উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

গোলাপ



@পরিচিতি@
গোলাপ একটি শীতকালীন মৌসুমী ফুল তবে বর্তমানে গোলাপ সারা বছর ধরেই চাষ করা হচ্ছে। বর্ণ, গন্ধ, কমনিয়তা সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। পুষ্প প্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই সারাবছর কমবেশি গোলাপের চাষ হয়।
গোলাপ সাধারণত কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নাই। আতর সুগন্ধি শিল্পেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
@জলবায়ু মাটি@
গোলাপ শীত নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের ফুল। অধিক উষ্ণ আর্দ্রতায় গোলাপ ভাল হয়না। ২২-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতা, ৮৫% আপেক্ষিক আদ্রতা এবং ১০০-১২৫ সেঃমিঃ গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী।
- পি এইচ যুক্ত সুনিস্কাশিত জৈব পদার্থসমৃদ্ধউর্বর দোআঁশ, পলি-দোআঁশ, কাদা-দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী। ফুলের গুনগতমান সূর্যালোকের উপস্থিতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে বিকাল অপেক্ষা সকালের রোদ বেশি কার্যকর।
@জাত@
গোলাপের জাত প্রধানত ৭টি। যথা- হাইব্রিড টি, হাইব্রিড পার্পেচুয়েল, পলিয়েন্থা, ফ্লোরিবান্ডা, মিনিয়েচার এবং প্লেমবার।
@রোপণ সময়@
বছরের যে কোন সময়ই গোলাপের চারা লাগানো যায়। তবে রোদ বৃষ্টি থেকে চারা গাছকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হয়। চারা তৈরি থাকলে আমাদের দেশে আশ্বিনের দ্বিতীয় তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে চারা লাগালে অগ্রহায়ণ-পৌষে ভাল ফুল পাওয়া যায়। তবে কাটিং বাডিং এর চারা অগ্রহায়নের দিকে তৈরি হতে শুরু করে বলে সেগুলো তখনই মাটিতে লাগাতে
@বংশবৃদ্ধি@
কয়েক প্রকার বীজ থেকে গোলাপের চারা তৈরি করা গেলেও চাষের জন্য প্রধানত কলমের চারাই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত গুটি কলম, শাখা কলম (কাটিং), চোখ কলম (বাডিং) ইত্যাদি উপায়ে গোলাপের চারা প্রস্তুত করা যায়
গুটিকলম
যে গাছের চারা তৈরি করা হবে সে গাছের একটি সুস্থ্য সবল ডালের - সেঃমিঃ পরিমাণ ছাল গোল করে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে তুলে দিতে হয়। এরপর দো-আঁশ মাটি পচা গোবর সার সমান অংশে মিশিয়ে সেই ছালতোলা জায়গায় মুঠো করে লাগিয়ে দিতে হয়। মাটিটি পরে পরিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। এতে মাটির জল শুকাতে পারে না, তা ছঅড়া শিকড় বের হলে বাইরে থেকে দেখতে সুবিধা হয়। যদি জল শুকিয়ে যায় তা হলে ইনজেকশানের সিরিঞ্জ দিয়ে জল ঢুকিয়ে দিতে হয়। - সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় বের হয়। তখন পলিথিনের বাঁধনের ঠিক নিচে প্রথম দফায় অর্ধেক এবং / দিন পর বাকি অর্ধেক আলগা করে কলমটি / দিন ছায়ায় রেখে পরে পলিথিনের বাঁধন খুলে মাটিতে লাগাতে হয়
শাখা কলম
শাখা কলম তৈরির জন্য শক্ত নিখুঁত শাখা নির্বাচন করতে হয়। প্রায় ২০-২২ সেঃমিঃ লম্বা করে কলমের ডাল এমনভাবে কাটতে হয় যেন উপরের মাথা সমান নীচের মাথা অর্থাৎ সে মাথা মাটিতে পোঁতা হবে তা তেছরা থাকে। ডালের নীচের কয়েকটি পাতা কাঁটা ভেঙ্গে ফেলে জৈব সার মেশানো ঝুরঝুরে মাটিতে পুঁতে দিয়ে নিয়মিত জলদিতে হয়। / সপ্তাহ সময়ের মধ্যে কলম তৈরি হয়। সেব বিদেশী গোলাপের কাষ্ঠল অংশ কম সেগুলোতে প্রায়ই কলম হতে চায় না
চোখ কলম
চোখ কলম দ্বারা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বহু সংখ্যক চারা উৎপন্ন করা যায়। পদ্ধতিতে জংলী গোলাপ গাছের শাখা বা কান্ডের সাথে ভাল জাতের গোলাপের কুঁড়ি বা চোক লাগিয়ে তৈরি করতে হয়।
