উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

কুল



@ পরিচিতি @
বাংলা নামঃ কুল
ইংরেজী নামঃ Jujubee, Bar
বৈজ্ঞানিক নামঃ Zizyphus mauritiana
বাউ কুল
আমাদের দেশের ফলবাজারে বিদেশী ফলের প্রচুর প্রাচুর্য দেখা যায়। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যেখানে আমাদের দেশের মত এত বেশী রকমের ফল জন্মে। আবার প্রত্যেক ফলের রয়েছে নানারকম জাত বৈচিত্র্য। কুল বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সুপরিচিত জনপ্রিয় ফল। অম্লমধুর স্বাদ পুষ্টিমানের বিচারে কুল বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট ফল। কুল সাধারণত পাকা টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়। সাধারণত: প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষনযোগ্য কুলের অংশে থাকে-
পানি -৮৫. ভাগ, আমিষ -. ভাগ, শ্নেহ -., লৌহ -১৩.০০ ভাগ, ক্যালোরী -৫৫ শক্তি, ক্যারোটিন -৭০ আইইউ এবং
ভিটামিন সি৫০১৫০ মি. গ্রাম
কুলের ফল পাতা বাতের জন্যে উপকারী। ফল রক্ত শোধন, রক্ত পরিষ্কার হজমী কারক।
@ জাত @
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অনেক জাত স্বাদের কুল চোখে পড়ে, তবে সচরাচর যে কুলগুলো চাষ হয়ে থাকে সে গুলো হলোঢাকা-৯০, নারিকেলি কুল, কমিল্লা কুল, আপেল কুল (ইপসা কুল-), বারি কুল- , তাইয়ান কুল, থাই কুল, বাউকুল-১। উল্লিখিত জাত সমূহের মধ্যে বর্তমানে আলোড়ন সৃষ্টিকারী জাতগুলো হলোবাউকুল-, আপেল কুল (ইপসা কুল-) থাই কুল।
বাউ কুল-: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফল গাছ উন্নয়ন প্রকল্পের (Fruit Tree Improvement Project-FTIP) জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি জাত।
জাতটির প্রধান বৈশিস্ট্য হলোঃ
ফলের গড় ওজন ৯০ গ্রাম
বীজ ছোট। গড় ওজন - গ্রামের এবং ভক্ষণযোগ্য অংশের পরিমান ৯৫- ৯৭ ভাগ
ফল ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্যে - সেমিঃ এবং ব্যাস - সেমিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রতি থোকায় - টি পর্যন্ত ফল ধরে,
পাকা ফলের মিষ্টতা বা টিএসএস ২৪. অর্থাৎ কুলের মিষ্টতা অনান্য সকল কুল অপেক্ষা বেশী।
বাউ কুল বছরে / বার ধরে।
বাউ কুল একটি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং বাগানে , বাড়ির ছাদে মাটির টব / অর্ধ ড্রামে সহজেই চাষ করা যায়।
বাউ কুল টেবিল ফ্রুট (Table Fruit) হিসেবে আপেলের পরিবর্তে খাওয়া যায়।
কুলের রং সবুজাভ হলুদ এবং পাকা কুল অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
আপেল কুল (ইপসা কুল-):
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি জাত।
থাই কুলঃ
এই জাতটি থাইল্যান্ড হতে বাংলাদেশে আনয়ন করা হয়েছে।
জাতের কুলের গড় ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম এর মিষ্টতা সন্তোষজনক।
ফলের আকৃতি ডিম্বাকার, দৈর্ঘ - সে.মি., ব্যাস - সে.মি. পর্যন্ত
প্রতি থোকায় - টি ফল ধরে।
বীজ আকারে ছোট। ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশের পরিমান প্রায় ৯৫ ভাগ।
পাকা কুলের রং চক চকে সজুজাভ হলুদ
বাগানে , বাড়ির ছাদে মাটির টব / অর্ধ ড্রামে সহজেই চাষ করা যায়
@ চারা সংগ্রহ @
কুলের প্রকৃত মাতৃগাছের কলম সংগ্রহের জন্যে জাত উদ্ভাবনকারী সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে সংগ্রহ করা ভাল। এছাড়াও কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টার সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত নার্সারী হতে সংগ্রহ করা যেতে পারে। কুলের পুরাতন গাছকে উন্নত গাছে রুপান্তর করার জন্য তালি চোখ কলম ভাল পদ্ধতি হলেও আজকাল জোড় কলম পদ্ধতিতে বানিজ্যিক আকারে কুলের কলম করা হয়ে থাকে
