উদ্যান জাতীয় ফসল

Tuesday, January 26, 2016

এ্যানথুরিয়াম



@পরিচিতি@
নামঃ এ্যানথুরিয়াম
ইংরেজী নামঃ Anthurium
বৈজ্ঞানিক নামঃ Anthurium spp.
জাতঃ Araceae
এ্যানথুরিয়াম এ্যারেসী পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী কান্ডহীন হারবেসিয়াস জাতীয় বাহারী পাতা ফুলের গাছ। গাছের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল স্প্যাথ। স্প্যাথ আসলে পাতার পরিবর্তিত রূপ। গাঢ় লাল রঙের রঙের স্প্যাথ হলুদাভ রঙের স্প্যাডিক্স জাতটির বৈশিষ্ট। পাতা গাঢ় সবুজ, হৃদয়াকৃতির ভেলভেঢী পাতায় শিরাগুলি সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। ছোট সাকার/চারা লাগালে ফুল আসতে -১০ মাস সময় নেয়। ফুলের সজীবতা ২০ দিন পর্যন্ত থাকে। বছরে একটি ঝাড় থেকে -৬টি ফুল পাওয়া যায় এবং হেক্টর প্রতি পুষ্প দন্ডের সংখ্যা লাখের মত
@আবহাওয়া জাত@
আবহাওয়া
এ্যানথুরিয়াম উষ্ণ আদ্র আবহাওয়া উপযোগী। সাধারণত সব জাতের এ্যানথুরিয়াম ছায়াযুক্ত স্থানে ভাল জন্মায়। অর্থাৎ উজ্জ্বল সূর্যালোক থেকে আচ্ছাদনের মাধ্যমে ৪০-৫০% কর্তন করে ছায়া প্রদান করলে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয় তথা ভাল মানের ফুল পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, প্রখর সূর্যালোকে পাতা হলুদাভ হয়ে যায়। সাধারণত যে সমস্ত এলাকায় রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং দিবাভাগের তাপমাত্রা ২৭-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বিরাজমান থাকে সে সমস্ত এলাকা এ্যানথুরিয়াম চাষের জন্য উত্তম। নিন্ম তাপমাত্রা ফুল উৎপাদন নিরুৎসাহিত করে
@জাত@
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্র্তৃক বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেবারি এ্যান্থুরিয়াম-জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে
@বৃদ্ধির মাধ্যম@
সাকার লাগানোর জন্য নারিকেলের ছোবড়া, নারিকেল ছোবড়ার গুড়া, কাঠের গুড়া, ধানের তুষ স্তরে স্তরে বিছিয়ে এ্যানথুরিয়াম চাষের উপযোগী মাধ্যম তৈরি করা হয়। পটে জন্মানোর জন্য এককভাবে নারিকেলের ছোবড়া বা ছোবড়ার গুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
@বংশ বিস্তার@
সাধারণত মাতৃ গাছ থেকে সাকার পৃথক করে এ্যানথুরিয়ামের বংশবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে প্রক্রিয়াটি খুবই শ্লথ গতির। তাই দ্রুত গতিতে বংশ বৃদ্ধির জন্য টিস্যুকালচার প্রক্রিয়া ব্যবহার করা উত্তম। যে সমস্ত এ্যানথুরিয়াম জাত সাধারণত সাকার উৎপাদনে দূর্বল তাদের ক্ষেত্রে টপ কাটিং করলে সাকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদিত স্বাস্থ্যবান এবং প্রচুর শিকড় সমৃ্দ্ধ গাছের গোড়া থেকে সামান্য উপরে কেটে দিলেই / মাসের মধ্যে পাশ থেকে /৩টি করে সাকার বের হবে।
@চারা লাগানোর পদ্ধতি@
চারা লাগানোর সময়
সারা বছর সাকার বা টিস্যু কালচারের চারা লাগানো যায় তবে জুলাই-আগষ্ট মাস সর্বোত্তম
@চারা রোপণ দুরত্ব@