পদ্ধতিতে দেশী জংলী গোলাপ গাছকে শিকড় গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেননা এদের ফুল ভাল মানের না হলেও দেশীয় আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আষাঢ়-শ্রাবন মাসে জংলী গোলাপের ডাল কেটে কাটিং লাগাতে হয়। আমাদের দেশে কুঁড়ি সংযোজন করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে অগ্রহায়ণের প্রথম থেকে মাঘের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
পদ্ধতিতে শিকড়-গাছের বর্ধনশীল কান্ডে বা গোড়ার দিকে খুব ছোট ধঅরালো ছুরি দিয়ে ইংরেজী অক্ষরের মত করে শিকড় গাছের কাটা স্থানে এমন করে বসাতে হয় যাতে কুঁড়িটি বাইরে থাকে।এভাবে কুঁড়িটি স্থাপন করে পলিথিনের চিকন ফিতা দিয়ে বেঁধে দিতে হয় এবং শিকড় গাছের অংশ কেটে ফেলতে হয়। এভাবে / দিন ছায়ায় রেখে পরে রোদে দিতে হবে। প্রথম কয়েক দিন এমন ভাবে জল দিতে হবে যাতে কুঁড়ির সংযোগ স্থল না ভিজে। শিকড় গাছের কোন মুকুলযাতে গজাতে বা বাড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি গজায় তাহলে সেগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হয। - সপ্তাহের মধ্যেই আসল কুঁড়ি থেকে চারা বেরিয়ে আসবে। এটি বেশ কিছু বড় হলে পলিথিনের বাঁধন সাবধানে খুলে দিতে হয় যাতে গোড়ার অংশ ঠিকমত বা
@টবে গোলাপের চাষ@
টবে গোলাপের চাষ
টবের ান
খোলা-মেলা আলো বাতাসপূর্ণ এমন ানে টব রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্য কিরণ পায় এবং অন-তঃ - ঘন্টা রোদ পায়। বিকেলের রোদ (বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে) না লাগানোই ভাল, কেননা এতে ফুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। গোলাপ গাছটিতে যাতে চারিদিক হতেই আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে গাছটি কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। এজন্য টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে নিতে হয়। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে টবের গোলাপ গাছকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে রোদ ছায়ায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টব রাখলে গাছ ভাল থাকবে। ফুলও বেশি দিন ধরে পাওয়া যাবে
মাটি তৈরি
এঁটেল মাটি গোলাপ চাষের জন্য ভাল নয়। টবের জন্য সার মাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাটি বেশ ফাঁপা থাকে এবং জল দাঁড়ায়না। ভাগ দো-আঁশ মাটি, ভাগ গোবর সার বা কম্পোষ্ট, ভাগ পাতা পচা সার, আধ ভাগ বালি (নদীর সাদা বালি হলে ভাল হয়) দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে এক মুঠো সরষের খৈল এক চামচ চুন মিশিয়ে ১টি ২০ সেঃমিঃ ( ইঞ্চি) টবে একমাস রেখে দিতে হবে। এই একমাস টবে জল দিয়ে মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হয়। এতে মাটির মিশ্রণ ভাল হবে। অনেকে মাটির মিশ্রণে ব্যবহৃত চা পাতা ব্যবহার করেও ভাল ফল পেয়েছেন।
টবে নিচের কয়েক সেঃমিঃ পরিমাণ অংশে ইট বা মাটির হাড়ি পাতিলের ভাংগা টুকরা এমন ভাবে বিছিয়ে দিতে হয় যাতে টবের মাটি এওগুলোর উপর থাকে। এতে বাড়তি জল নিকাশের সুবিধা হবে
টবের আকার
টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপের চাষ করা হবে তার জাতের উপর। ছোট জতের জন্য ২০ সেঃমিঃ ( ইঞ্চি) টব ভাল, হাইব্রিড-টি ফ্লোরিবান্ডার জন্য ৩০ সেঃমিঃ (১২ ই্ঞ্িচ) বা আরো বড় টব ব্যবহার করতে হয়। তবে প্রথম বছর যে আকারের টবে গাছ বসানো হবে পরের বছর বড়- আকারের টবে গাছ ানান- করলে বড় আকারের বেশী ফুল পাওয়া যায়
টবে চারা বসানোরা সময়
বছরের যে কোন সময়ই টবে গোলাপের চারা বসানো যায়। তবে মাঘ-ফাল্গুন ভাদ্র-আশ্বিন মাস চারা লাগানোর উত্তম সময়। এসময় চারা লাগালে বেশী দিন ধরে ফুল পাওয়া যায়, গাছের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয, রোগ পোকার আক্রমণও কম থাকে
চারাসংগ্রহ