জলবায়ু মাটি রোপণ পদ্ধতিঃ কুল গাছ অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু। শুস্ক উষ্ণ জলবাযূ কুল চাষের জন্য উত্তম অতিরিক্ত আাদ্রতা কুল চাষের জন্যে ভাল নয়। গভীর দে-আঁশ বা উর্বর মাটি কুল চাষের জন্যে উপযোগী। সাধারণত: জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে বেড তৈরী করে নিতে হবে। বাউকুল- বা থাই কুলের জন্য wg.Ix মি. অথবা মি. x মি. এবং আপেল কুলের ক্ষেত্রে মি. x ৪মি.দুরত্বে, ৬০-৮০ সে.মি. গর্ত তৈরী করে কুলের চারা রোপন করতে হবে। সাধারণত: বাণিজ্যিক আকারে বাগানের বর্ষাকালে চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হলেও টবে সারা বৎসরই চারা রোপন করা যায়
@ সার পানি ব্যবস্থাপনা @
সাধারণত: মাদাতে চারা রোপনের ১৫-২০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি ২০-২৫ কেজি পঁচা গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম পটাশ, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা
) নতুন রোপনকৃত চারার স্টক হতে নতুন কুশি বের হলে ভেঙ্গে দিতে হবে
) মার্চ মাসে কুল খাওয়া হলে প্রধান প্রধান ডালের গোড়ার দিকে -১২ ইঞ্চি পরিমাণ রেখে সম্পুর্ণ ডাল কেটে দিতে হবে এবং কর্তিত স্থানে আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে
) রোগ পোকা-মাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
গাছের ফুল আসা শুরু করলে এবং ফল মটর দানার মত হলে ভেজিম্যাক্স পাতায় ফলের উপর প্রয়োগ করলে ফলন বেড়ে যায়
ভাল ফল পেতে করনীয়
) কুল গাছে ফুল আসার মাস আগে অর্থ্যাৎ আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে কোন সার পানি দেওয়া যাবে না। কারণ সময় গাছে খাবার দিলে গাছের অঙ্গঁজ বৃদ্ধি বেশী হবে ফলে ফুল ফল ধারণে ব্যাহত হবে।
) গাছে ৮০% ফুল আসা শেষ হলে গাছের চতুদির্কে ৫০-১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টি. এস. পি. এম.পি সার প্রয়োগ করে মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সার মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ফুল আসা থেকে ফলের বৃদ্ধি পর্যায় পর্যন্ত মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।
) কুলের ফুল আসার আগে একবার গুটি হওয়ার পর - দিন পর পর যেকোন কীটনাশক (ডেসিস, সিমবুশ, সুমিথিয়ন, ম্যালাথিয়ন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মি.লি. বা ক্যাপ), যে কোন ছত্রাক নাশক (থিওভিট, ব্যাভিষ্টিন, ডাইথেন-৪৫, রিদোমিল, টিল্ট প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৫০ গ্রাম), ওকোজিম, লিবরেল বোরন লিবরেল জিঙ্ক আলাদা আলাদা ভাবে - বার স্প্রে করতে হবে। এতে পোকামাকড় রোগবালাই মুক্ত এবং সুন্দর চামড়া যুক্ত স্বাস্থ্যবান ফল পাওয়া যাবে এবং ফল ঝরে পড়া ফেটে যাওয়ার পরিমানও অনেক কমে যাবে।
অনেক সময় কুলের উপর কালো আবরনসহ বোঁটার গোড়ায় সাদা প্যাজাতুলার মত আবরণ লক্ষ্য করা যায়। এত কুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয় বাজার মূল্য কমে যায়। জন্য প্রতি লিটার পানিতে মি.লি হারে টাফগড় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়
@ পোকামাকড় রোগবালাই @
1. শুয়াপোকাঃ শুয়াপোকা কচি পাতা থেকে শুরু করে বয়স্ক পাতা খেয়ে অনেক সময় গাছকে নিস্পত্র করে ফেলে
দমনঃ ডেসিস ১০ লিটার পানিতে ২২. মি.লি. মিশিয়ে প্রয়োগ করলে পোকা দমন সম্ভব
2. ফলের বীজ ছিদ্রকারী/ ভক্ষনকারী উইভিল পোকাঃ গাছে ফুল ফোটার সময় স্ত্রী-পোকা ফুলের উপর ডিম পাড়ে। ফলের ভিতর ডিম হতে কিড়া হয়ে পূর্নাংগ উইভিল পোকার সৃষ্টি হয়। পোকা ফলের ভিতরে বসে বীজটি কুরে কুরে খায়। বাহির হতে প্রাথমিক অবস্থায় ফলের গায়ে কোন ছিদ্র দেখা যায় না তবে আক্রান্ত ফল গুলো ছোট, গোলাকার এবং হলুদ হয়ে যায় ফলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, ফল ঝরে পড়ে। অবস্থায় ফল ভাঙ্গলে ফলের ভিতর কালচে-খয়েরী রঙ্গের উইভিল পোকা দেখা যায়
দমনঃ গাছে ফুল আসার পর কিন্তু ফোটার আগে ম্যালাথিয়ণ/ সুমিথিয়ণ ১০লিটার পানিতে ২২. মি.লি. মিশিয়ে প্রয়োগ করলে পোকা দমন সম্ভব
