উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

পটল



@ পরিচিতি @
ইংরেজী নামঃ Pointed gourd
বৈজ্ঞানিক নামঃ Trichosanthes dioica
পরিবারঃ Cucurbitaceae
পটল বর্ষজীবি লতা জাতীয় ভিন্নবাসী উদ্ভিদ। অর্থাৎ এখানে পুরুষ মহিলা ফুল আলাদা আলাদা গাছে অবস্থান করে। এটি খরিফ মৌসুমের অন্যতম প্রধান অর্থকরী উপাদেয় সবজী। প্রায় সারা বছরই এটা বাজারে পাওয়া গেলেও খরিফ মৌসুমেই এর ফলন বেশি। বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর, রাজশাহী কুষ্টিয়া জেলা পটলের প্রধান উৎপাদন স্থান। তাছাড়া ফরিদপুর, বগুড়া, পাবনা, যশোর, খুলনা অঞ্চলেও পটলের চাষ হয়
@ জলবায়ু মাটি @
পটল উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল। পটলের জন্য উচ্চতর তাপমাত্রা এবং অধিক সূর্যালোক দরকার। আধিক বৃষ্টিপাত ফুলের পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায়। সবরকম মাটিতেই পটলের চাষ হতে পারে তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, বন্যামুক্ত, পানি নিস্কাশনযুক্ত উর্বর দোঁ-আশ বেলে দো-আঁশ মাটিই পটল চাষের পক্ষে বেশি উপযোগী
@ জাত @
এদেশে জানা অজানা অনেক জাতের পটল আবাদ হয়। এগুলো বিভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত। অতি সমপ্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারি পটল- বারি পটল- নামে ২টি উচ্চ ফলনশীল পটরের জাত অবমুক্তায়িত করেছে
বারি পটল-
ফলের আকার মাঝারি, সিলিন্ডারাকৃতি দুপ্রান্ত ভোতা। ফলের রং গাঢ় সবুজ, গায়ে -১০টি হালকা হলুদ রংয়ের ডোরা থাকে। ফল -১০ সেমি j¤^v এবং বেড় -. সেমি। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৫০ গ্রাম। শাখা কলম লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যেই ফর সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছে প্রায় ৩৮০টি ফল ধরে যার গড় ওজন প্রায় ১৪ কেজি। হেক্টর প্রতি ফলণ ৩৮ মেঃ টন। উচ্চ ফলণশীল জাতটি রোগ শহনশীল তাড়াতাড়ি ফল দেয়।
বারি পটল-
ফলের আকার মাঝারি, সিলিন্ডারাকৃতি দুপ্রান্ত সুচালো। ফলের রং হালকা সবুজ,গায়ে ১০-১১টি সাদা রংয়ের ডোরা থাকে। ফল ১১-১২ সেমি j¤^v এবং বেড় .-. সেমি। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৫৫ গ্রাম। শাখা কলম লাগানোর ৯৫ দিনের মধ্যেই ফর সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছে প্রায় ২৪০টি ফল ধরে যার গড় ওজন প্রায় ১০ কেজি। হেক্টও প্রতি ফলণ ৩০ মে টন। জাতটি থেকে অনেক দিন ফল সংগ্রহ করা যায়
ছাড়া স্থানীয় জাতের মধ্যে ধুসরবর্ণের, পুরুত্বক বিশিষ্টমুর্শিদাবাদীএবং ডোরা দাগ AwaK¯^v`hy³ ’বালীউল্লেখযোগ্য।
@ বংশ বিস্তার @
লতার কাটিং, গাছের মূল এবং বীজ দ্বারা পটলের চাষ হতে পারে। তবে অধিকাংশ স্থানেই লতার কাটিং থেকে পটলের চাষ করা হয়। কান্ডসহ কন্দালমূল দিয়েও পটলের বংশ বিস্তার করা যায়। বীজ তলায় কিংবা সরাসরি জমিতে শাখা কলম, কন্দমুল বা বীজ লাগিয়ে চারা উৎপাদন করা যায়।
রিং পদ্ধতিতে শাখা কলম উৎপাদন
এক বছর বয়সী সবল গাছের শাখার মাঝামাঝি অংশ হতে মিটার শাখা নিয়ে রিং বা চুড়ির আকার করে পিট বা মাদায় লাগাতে হবে। শাখাটি ৫০পিপিএম ইনডোল বিউটারিক এসিড (IBA) দ্রবনে মিনিট ডুবিয়ে লাগালে কলমে বেীশ শিকড় পাওয়া যায়।
@ জমি তৈরি @
পটলের জমি ভালোভাবে তৈরি করা দরকার। /৫টি গভির আড়াআড়ি ভাবে চাষ মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা কেও জমি তৈরী করতে হয়।
@ বপন/রোপণ সময় বীজ হার @
বপন/রোপণ সময় বীজ হার
যে সমস্ত জমিতে রস থাকে অথবা সেচের সুবিধা আছে, সে সব স্থানে মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে বা মধ্য wW‡m¤^i থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী মাসে পটলের লতার কাটিং লাগানো আরাম্ভ হয়। সাধারনত অক্টোবার মাসে লাগানো গাছ হতে ফেব্রুয়ারীমার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং ফেব্রুয়ারীমাচ মাসে লাগানো গাছে মে-জুন মাসে ফল পাওয়া যায়। পটল আলোক সংবেদনশীল না হওয়ায় বছরে কয়েক দফায় শাখা-কলম লাগানো যায় এবং সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়।
বপন/রোপণ পদ্ধতি