চারা সংগ্রহের সময় সুস’-সুন্দর চারা সংগ্রহ করা উচিত। চারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটির গোল্লাটি অবিকল আছে কিনা তা ভাল করে দেখে নিতে হবে। মাটির গোল্লাসহ চারার গোড়ার শিকড় বেরিয়ে থাকা অবসার চার গাছ না নেয়াই ভাল। বিশ্বস- এবং পরিচিত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা উচিত চারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে
টবে চারা বসানো
চারাগাছ বা কলমচারা মাটির গোল্লাসহ পলিথিন ব্যাগে অথবা ছোট মাটির টবে কিনতে পাওয়া যায়। চারাটি যদি টবের হয়, তাহলে টব থেকে পুরো মাটিসহ চারাটি এমনভাবে নিতে হবে যাতে ভেংগে না যায় বা শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। ভেজা মাটির গোল্লাসহ চারা সংগ্রহ করলে তা একটু শুকিয়ে নিতে হয়। চারা বসাবার আগেই গাছের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো বা মরা ডাল পালা হালকা ভাবে ছেঁটে দিতে হবে। এরপর চারাটি টবের মাঝখানে সোজা করে বসিয়ে টবের ওপরে কিছু কম্পোষ্ট সার দিয়ে গাছের গোড়ারমাটি হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। চারা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কুঁড়ি বের হবার গিট/ পর্ব টি মাটির ওপরেই থাকে
সেচ
টবে বসানোর পর অন- / বার পানি সেচ দিতে হবে। চারা অবসায় গাছ যাতে প্রখর রোদ বা বৃষ্টির ঝাপ্টা থেকে রক্ষা পায় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্রথম অবসায় / ঘন্টা এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে বাড়াতে / ঘন্টা রোদ পাওয়ার ব্যবস করলে গোলাপ ভাল হবে। পানি সেচের সময়লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়িয়ে না যায়। কচি পাতা কুঁড়ি ছাড়ার সময় একটু বেশী পানি দরকার। সময় সকাল সন্ধ্যা সেচ দেয়া উচিত ঝাঁঝরি দিয়ে ডাল-পালাসহ সমস- গাছটিই পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে
সার প্রয়োগ
টব বসাবার পর গাছ ধরে গেলে একমাস পর থেকে ১৫ দিন বা এক মাস পর পর সার দিতে হয়। শীতের ঠিক পরেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরের /১০ সেঃমিঃ মাটির - তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার নতুন ফাঁপা মাটি দিয়ে ভরে দিতে হয়। এর পর খড় বা পাতা দিয়ে ঢেকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে গাছের শিকড়কে রক্ষা করতে হয়। শীতকালে গাছ ছাটার পর, প্রতি টবে মুঠা গুঁড়া গোবর সার মুঠা স্টিমড্হাড়ের গুঁড়া বা স্টেরামিল প্রয়োগ করিতে হইবে। এরপর পুরো শীতকাল ধরে মাস অন- অন- মুঠা করে স্টিমড্বোন মিল বা স্টেরামিল প্রয়োগ করতে হবে।
গোলাপের ভাল ফুল উৎপাদনের জন্য পাতার সার ফলিয়ার সেপ্রর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি রাসায়নিক সার মিশিয়ে এই সার প্রস করতে হয়। শীতকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সকাল ৮টার মধ্যে ফলিয়ার সেপ্র করতে হয়। দুই প্রকারের পাতা সার গাছে ব্যবহার করা হয়, ১টি গাছের স্বাস্য ফুল ভাল করার জন্য অপরটি ট্রেস এলিমেন্টের জোগান দেয়ার জন্য, যেমন- ইউরিয়া, ডাই-অ্যামোনিয়াম সালফেট ডাই-পটাশিয়াম ফসফেট প্রতিটি ১০ গ্রাম করে ১০ লিটার পানিতে গুলে সেপ্র দ্রবণ তৈরি করতে হবে। ট্রেস এলিমেন্টের জন্য ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ১৫ গ্রাম, ফেরাস সালফেট ১০ গ্রাম, বোরাক্স গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রতি লিটার পানিতে উল্লেখিত মিশ্রণটির গ্রাম করে গুলিয়ে সেপ্র করতে হবে। দুইটি পাতা সারের সাথেই কীটনাশক বা বালাইনাশক মিশিয়ে সেপ্র করা যায় কিনদুটি সার এক সাথে মিশিয়ে সেপ্র করা যাবে না। পাতার সার টবের গোলাপের জন্য অপরিহার্য এবং জমির গোলাপের জন্য উপকারী। সেপ্র করার সময় যেন পাতার দুদিকেই ভালভাবে লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। টবের গাছে সারা বছরই তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। সঠিক মাত্রা বা প্রয়োগ বিধি না জেনে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভাল। কেননা, মাত্রায় বা ব্যবহার-বিধিতে একটু ব্যতিক্রম হলে গাছের ক্ষতির আশংকা থাকে। রাসায়নিক তরল সারের পরিবর্তে গোবর সরষের খৈল / দিন পানিতে পচিয়ে তরল করে সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করা যায়। গাছের নতুন ডাল-পালা বাড়াতেও ফুলের আকার বড় করতে ধরনের তরলসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরল সারের অভাবে ছোট মাছপঁচা পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যায়। দুর্বল গাছে প্রতি লিটার পানিতে গ্রাম হিসারে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল পাতায় সেপ্র করলে গাছ তাজা হয়
চুন-পানি প্রয়োগ
প্রতি লিটার পািনতে চামচ গুড়ো চুন পরিস্কার পািনতে ভাল করে গুলে পাতলা ন্যাকড়ায় ছেঁকে প্রতি মাস পর পর দিতে হয়। চুন-পানি দেবার ১৫ দিনের মধ্যে অন্য কোন সার না দিয়ে শুধু পানি দিতে হয়
গাছ ছাঁটাই
মৃত রোগগ্রস- ডাল অপসারনের জন্য, গাছের উপযুক্ত আকৃতি প্রদানের জন্য, প্রতিটি ডালে ফুল আসবার জন্য এবং প্রয়োজনীয় রোদ্র পাবার জন্য নিয়মিত গাছ ছাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। গোলাপ প্রচুর শাখা বিস-ারকারী গুল্ম জাতীয় গাছ। গাছের ফুল দেয়া শেষ হলেই গাছ ছেঁটে দিতে হবে। নিয়মিতগাছ ছাঁটাই করলে বেশী বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়। বর্ষার পর আশ্বিন-কার্তিক মাস ছাঁটাইয়ের জন্য ভাল সময়। সাধারনত ২০-২৫ সেঃমিঃ (-১০ ইঞ্চি) বড় রেখে ডাল ছেঁটে দিতে হয়। ডাল এমনভাবে কাটতে হবে যাতে থেঁতলে বা ছিঁড়ে না যায়। জন্য ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হয়। সাদা, হলুদ, হালকা হলুদ দো-রঙা জাতের গোলাপ গাছ খুব হালকা ছাঁট আর লাল জাতের গোলাপ গাছে শক্ত ছাঁট দিতে হয়।
গাছ ছাঁটাইয়ের পর ডাইব্যাক রোগের আক্রমন হতে পােির। সুতরাং গাছ ছাঁটাইয়ের আগে পরে কীটনাশক ছত্রাক নাশক দুইই প্রয়োগ করা দরকার
রোগ-পোকা দমন
শুঁয়ো পোকা বা অনিষ্টকারী অন্য যে কোন পোকা দেখা মাত্র ধরে মেরে ফেলা উচিত। লাল মাকড়সার আক্রমণ ডাইব্যাক রোগই বেশ মারাত্মক।
সেচের সময় টবে জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করলে লোহার শিক দিয়ে টবের মাটি ছিদ্র করে জল বেরুবার পথ করে দিতে হবে। কাজটা একটু সাবধানে করা দরকার যাতে শিকড়ের কোন ক্ষতিনা হয়। জল দেবার আগেরদিন প্রতিবারই টবের ধারের কাছের মাটি বেশী করে এবং মাঝখানের মাটি কম করে খুঁচিয়ে দিতে হয়
গ্রীষ্মকালীন পরিচর্যা
টব ছাদে বা পাকা ানে রাখলে পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ইট বা কাঠের টুকরা রেখে সেগুলোর ওপর টব রাখা উচিত গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপের সময় জল না দিয়ে রাতের দিকে যখন তাপমাত্রা কমতে থাকে (রাত টার পর) ছাদের টবে তখন জল দেয়াই ভাল। এসময় জলের তাপমাত্রা আবহাওয়ার সঙ্গে মোটামুটি সামঞ্জস্য পূর্ণ থাকে
বর্ষাকালীন পরিচর্যা
টবের নিচের খড় কুটো, ইট এসব সরিয়ে টবগুলো কেবল ছাদ বা পাকা ানেই রাখতে হবে এবং ঝড় থেকে টব গাছকে রক্ষার প্রসতি নিতে হবে। টবের মাটি মাঝখানের দিকে উচিয়ে কোণাকৃতি করে দিলে জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারবে না। অতিরিক্ত মাটি বর্ষা শেষে সরিয়ে ফেলতে হয়
প্রদর্শনী ফুলের জন্য করণীয়