শুটি মোল্ডঃ শুটি মোল্ড রোগের আক্রমনে পাতা কান্ডের কালো ছাই এর মত পাউডার দেখা যায়। পাতা ঝরে যায় এবং উৎপাদন ব্যহত হয়।
দমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ১০লিটার পানিতে মি.লি. মিশিয়ে প্রয়োগ করলে রোগ দমন সম্ভব
পাউডারী মিলডিউঃ পাতা ফলের উপর সাদাটে পাউডার দেখা যায়। ফল ঝরে পড়ে এবং উৎপাদন মারাত্বক ভাবে ব্যহত হয়
দমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ১০লিটার পানিতে মি.লি. মিশিয়ে প্রয়োগ করলে রোগ দমন সম্ভব
মিলিবাগ বা ছাতরা পোকাঃ শীতে পোকার আক্রমণ বেশী হয়। পাতার উল্টো দিকে সাদা তুলার মত পোকাই হলো ছাতরা পোকা
দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে মিলি ডায়াজিনন ৬০ ইসি রক্সিয়ন ৪০ ইসি মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে
টব/ অর্ধড্রামে কুলের চাষঃ
1. প্রথমে টবের তলায় ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া, পচাঁ পাতা এবং খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
2. পুরো টব বা ড্রামটি সমপরিমান পচাঁ গোবর দো-আঁশ মাটির মিশ্রন দিয়ে ভরে দিতে হবে।
3. এবার টবের মাঝ খানে একটি সুস্থ্য সবল কলম রোপন করতে হবে। জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক সারের দরকার নাই।
4. তবে গাছের কচি পাতা বের হয়ে তা পরিপক্ক হলে - টি সিলভা মিক্স ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে - সে.মি. দুরে - সে.মি. মাটির গভীরে পুতে দিতে হবে।
5. গাছের প্রয়োজন অনুসারে সেচ নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে
@ ফলন @
ভালভাবে যত্ন করলে এক বছরের বয়সী গাছ থেকে হেক্টর প্রতি -১২ টন ফলন পাওয়া যায়
বাউকুল- আপেল কুল বাগানের আয়-ব্যয় হিসাবঃ
জমির পরিমান: একর, বাউকুল- গাছের সংখ্যা ৪৪৫ টি, আপেল কুল গাছের সংখ্যা ৪৪৫ টি
জাতের নাম ১ম বছর নীট আয় ২য় বছর নীট আয় ৩য় বছর নীট আয় ৪র্থ বছর নীট আয় ৫ম বছর নীট আয়
বাউকুল- ৯৩,০০০/- ,৮১,০০০/- ,০৩,০০০/- ১০,১৭,৫০০/- ১৬,৮৫,৫০০/-
আপেল কুল ৫০,০০০/- ,০০,০০০/- ,৫০,০০০/- ,৫০,০০০/- ,৫০,০০০/-
প্রতি কেজি কুল ৫০/- বিক্রয় মূল্য ধরে আয় হিসাব করা হয়েছে।
@ ভাল ফল পেতে করনীয় @
) কুল গাছে ফুল আসার মাস আগে অর্থ্যাৎ আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে কোন সার পানি দেওয়া যাবে না। কারণ সময় গাছে খাবার দিলে গাছের অঙ্গঁজ বৃদ্ধি বেশী হবে ফলে ফুল ফল ধারণে ব্যাহত হবে।
) গাছে ৮০% ফুল আসা শেষ হলে গাছের চতুদির্কে ৫০-১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টি. এস. পি. এম.পি সার প্রয়োগ করে মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সার মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ফুল আসা থেকে ফলের বৃদ্ধি পর্যায় পর্যন্ত মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।
) কুলের ফুল আসার আগে একবার গুটি হওয়ার পর - দিন পর পর যেকোন কীটনাশক (ডেসিস, সিমবুশ, সুমিথিয়ন, ম্যালাথিয়ন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মি.লি. বা ক্যাপ), যে কোন ছত্রাক নাশক (থিওভিট, ব্যাভিষ্টিন, ডাইথেন-৪৫, রিদোমিল, টিল্ট প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৫০ গ্রাম), ওকোজিম, লিবরেল বোরন লিবরেল জিঙ্ক আলাদা আলাদা ভাবে - বার স্প্রে করতে হবে। এতে পোকামাকড় রোগবালাই মুক্ত এবং সুন্দর চামড়া যুক্ত স্বাস্থ্যবান ফল পাওয়া যাবে এবং ফল ঝরে পড়া ফেটে যাওয়ার পরিমানও অনেক কমে যাবে।
অনেক সময় কুলের উপর কালো আবরনসহ বোঁটার গোড়ায় সাদা প্যাজাতুলার মত আবরণ লক্ষ্য করা যায়। এতে কুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয় বাজার মূল্য কমে যায়। জন্য প্রতি লিটার পানিতে মি.লি হারে টাফগড় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়

No comments:

Post a Comment