৮০ সেমি. প্রশস্ত বেডে ৪০ x ৩০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করলে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০,০০০ চারা রোপণ করা যায়।
@সার প্রয়োগ@
সারের নাম প্রয়োগ মাত্রা (হেক্টরপ্রতি)
পচা গোবর/কম্পোস্ট ৫০০০ কেজি
কোকোডাস্ট ২০০০ কেজি
ইউরিয়া ৩৫০ কেজি
টিএসপি ২৫০ কেজি
এমপি ৩০০ কেজি
জিপসাম ১৪৫ কেজি
বোরিক এসিড ১২ কেজি
জিঙ্ক অক্সাইড কেজি
বেসাল সার সাকার রোপণের -১০ দিন পূর্বে এবং গোবর/কম্পোস্ট অন্তত ১০-১৫ দিন পূর্বে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। রোপণের প্রায় ২৫ দিন পরে ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার রোপণের ৪৫ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর করে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ প্রদান করতে হবে
@পরিচর্যা@
চারা রোপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে থাকে। প্রথম অবস্থায় ছোট ফুল কেটে দিতে হবে তাহলে পরবর্তী কালে ফুল বড় হবে। মাঝে মাঝে গাছের নিচের পাতা কেটে ফেলতে হবে। তাহলে ফুলের সংখ্যা বেশি হবে। বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদে সাকার রোপনের পরে বেডের -.৫০ মিটার উপর দিয়ে ৪০৫০ শতাংশ সূর্যালোক কর্তন করে এমন সেড নেট অবশ্যই স্থাপন করতে হবে।
@রোগবালাই পোকামাকড়@
যে সমস্ত রোগ চিহ্নিত হয়েছে, তার মধ্যে এ্যানথ্রাকনোজ লিফ স্পট উল্লেখযোগ্য। উষ্ণ আদ্র আবহাওয়ায় এই রোগ গুলির প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। আক্রান্ত গাছের স্প্যাডিক্সে ছোট ছোট দাগ পরিলক্ষিত হয় এবং পরে উহা লম্বাকৃতি ধারণ করে এবং পচনের সৃষ্টি হয়। ছত্রাকনাশক ব্যাভিস্টিন বা নোইন গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে - দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। অনেক সময় মাইট এবং মিলিবাগের আক্রমন দেখা যায়। মাইট দমনের জন্য সালফোটক্স গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে এবং মিলিবাগের জন্য ম্যালাথিয়ন মিলি প্রতি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে - দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
@ফুল সংগ্রহ@
স্প্যাথের উপর দন্ডায়মান স্প্যাডিক্সের গোড়া থেকে সত্যিকার ফুল ধারণ শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে উপরে যেতে থাকে। পরিপক্কতা লাভের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চলে। ধারফুল পরিপক্ক হলে উপরিভাগ সাদা রং করে। সুতরাং স্প্যাডিক্সের প্রায় অর্ধেক অংশ সাদা রং ধারণ করলেই এ্যাণথুরিয়াম ফুলের পরিপক্কতা এসেছে বলে মনে করা হয় এবং ফুল সংগ্রহ করার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। ধারালো চাকুর সাহায্যে এ্যানথুরিয়াম ফুলে কেটে আকার আকৃতি অনুযায়ী এবং জাতভেদে বাছাই করে নিতে হবে
@ফুলের আয়ুষ্কাল@
কক্ষ তাপমাত্রায় বেশি দিন সতেজ-সজীব থাকার ব্যাপারে এ্যানথুরিয়াম ফুল বিখ্যাত। ফুলের স্প্যাথের পুরুত্ব এবং পুষ্পদন্ডের দৃঢ়তা এ্যানথুরিয়াম ফুল বেশিদিন টিকে থাকার প্রধান কারণ

No comments:

Post a Comment