প্রদর্শনীর জন্য বর্ষাকালে উন্নত জাতের গোলাপ গাছ নির্বাচন করে টবে রোপন করতে হবে। নিয়মিত সেচ সার প্রয়োগের দ্বারা গাছটিকে এমন করে তুলতে হবে যেন গাছে প্রচুর সুন্দর পাতা জন্মায় এবং প্রস্ফুটিত ফুল বেশ বড় আকারের হয়। প্রদর্শনীর সময় থেকে অন-তঃ আড়াই মাস আগে গাছটিকে বিবেচনারসহিত ছাঁটাই করা উচিত। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করলে ফেব্রুয়ারী মাসে গাছে ফুল ফোটে। মাঝে মাঝে কচি ডালগুলো এমনভাবে ছেঁটে দিতে হবে যেন গাছটি বেশ ঝোপালো হয়। গাছের প্রতিটি শাখায় দুটো কুঁড়ি রেখে বাকি কুঁড়িগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। যাতে বড় ফুল ফোটে সেদিকে যত্ন রেখে পরিচর্যার কাজ করতে হয়। যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কুঁড়ি জন্মায়,তাহলে কুঁড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। ফুলের ঔজ্বল্য বড়াতে হলে লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম আয়রন সালফেট গুলে ফুলে প্রয়োগ করতে হয়। প্রদর্শনী আরম্ব হবার অন- সপ্তাহ পূর্বে ছায়াযুক্ত ানে টব রাখলে ভাল হয়। এতে দুপুরের প্রখর রোদ্রে ফুলের পাপড়ি নষ্ট হয় না।
@জমিতে গোলাপ চাষ@
জমিতে গোলাপ চাষ
জমি, গর্ত বেড তৈরী
প্রচুর রোদ খোলা বাতাসপূর্ণ উঁচু সমতল স্থানে গোলাপ চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। জমিকে গভীরভাবে কুপিয়ে বা লাংগল দিয়ে এর মাটি ওলট-পালট করে দিতে হয়। জমি থেকে আগাছা, ইটের টুকরা ইত্যাদি বেছে ফেলে বার বার চাষ দিয়ে মাটিকে বেশ ঝুরঝুরা, নরম সমতল করে নিতে হয়। উন্নতমানের বড় বাগান করতে হলে বর্ষার ঠিক আগে মে-জুন মাসে বেড তৈরি করতে হয় যাতে বেডের খৈল অন্যান্য উপাদান ভালভাবে পচে আশ্বিনে গাছ লাগানোর উপযোগী হয়। বেডের আশে পাশে যাতে জল না জমে সে জন্য জল নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ছোট বাগানের জন্য গাছ রোপণের অন্তত সপ্তাহ আগে বেড তৈরি করলেই চলে। আবহাওয়া শুকনো থাকলে বেড তৈরীর পর জল দিয়ে ভিজিয়ে দিলে খৈল জৈব সার পচে যাবে এবং বেড গাছ লাগানোর উপযোগী হবে।
বেড তৈরির পর চারা রোপণের জন্য বিভিন্ন জাতের জন্য বিভিন্ন দূরত্বে গর্ত করতে হয়, যেমন- ডোয়ার্ফ পলিয়েন্থা . মিটার, ফ্লোরিবান্ডা চায়না .৬৫ মিটার, হাইব্রিড টি মিটার, হাইব্রিড পারপেচুয়েল, মন দামাস্ক টি .৫০ মিটার, নয়সেট- মিটার লতা গোলাপ .৫০ মিটার।
বিভিন্ন জাতের গাছ সারিতে লাগাতে হয়, এতে সার প্রয়োগ, জল সেচ অন্যান্য পরিচর্যার কাজের সুবিধা হয়। রোপণের জন্য মিটার গভীর .৬৫ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট গোলাকার গর্ত করতে হয়। গর্ত করার সময় উপরের ২০-২২ সেঃমিঃ মাটি আলগা করে রেখে বাকী মাটির সাথে মাটির পরিমানের এক তৃতীয়াংশ সমান পচা গোবর, আধা কেজি গুঁড়ো খৈল, ১৮ কেজি টি.এস.পি ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে গর্তটি ভরাট করতে হবে। তারপর আলাদা করে রাখা মাটির সাথে কম্পোস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি জৈব সার মিশিয়ে গর্তে দিতে হবে এবং দেখতে হবে যাতে গর্তের স্থান পাশের জমি থেকে উঁচু হয়।
যদি বেড তৈরি দুএকদিনের মধ্যে গাছ লাগানো প্রয়োজন হয়, তাহলে কম্পোস্ট বা পচা গোবর সার বেশি করে দিয়ে গাছ লাগানো উচিত। গাছ লেগে যাবার পর খৈল রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। গোবর সার বেশি ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার না দিলেও চলবে। ক্ষেত্রে খৈল / দিন ভিজিয়ে জলের সাথে মিশিয়ে গোড়ার চারপাশে দিয়ে / দিন হালকা করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে
চারা রোপণ
সাধারণত গোলাপের চারা পলিথিনের ব্যাগে থাকে বলে চারা রোপণের সময় ব্যাগটি ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়। তারপর গর্তের মধ্যে গাছটি এমনভাবে ঢুকাতে হবে যাতে চারাটির গোড়া আগে যতটুকু মাটির নীচে ছিল, গর্তে লাগানোর পরও যেন ঠিক ততটুকুই মাটির নীচে থাকে। চারা গাছ গর্তের মধ্যে বসানোর পর কিছু পচা গোবর ভিটির বালি বা দো-আঁশ মাটি ভাল করে মিশিয়ে শিকড়ের চারিপাশে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভাল করে চেপে দিয়ে জল দিতে হয়। চারা লাগানোর পর প্রথম রোদ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। গাছ লেগে গেলে মাটি বুঝে জল দিতে হয়। বেলে মাটির বেলায় ঘন ঘন আর এঁটেল মাটি বা ভারি মাটির বেলায় / দিন পর পর জল দেয়া দরকার। তবে কোনক্রমেই যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গোলাপের শিকড়ে যদি শক্ত মাটি থাকে, তাহলে গাছ লাগানোর আগে জল দিয়ে ভিজিয়ে মাটি নরম করে নিতে হয় যাতে শিকড় ঠিকমত বাড়তে পারে।
