উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

তরমুজ



@ পরিচিতি @
তরমুজ একটি সুস্বাদু অর্থকরী ফসল। গরমের সময় এটি অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক তৃষ্ণা নিবারক। আমাদের দেশে যে সব উন্নত মানের তরমুজ পাওয়া যায় তা বিদেশ থেকে আমদানীকৃত শংকর জাতের বীজ থেকে চাষ করা হয়।
@ জলবায়ু মাটি @
শুষ্ক, উষ্ণ প্রচুর আলোযুক্ত স্থানে তরমুজ ভালো হয়। অধিক আর্দ্রতা তরমুজের জন্য ক্ষতিকর। তরমুজের খরা উষ্ণ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি। উর্বর দোঁ-আশ বেলে দোঁ-আশ মাটিই তরমুজ চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।
@ জাত @
আধুনিক জাতের মধ্যে টপইল্ড, গ্লোরী, তাইওয়ান, ওয়ার্লড কুইন, সুগার বেবী, চ্যাম্পিয়ন.কঙ্গো ইত্যাদি প্রধান।
@ জমি তৈরি বপন-রোপন @
বংশ বিস্তারঃ
তরমুজের বংশ বিস্তার সাধারণত বীজ দ্বারাই করা হয়ে থাকে
জমি তৈরিঃ
প্রয়োজনমত চাষ মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পর মাদা প্রস্তুত করতে হয়। মাদাতে সার প্রয়োগ করে চারা লাগানো উচিত
বীজ বপন সময়/উৎপাদন মৌসুমঃ
বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী। বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম। আগাম ফসল পেতে হলে জানুয়ারি মাসে বীজ বুনে শীতের হাত থেকে কচি চারা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য পলি টানেল ব্যবহার করা যায়।
বীজের অংকুরোদগমনঃ
শীতকালে খুব ঠান্ডা থাকলে বীজ ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে গোবরের মাদার ভিতরে কিম্বা মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভিতরে রেখে দিলে - দিনের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হয়। বীজের অংকুর দেখা দিলেই বীজতলায় অথবা মাদায় স্থানান্তর করা ভালো।
বপন/রোপণ পদ্ধতিঃ
সাধারণত মাদায় সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও চারা তৈরি করে মাদাতে চারা রোপণ করাই উত্তম
বীজ বপনঃ
সাধারণত প্রতি মাদায় / টি বীজ বপন করা হয়। বপনের /১০ দিন আগে মাদা তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হয় দুমিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে দুমিটার অন্তর মাদা করতে হয়। প্রতি মাদা ৫০ সেমিঃ প্রশস্থ ৩০ সেমিঃ গভীর হওয়া বাঞ্ছনীয়। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় দুটি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে
চারা রোপণঃ
বীজ বপনের চেয়ে তরমুজ চাষের জন্য চারা রোপণ করা উত্তম। এতে বীজের অপচয় কম হয়। চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করা হয়। ৩০-৩৫ দিন বয়সের / পাতা বিশিষ্ট একটি চারা মাদায় রোপণ করা হয়
বীজের পরিমাণঃ
প্রতি হেক্টরে ৮৫০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়
@ সার প্রয়োগ @
তরমুজের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করা যেতে পারেঃ
সার মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) মাদা তৈরি কালে দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে মাদায় দেয়
১ম কিস্তি (চারা রোপণের ১০-১৫ দিন
পর ) ২য় কিস্তি (প্রথম ফুল ফোটার সময়) ৩য় কিসি- (ফল ধারণের সময় ) ৪র্থ কিস্তি (ফল ধারণের ১৫-২০ দিন পর )
গোবর/ কম্পোষ্ট ২০ টন সব – – – –
ইউরিয়া ২৮০কেজি১০০ কেজি ৬০ কেজি ৬০কেজি ৬০কেজি
টি এস পি ১০০ কেজি সব – – – –
এমওপি ৩২০ কেজি৮০কেজি ৮০কেজি ৮০কেজি ৮০কেজি
@ অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা @
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
শুকনো মৌসুমে সেচ দেয়া খুব প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিটি গাছে - টির বেশি ফল রাখতে নাই। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটিই রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ৩০টি পাতার জন্য মাত্র একটি ফল রাখা উচিত
পরাগায়ণঃ
সকালবেলা স্ত্রী পুরুষ ফুল ফোটার সাথে সাথে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়।
@ পোকা রোগবালাই দমন @
পোকামাকড়
পাতার বিটল পোকাঃ
প্রথম দিকে পোকাগুলোর সংখ্যা যখন কম থাকে তখন পোকা, ডিম বাচ্চা ধরে নষ্ট করে ফেলতে হবে। পোকার সংখ্যা বেশি হলে রিপকর্ড/সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি মিলি/লিটার মাত্রায় সপ্তাহান্তে স্প্রে করতে হবে
জাব পোকাঃ
পোকা গাছের কচি কান্ড, ডগা এবং পাতার রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে। পোকা দমনের জন্যে সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি মিলি/লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে
মাজরা পোকাঃ
স্ত্রী পোকা ফলের খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে এবং ফলগুলো সাধারণত পচে যায়। পোকা দমনের জন্যে রিপকর্ড/সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি মিলি/লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে
রোগবালাই
কান্ড পচা রোগঃ
রোগের আক্রমণে তরমুজ গাছের গোড়ার নিকটের কান্ড পচে গাছ মরে যায়। প্রতিকারের জন্য . গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে
এ্যানথ্রাকনোজঃ
রোগের আক্রমণে পাতা, পাতার বোঁটা, কান্ড এবং ফলে বাদামি থেকে কালচে দাগ দেখা যায়। প্রতিকারের জন্য . গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে
ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগঃ
রোগের আক্রমণে গাছ ঢলে পড়ে মারা যায়। নিস্কাশনের সুব্যবস্থা করা হলে রোগের প্রকোপ কম থাকে। রোগাক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
@ ফসল সংগ্রহ ফলন @
ফসল সংগ্রহ
জাত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে। তরমুজের ফল পাকার সঠিক সময় নির্ণয় করা একটু কঠিন। কারণ অধিকাংশ ফলে পাকার সময় কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখে তরমুজ পাকা কিনা তা অনেকটা অনুমান করা যায়।
) ফলের বোঁটার সঙ্গে যে আকর্শি থাকে তা শুকিয়ে বাদামি রং হয়।
) খোসার উপরে সূক্ষ্ণ লোমগুলো মরে পড়ে গিয়ে তরমুজের খোসা চকচকে হয়।
) তরমুজের যে অংশটি মাটির উপর লেগে থাকে তা সবুজ থেকে উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের হয়ে উঠে।
) তরমুজের শাঁস লাল টকটকে হয়।
) আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে যে ফল পরিপক্কতা লাভ করেছে। অপরিপক্ক ফলের বেলায় শব্দ হবে অনেকটা ধাতবীয়
ফলন
সযত্নে চাষ করলে ভালো জাতের তরমুজ থেকে প্রতি হেক্টরে ৫০-৬০ টন

No comments:

Post a Comment