫ কেজি ফসফরাস ৫০ কেজি পটাশ মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। চাপান সার হিসাবে ১২. কেজি নাইট্রোজেন বীজ বোনার ৩০ দিন পরে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার শাক কেটে নেয়ার পর ২০-৩০ কেজি নাইট্রোজেন প্রতি হেক্টর জমিতে চাপান সার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে। শাক সংগ্রহের পর % ইউরিয়া জলীয় দ্রবণ বীজ বোনার ৪৫ দিন পর ৬০ দিনের মাথায় স্প্রে করলে শাকের ফলন বৃদ্ধি পাবে।
@সেচ@
বীজ বোনার - দিন পরে প্রথম সেচ দিতে হবে এবং চাপান সার প্রয়োগের পর পর সেচ দিতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনানুযায়ী ১০-১৫ দিন অন্তর সেচ দেওয়া যেতে পারে।
@পরিচর্যা শাক সংগ্রহ@
বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পরে নিড়ানি দিয়ে চারার গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলে দিতে হবে। প্রতি গুছিতে ২টি চারা রেখে বাকী চারা তুলে পাতলা করে দেয়া হলে গাছের বৃদ্ধি ভাল হবে এবং শাক বীজের ফলন বেশী হবে।
বীজ বোনার ৩০-৩৫ দিন পর গাছের গোড়া থেকে - সেমি. উপরে ডগা কেটে নেওয়া যেতে পারে এবং ১৫ দিন পর থেকে ফুল আসার ১৫ দিন আগে পর্যন্ত - সেমি. উপর থেকে আরও - বার ওই ভাবে ডগা কেটে শাক সংগ্রহ করা যেতে পারে
@রোগ পোকা দমন@
মেথি জাবপোকা, মাকড় ইত্যাদি কীটশত্রু শেকড় পচা, পাতায় দাগ, মিলডিউ, মরচে, চারা ঢলে পড়া ইত্যাদি রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে
) জাবপোকা
Aphis craccivora Myzus persicae নামক জাবপোকা মেথি গাছে আক্রমন করে এবং পাতা, ডগা, ফুলের ফলের উপর থেকে রস শোষণ করে। এন্ডোসালফান বা ম্যালাথিয়ন বা অঙিডেমিটন মিথাইল জাতীয় ওষুধ স্প্রে করে এবং শাক হিসাবে চাষ করা জমিতে তামাক পাতার নির্যাস স্প্রে করে জাবপোকা নিয়ন্ত্রন করা যায়
) মাকড়
Tetranychus cucurbitae নামক মাকড় দ্বারা আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যায় ঝরে পড়ে। আক্রান্ত গাছে ফল ধরে না বা খুব কম ফলন হয়।
ডাইকোফল জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করে মাকড় নিয়ন্ত্রন করা যায়। তবে ওষুধ স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে শাক তোলা যাবে না
) শেকড় পচা রোগ
Fusarium sp. , Rhizoctonia spl. জাতীয় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত রোগটি মারাত্বক। শুঁটি ধরার পর আক্রান্ত গাছে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায় এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির আগেই পুরো গাছ শুকিয়ে যেতে পারে। রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বীজ শোধন, গ্রীষ্মকালে গভীর চাষ দিয়ে জমি ফেলে রাখা, - বছরের শস্য পর্যায় অবলম্বন, জমির মাটি ছত্রাক নাশক দ্বারা শোধন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে
) পাতায় দাগ
Cercospora traversiana নামক ছত্রাকের আক্রমনে পাতায় গোল গোল বা চোখের আকৃতির ছোট ছোট বাদামী দাগ দেখা যায়। দাগ জুড়ে বড় বড় দাগ হয় এবং পরে দাগের মাঝখানে ঘন জলপাই রং এর ছোপ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ১০-১৫ দিন অন্তর - বার .২৫% ম্যানকোজেব বা জিনেব বা ফাইটোলান স্প্রে করতে হবে
) ডাউন মিলডিউ
Perenospora trigonella নামক ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতার নিচে ধূসর সাদা গুঁড়ো যুক্ত দাগ দেখা যায় এবং দাগ বরাবর পাতার উপরের অংশ হলুদাভ বা বর্ণহীন দেখায়। ত্রুমে আক্রান্ত গাছ ধূসর হলুদ বর্ণের দেখায়। রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ১০-১৫ দিন অন্তর - বার .২৫% জিনেব বা ফাইটোলান স্প্রে করা যেতে পারে।
) পাউডারী মিলডিউ
Erysiphe polygoni,Oidium sp. জাতীয় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতার উপরের দিকে সাদা গুঁড়োযুক্ত দাগ দেখা যায়।
. % সালফার গুঁড়ো প্রতি হেক্টরে ২৫ কেজি হিসাবে ছড়িয়ে রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায় বা .২৫% ডিনোক্যাপ জাতীয় ওষুধ ১৫ দিন অন্তর বার স্প্রে করা যেতে পারে
) মরচে
Uromyces anthyllidis নামক ছত্রাকের আক্রমনে পাতা পত্রবৃন্তে ছোট ছোট গোল বা লম্বাটে ঘন বাদামী, উঁচুনীচু দাগ পাতার উভয় দিকে এবং বোটাতেও দেখা যায়।
.% কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করে রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
@ফসল তোলা ফলন@
ফসল তোলা
ফুল আসার ৩০-৩৫ দিন পরে ফসল তোলার উপযোগী হয়। শুঁটি পেকে শুকিয়ে গেলে গাছ তুলে বা কেটে খামারে নিয়ে আসা হয় এবং রোদে ভাল করে শুকানোর পর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ বের করা হয়। ঝাড়াই বাছাই করে রোদে ভাল করে শুকিয়ে চটের বস্তায় বীজ সংরক্ষণ করা হয়। দেশী জাত ১৫০-১৫৫ দিনে এবং কাসুরি জাতীয় উচ্চ ফলনশীল জাত ১৬০-১৬৫ দিনে পাকে
ফলন
প্রতি হেক্টরে গড়ে ১২০০-১৫০০ কেজি বীজ এবং -১০ কুইন্টাল শাক উৎপন্ন হয়। ভাল করে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ১৮০০-২৪০০ কেজি বীজ পাওয়া যেতে পারে

No comments:

Post a Comment