যেসব চারার গোড়ায় মাটি থাকে না, সেসব চারা মাটিতে লাগানোর আগে / ঘন্টা জলে ভিজিয়ে তারপর লাগাতে হয়।
পুরানো গাছ জায়গা বদল করে লাগাতে হলে প্রথমত কচি ডগা, মরা ডাল ইত্যাদি ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে ভাল করে ছেঁটে নিতে হয়। তারপর শিকড়ের চারপাশে বেশ জায়গা নিয়ে খুঁড়ে গাছটিকে এমন ভাবে উঠাতে হবে যাতে খুব কম সংখ্যক শিকড় কাটে। গাছটিকে একই পদ্ধতিতে গর্তে লাগিয়ে প্রচুর জল দিতে হবে এবং অন্তত / দিন ছায়া দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে গরমের দিনে পুরানো গাছের জায়গা বদল না করাই ভাল
অন্তঃর্বর্তীকালীন সার প্রয়োগ
গাছের প্রয়োজন অনুসারে সময় সময় সার দিতে হয়। তবে আশ্বিনের মাঝামাঝি সময়ে গাছ ছাঁটাইয়ের সময়ে একবার শীতের শেষে ফাল্গুন মাসে আরেক বার সার দিতে হয়। ছাঁটাইয়ের সময় সার না দিয়ে ছাঁটাইয়ের ১০-১২ পরে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ছাঁটাইয়ের আগে প্রতি / কেজি শুকনো গোবর সার, ৫০ গ্রাম টি.এস.পি ৫০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। বেডের উপরের ১০ সেঃমিঃ পরিমাণ মাটি সরিয়ে নিচের মাটি কিছুটা আলগা করে সার গুলো মাটির সাথে সাবধানে মিশিয়ে দিতে হবে যেন শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। গোলাপের জন্য হাস-মুরগি বা কবুতরের বিষ্ঠা উত্তম সার।
সার জল দিয়ে গুলে ব্যবহার করলে ভেজা মাটিতে দিতে হয়। রাসায়নিক সার গাছ খুব তাড়াতাড়ি গ্রহন করে। শুকনো মাটিতে তরল সার দিলে অতিরিক্ত কড়া হবার দরুন গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই তরল সার দিতে হবে মাটি ভেজা অবস্থায়। তরল সার দেবার পর জল সেচ দিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় মাটিতে পর্যাপ্ত সার থাকা সত্ত্বেও ছাঁটাইয়ের পর গাছের পাতা সতেজ হচ্ছে না বা গাছ ঠিকমত বাড়ছে না। ক্ষেত্রে পাতার মাধ্যমে সার প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়
অঙ্গ ছাঁটাইকরণ
গোলাপ গাছের পুরানো ডাল বেশি দিন ফুল দিতে চায় না। প্রতি বছরই গাছের গোড়া থেকে বা পুরানো ডাল থেকে নতুন ডাল বের হয়। গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করে এসব নতুন ডালকে সুষ্টুমত বাড়তে দিতে হয়। ফুলের মৌসুমের (অগ্রাহায়ণ-পৌষ) আগেই অর্থাৎ আশ্বিন মাসেই অঙ্গ ছাটাই করার ভাল সময়। ফুলের আকার বড় করতে, নতুন শাখাকে ভাল করে বিস্তৃত করতে সাহায্য করার জন্য এবং ক্ষত রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দেবার জন্য অঙ্গ ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন।
ধারালো সিকেচার বা বিশেষ এক প্রকার ছুরি দিয়ে অঙ্গ ছাঁটাই করতে হয়। ডাল কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁৎলে না যায়। এতে গাছে ছত্রাক রোগের আক্রমন ঘটতে পারে।
সাধারনত তিন রকমের ছাঁটাই করা হয়, হালকা ছাঁটাই, মাঝারি ছাঁটাই কঠোর ছাঁটাই। লম্বা ডালের এক তৃতীয়াংশ কাটা বা মরা অসুস্থ ডাল কেটে ছেঁটে ফেলাকে হালকা ছাঁটাই, মাটির উপরে ৩০-৩৫ সেঃমিঃ রেখে ছাঁটাই করাকে মাঝারি ছাঁটাই মাটির উপরে ডালের উচ্চতা ১৪-২০ সেঃমিঃ রেখে ছাঁটাই করাকে শক্ত ছাটাই বলা হয়।