বেড পদ্ধতিতে পটল চাষ করলে ফলন ভাল হয় এবং বর্ষাকালে ফসল নষ্ট হয় না। .২৫ মিটার চওড়া বেডের মাঝে মিটার পর পর মাদা তৈরী করতে হয়। দুই বেডের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৭৫ সেমি নালা থাকতে হবে। সুষ্ঠু পরাগায়ণের জন্য অবশ্যই জমিতে ১০ ভাগ পুরুষ গাছ সমান ভাবে ছড়ানো থাকা প্রয়োজন, অর্থাৎ প্রতি ১০টি স্ত্রী মাদার জন্য ১টি পুরুষ মাদা থাকতে হবে।
@ সার প্রয়োগ @
পটলের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে-
সারের নাম প্রতি মাদায়
চারা রোপনের সময় রোপনের ২০ দিন পর (১ম কিস্তি) রোপনের ৬০ দিন পর (১ম কিস্তি) রোপনের ৯০ দিন পর (১ম কিস্তি)
গোবর বা আবর্জনা সার - কেজি – – –
ইউরিয়া২০-২৫ গ্রাম ২০-২৫ গ্রাম ২০-২৫ গ্রাম
টিএসপি ৫০-৬০ গ্রাম – – –
এমপি২০-২৫ গ্রাম ২০-২৫ গ্রাম ২০-২৫ গ্রাম
পটল দীর্ঘ মেয়াদী সবজি ফসল। তাই জুন মাস থেকে ফসল সংগ্রহের পর প্রতি মাসে হেক্টরপ্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৪ কেজি এমপি সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে রেশী ফলন পাওয়া যায়।
@ অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা @
আগাম ফসলে সেচ প্রয়োজন। ফসলের চাহিদা অনুসারে সেচ দিতে হবে। পটলের গাছে বাউনী দিলে গাছের ফলন বেশি হয়। বাউনীর বদলে মাটির উপরে খড় অথবা কচুরীপানা বিছিয়ে দেয়া যায়। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার মাটি আলগা করে দেয়া দরকার
মাচা তৈরী
এক মিটার উচু বাঁশের মাচায় পটলের ভাল ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বার ফসল সংগ্রহের পর মরা পাতা শাখা ছাটাই করলে নুতন শাখার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং ফলন বেশি হয়। অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ সময়মত সেচ নিশ্চিত করতে হবে। জমিতে স্ত্রী গাছের তুলনায় পুরুষ গাছ কম থাকলে কৃত্তিম পরাগায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃত্তিম পরাগায়ণের উপযুক্ত সময় হল সকাল - ঘটিকা
@ পোকামাকড় রোগ বালাই @
জাব পোকা
গাছের পাতার সবুজ অংশ এবং কচি কান্ডের রস চুষে খেয়ে গাছকে দূর্বল করে, ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা রগর ৪০ ইসি ১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে।
এপিলাকনা বিটল
পূর্ণ বয়স্ক পোকা কীড়া পাতার সবুজ অংশ খেয়ে শুধু পাতার শিরা বাদ রেখে দেয়। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে কীড়া ডিম সমেত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা যেতে পারে। আক্রমণ অধিক হলে ম্যালাথিয়ন ১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করা যেতে পারে।
পাউডারী মিলডিউ
পাউডারী মিলডিউ রোগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে দেয়। গ্রাম থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউপি অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি . মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সাত দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।
কান্ড পচা রোগ
রোগের আক্রমণে গাছের গোড়া পচে যায়। প্রতিকারের জন্য . গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর গাছে সেপ্র করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
ফসল সংগ্রহ
ফুলের পরাগায়নের ১৫ দিনের মধ্যেই পটল সংগ্রহের উপযোগী হয়। কাচা ফল এমন পর্যায়ে সংগ্রহ করতে হবে যখন এর রং সবুজ থাকে
ফলন
হেক্টর প্রতি ফলন ২০-৩০ টন
ঔষধী ব্যবহারঃ
• A¤^j রোগ উপসমে সিদ্ধ কান্ড পাতার রস বিশেষ উপযোগী। চার/পাঁচ গ্রাম কাঁচা পাতা ডাটা আধা কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ছেঁকে পানি সকালে খালি পেটে খেতে হয়
পটল গাছের মূল / মোথা শুকিয়ে খেলে উদরী রোগের উপকার হয়
পটল পোড়া রস মধু সহকারে মুখে খানিকক্ষণ রেখে কুলকুচা করলে মুখের দুগন্ধ দূর হয়
পটলের পোড়া শাঁস ন্যাকড়া/ তুলায় নিয়ে পোড়ার উপর চেপে বসিয়ে রাখলে অচিরেই পোঁড়া ফেট যায়
বসন্তের দাগ নিরসনে পোড়া পটলের ভাল কাজ করে
তথ্য সূত্র
১। বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় গাছ-গাছড়া. . তপন কুমার দে, জানুয়ারী২০০৬
২। উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি, বারি, ২০০৫-০৬
৩। সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ম্যানুয়াল, ডিএই, ঢাকা
৪। সবজি ফসলের mgwš^Z বালাই ব্যবস্থাপনা, মাঠ প্রযুক্তি নির্দেশিকা, ডিএই-ডানিডা এসপিপিএস প্রকল্প, ২০০৫

No comments:

Post a Comment