কোন ধরনের ছাঁটাই হবে তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতা, গাছ মাটির রকম ভেদের উপর। বালি প্রধান মাটিতে ক্রমাগত কঠোর ছাঁটাই করলে গাছ মারা যেতে পারে। তবে মাটি যদি ভাল হয় এবং প্রদর্শনীর জন্য বড় ফুল ফোটাতে হয় তাহলে কঠোর ছাঁটাই প্রযোজ্য। অন্য ক্ষেত্রে মাঝারি ছাঁটাই করতে হয়। মাঝারি ছাঁটাইয়ের ফুল খুব বড় হয় না বটে, তবে বেশী ফুল পাওয়া যায়। ছাঁটাইয়ের পর কাটা অংশেপ্রুনিং পেইন্টলাগাতে হবে, নতুবা কাটা অংশ দিয়ে পোকার আক্রমন তৎপরে ছত্রাকের আক্রমন ঘটতে পারে। দেশীয় গোলাপে কাটা স্থানে অবশ্য গোবর লাগানোই উত্তম।
প্রুনিং পেইন্ট তৈরির ফরমূলাঃ পাইরিফস বা পাইরিবান ভাগ, কপার কার্বনেট ভাগ, লাল লেড ভাগ এবং তিষির তেল ভাগ
পোকা-মাকড় দমনঃ
যেসব উল্লেখযোগ্য পোকা-মাকড় গোলাপ গাছকে আক্রমন করে তা নিন্মে আলোচিত হলো।
উইপোকাঃ কাটিং লাগাবার পর নতুন শিকড় বের হবার আগেই পুরান শিকড়গুলোকে নষ্ট করে দেয়।
দমন ব্যবস্থাঃ মাটিতে উই পোকা থাকার সম্ভাবনা থাকলে পাইরিফস বা উপযুক্ত কীটনাশক দিয়ে মাটি শোধন করে নিলে উই পোকার আক্রমন প্রতিহত করা যায়
লাল ক্ষুদে মাকড়সাঃ পোকা পাতার নিচের পিঠে থেকে পাতার রস চুষে খায় বলে গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পাতর উপরের পিঠে পিন ফোটানো দাগ এবং আক্রান্ত পাতা ডালে সুক্ষ্ম জাল দেখা গেলে এদের আক্রমন সনাক্ত করা যায়। আক্রমন বেশী হলে সবুজ রং হালকা হয়ে যায় এবং পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। অনেক সময় গাছ মারাও যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ সংখ্যায় কম থাকতেই লাল খুদে মাকড়সা দমন করতে হয়, নতুবা পরে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। কেলথেন-৪২, থিওভিট-৮০, ইথিওন-৪৬. ইসি প্রভৃতি কীটনাশকের যে কোন একটি জলের সংগে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশিয়ে পাতার উল্টো পিঠে স্প্রে করে এদের দমন করতে হয়। শুধুমাত্র ঠান্ডা জল জোরে সেপ্র করেও এদের দমন করা যায়
শ্যাফার বিটলঃ পোকা বড় লালচে রং এর। রাতের বেলা গাছের পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে দেয়, ফুলের পাপড়ি রেনু খায় এবং চারা গাছের বৃদ্ধিতে বিশেষ ক্ষতি করে। বর্ষাকালেই পোকার আক্রমন বেশী হয়। পোকা মাটিতে ডিম পাড়ে এবং ক্রীড়া গোলাপের শিকড় খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থাঃ পাইরিফস, পাইরিবান বা উপযুক্ত কীটনাশক দিয়ে কীটনাশক দিয়ে মাটি শোধন করলে কীড়া মারা যায়। রাতের বেলা হাতে বেছে পোকা ধরে মেরেও পোকা দমন করা যায়
শুঁয়ো পোকাঃ এরা গাছের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থাঃ পোকা অল্প বড় আকারের হলে ধরে মেরে ফেলা সহজ। কিন্তু আকারে ছোট সংখ্যায় বেশি হলে রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে . মিলি বা যেকোন স্পর্শ বিষ স্প্রে করতে হয়। একবারে দমন না হলে / দিন পর আবার স্প্রে করার সময় আশে পাশের গাছ ঘাসে স্প্রে করতে হয়
ডিগার বোলতাঃ ছাঁটাইয়ের পর অনেক সময় এরা ডালের কাটা অংশ দিয়ে সুড়ং খুঁড়ে ভিতরে গিয়ে বাসা বাঁধে। এই ক্ষত দিয়ে গাছ ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পরে ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
দমন ব্যবস্থাঃ ডাল ছাঁটাইয়ের পর কাঁটা অংশে প্রুনিং পেইন্ট লাগিয়ে পোকা প্রতিরোধ করা যায়
স্কেলপোকাঃ গাছের পুরানো ডালের ছালের উপর অনেক সময় বাদামী রং এর স্কেল পোকার আক্রমন হয়। এদের উপর শক্ত স্কেল বা আঁশ থাকে। পোকার ক্রীড়া নতুন স্থায়ীভাবে বসে রস চুষে খেয়ে গাছকে নিস্তেজ করে দেয়।
দমন ব্যবস্থাঃ চৈত্রের দিকে যখন ক্রীড়া দেখা দেয় তখন এবং ছাঁটাইয়ের পর কীটনাশক স্প্রে করলে পোকা দমন হয়। গাছের সংখ্যা কম হলে মেথিলেটেড স্পিরিটে ব্রাশ ডুবিয়ে আক্রান্ত ডাল ঘষে দিলে পোকা উঠে যায়। আক্রন্ত ডাল ছাঁটাই করে পুড়িয়ে দিলেও পোকার বিস্তার কমে
থ্রিপসঃ ফাল্গুনের মাঝামাঝি হতে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত গরম শুষ্ক আবহাওয়ায় থ্রিপসের আক্রমন হয়। এরা ঝাঁক ধরে এসে আক্রমন করে এবং অল্প সময়েই ফুলের কুঁড়ি অপরিণত ডগার রস চুষে খেয়ে গাছের বিশেষ ক্ষতি করে। ফলে ফুর কুঁচকানো অবস্থায় ফোটে বা ফুটতেই পারে না। কচি ডগার পাতা কুঁকড়ে যায়। আক্রান্ত ডগা ফুর পরীক্ষা করলে পরিণত অপরিণত থ্রিপস দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ আক্রান্ত ডগা এবং ফুল কেটে পুড়িয়ে ফেলে এবং মিপসিন ৭৫ ডাব্লিউপি নামক কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে . গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার করে / বার পরে দু সপ্তাহ পর একবার করে নিয়মিত স্প্রে করতে হয়
জাব পোকাঃ জাব পোকা মাঘ-ফাল্গুন মাসে পাতা, কচি ডগা ফুলের রস চুষে খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থাঃ কীটনাশক স্প্রে করে পোকা দমন করতে হয়
পাতা ফড়িং- পোকা পাতার নীচের দিকে বসে পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতার উপরে হলদে বা সাদাটে রং এর দাগ দেখা যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ উপযুক্ত কীটনাশক স্প্রে করে পোকা দমন করতে হয়
রোগঃ
গোলাপ গাছে ছত্রাকজনিত খাদ্যের অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিকার নিন্মরূপঃ
ডাইব্যাকঃ রোগাক্রান্ত গাছের ডাল বা কান্ড মাথা থেকে কালো হয়ে মরতে শুরু করে। লক্ষণ ক্রমেই কান্ডের মধ্য দিয়ে শিকড় পর্যন্ত পৌঁছে এবং সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ ডাইব্যাক শুরু হলে রোগাক্রান্ত বেশ নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলে দিয়ে কাটা মাথায় প্রুনিং পেইন্ট লাগিয়ে দিতে হয়, আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে দিতে হয় এবং যে সিকেটিয়ার বা ছুরি দিয়ে আক্রান্ত গাছ কাটা হয় তা স্পিরিট দিয়ে মুচে দিয়ে অন্য গাছ কাটতে হয়
পাউডারী মিলডিউঃ শীতের শেষের দিকে পাতায় সাদা সাদা পাওডারের মত দেখা যায়। এগুলো ছত্রাকের অনুজীব। রোগ বেশী হলে আক্রান্ত গাছের কচি পাতা ডগা এসব অনুজীব দ্বারা একেবারে ঢেকে যায়। কুঁড়ি ফোটে না, নষ্ট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ রোগাক্রান্ত ডগা পাতা তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে এবং হেকোনাজল ইসি বা ডাইথেন এম-৪৫ অথবা ইন্দোফিল এম-৪৫ দিয়ে স্প্রে করতে হবে
ব্ল্যাকস্পটঃ সাধারণত গাছের পুরানো পাতায় প্রথমে রোগের আর্বিভাব হয়। রোগ হলে পাতার উপরের দিকে অসম কালো দাগ দেখা যায়, কিনার ঝালরের মত এবং চারদিক থাকে হালকা হলুদ বলয়। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে যায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। বর্ষার শেষে গরম স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় রোগ বেশী হয়।
দমন ব্যবস্থাঃ দাগযুক্ত পাতাগুলো তুলে পুড়ে ফেলতে হয়। সপ্তাহে বার করে / বার এবং দুসপ্তাহে পর পর ডাইথেন এম-৪৫ অথবা একরোবেট এম জেড স্প্রে করতে হয়
পুষ্টির অভাবজনিত রোগঃ
খাদ্যে অভাবেও গোলাপ গাছে নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন নাইট্রোজেনের অভাবে কচি পাতা ফ্যাকাশে সবুজ হয়ে যায়, পটাশিয়ামের অভাবে পাতার কিনারা বাদামী মচমচে হয়ে আসে কচি পাতা অস্বাভাবিক লাল হয়, ক্যলসিয়ামের অভাবে পাতার কিনারে বাদামী রং- এর দাগ দেখা দেয়, ম্যাঙ্গানিজ এর অভাবে শিরা ছাড়া পাতার অন্য অংশ হলদে হয়ে আসে মধ্য শিরার মাঝে মৃত অঞ্চল থাকে, বোরন-এর অভাবে মুকুল অবস্থায় কচি পাতা মরে যায় সে ান থেকে অনেক শাখা বের হয়ে আসে এবং আয়রন-এর অভাবে পাতায় বিশেষ করে কচি পাতার হলুদ রং এর দাগ হয়।
প্রচুর জৈব সার ব্যবহার করে এবং সংশ্লিষ্ট খাদ্যোপাদান সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হয়

No comments:

Post a Comment